পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রানীর সম্মতিক্রমে মূসাকে প্রস্তাবিত ধাত্রীগৃহে প্রেরণ করা হল। মূসা খুশী মনে মায়ের দুধ গ্রহণ করলেন। অতঃপর মায়ের কাছে রাজকীয় ভাতা ও উপঢৌকনাদী প্রেরিত হতে থাকলো। -সূরা কাসাস : ১২
এভাবে আল্লাহর অপার অনুগ্রহে মূসা তার মায়ের কাছে ফিরে এলেন। অন্যদিকে তার বাবা-মা পুত্র হত্যার আতঙ্ক থেকে রেহাই পেলেন। সর্বোপরি বহুমূল্যের রাজকীয় ভাতা পেয়ে সংসার যাত্রা নির্বাহের দুশ্চিন্তা থেকে শুধু মুক্তিই হলেন না, সম্রাট নিয়োজিত ধাত্রী হিসেবে সম্রাট পরিবারের সাথে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়াতে তাঁদের সমাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেল। এভাবেই ফিরআউনের কৌশলের উপর আল্লাহর কৌশল বিজয়ী হল। আল্লাহ বলেন : ‘তারা চক্রান্ত করেছিল আর আমরাও কৌশল করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কৌশল বুঝতে পারেনি।’ সূরা নামাল : ৫০।
অবশেষে মূসা নবুয়াতপ্রাপ্ত হলেন এবং ফিরআউনকে আল্লাহর দিকে আহবান করার নির্দেশ পেলেন। কেননা ফিরআউন নিজেকে প্রভু বলে ঘোষণা করেছিল। আল্লাহ বলেন : ‘তোমার নিকট মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? যখন তার প্রভু পবিত্র তুওয়া উপত্যকায় তাকে সম্বোধন করে বলেছিলেন তুমি ফিরআউনের কাছে যাও সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। (গিয়ে) তুমি তাকে বল: তোমার কি ভাল হওয়ার ইচ্ছা আছে? আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথপ্রদর্শন করি যাতে তুমি তাঁকে ভয় কর। অতঃপর সে তাকে মহানির্দশন দেখালো, কিন্তু সে অবিশ্বাস করল ও অবাধ্য হলো। অতঃপর সে পশ্চাত ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হল। তারপর জনসমাবেশ করে ঘোষণা করল, বললো আমিই তোমাদের সবচেয়ে বড় প্রভু।’ সরা নাজি‘আত : ১৫-২৮।
আল্লাহর নির্দেশমতো মূসা ফিরআউন ও তার সভাসদবর্গের নিকটে পৌঁছে গেলেন, অতঃপর মূসা ফিরআউনকে বললেন :
‘হে ফিরআউন! আমি বিশ্বপ্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাস‚ল। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সত্য এসেছে তার ব্যতিক্রম কিছু না বলার ব্যাপারে আমি দৃঢ়চিত্ত। আমি তোমাদের নিকটে তোমাদের পালনকর্তার নির্দেশ নিয়ে আগমন করেছি। অতএব তুমি বনু ইসরাঈলগণকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও। সূরা আ‘রাফ : ১০৪, ১০৫।
মূসা ফিরআউনকে আরো বললেন : ‘তুমি বনু ইসরাঈলদের উপর নিপীড়ন করো না। আমরা তোমার রবের নিকট থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। আর যে সৎ পথে চলবে তার উপরই শান্তি আসবে। আমাদেরকে ওয়াহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, শাস্তি তার উপর আসবে যে অবিশ্বাস করে, আর (সত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়। সূরা ত্বহা : ৪৭, ৪৮
একথা শুনে ফিরআউন তাচ্ছিল্যের সাথে বললো: মূসা তোমার রব কে? মূসা বললেন : আমার পালনকর্তা তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন। অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন। ফিরআউন বললো: তাহলে অতীতকালের লোকদের অবস্থা কী? মূসা বললেন, তাদের খবর আমার রবের কাছে লিখিত আছে। আমার পালনকর্তা ভ্রান্ত হন না এবং ভুলেও যান না। এরপর মূসা আরো বলেন : আমার পালনকর্তা তিনি, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা স্বরূপ বানিয়েছেন এবং তাতে চলার পথসমূহ তৈরি করেছেন। তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তদ্বারা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেন। তোমরা তা থেকে আহার কর ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুসমূহ চরিয়ে থাক। নিশ্চয় এতে বিবেকবানদের জন্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে। সূরা ত্বহা : ৪৯-৫৪।
ফিরআউনের অহঙ্কারী হৃদয়ে মূসা -এর দাওয়াত কোন রেখাপাত করল না। বরং সে বলল : ‘তোমার এসব কিছু জাদু মাত্র, আমরা আমাদের প‚র্ব পুরুষদের মধ্যে এসব কথা শুনিনি।’ সূরা কাসাস : ৩৬। ফিরআউন তার সভার সদ্যসগণকে উদ্দেশ করে আরো বললো : ‘হে পরিষদবর্গ! আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে বলে আমি জানি না। সূরা কাসাস : ৩৮
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে, মূসা ও হারুন যখন ফিরআউনের কাছে গিয়ে বললেন : আমরা বিশ্বজগতের পালনকর্তার রাস‚ল। তুমি বনু ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও। ফিরআউন তখন প্রশ্ন করলো, আমরা কি শিশু অবস্থায় তোমাকে আমাদের মাঝে লালন পালন করিনি? তুমি কি আমাদের মাঝে তোমার জীবনের বহু বছর কাটাওনি? আর তুমি করেছিলে সেই অপরাধ যা তুমি (হত্যাকাÐে) করেছিলে। (অথচ তুমি আমাকে পালনকর্তা না বলে অন্যকে পালনকর্তা বলছ) আসলে তুমিই হলে কাফির বা কৃতঘœদের অন্তর্ভুক্ত। জবাবে মূসা বললেন : আমি সে অপরাধ তখন করেছি যখন আমি ভ্রান্ত ছিলাম। আর আমি ভীত হয়ে তোমাদের কাছ থেকে পলায়ন করেছিলাম। এরপর আমার পালনকর্তা আমাকে প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং আমাকে করেছেন রাস‚লগণের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা বলছ তার বিনিময়ে তুমি বনু ইসরাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছ। ফিরআউন এ কথার জবাব না দিয়ে সে বলল : তোমাদের কথিত বিশ্বজগতের পালনকর্তা কে? মূসা বললেন : তিনি নভোমÐল এবং ভ‚মÐল ও এতদুভয়ের মাঝখানে সবকিছুর পালনকর্তা, যদি তোমরা বিশ্বাসী হয়ে থাক। এ কথা শুনে ফিরআউন তার পরিষদবর্গকে বললো তোমরা কি শুনছ না? আসলে তোমাদের প্রতি প্রেরিত এ রাস‚ল একজন আস্ত পাগল। সূরা শো‘আরা : ১৬-২৭
ফিরআউন বললো : তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্য কাউকে মা‘বূদরূপে গ্রহণ কর তাহলে আমি তোমাকে অবশ্যই কারারূদ্ধ করবো। মূসা বললেন : আমি তোমার নিকট স্পষ্ট কোন নিদর্শন নিয়ে আসলেও? ফিরআউন বলল : তাহলে তা নিয়ে এসো যদি তুমি সত্যবাদী হও। তখন মূসা তার লাঠিটি নিক্ষেপ করলে তৎক্ষণাৎ তা এক সুস্পষ্ট অজগরে পরিণত হল। তারপর সে তার হাত বের করল তৎক্ষণাৎ তা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র উজ্জল প্রতিভাত হল। ফিরআউন তার চারপাশের নেতাদের বললো: নিশ্চয়ই এ এক বিজ্ঞ যাদুকর। সূরা শো‘আরা : ২৯-৩৪।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।