পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যেই অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয়ী ও কৃচ্ছ্রতার নীতি গ্রহণ করেছে। আমদানির ক্ষেত্রে বিলাসি পণ্য, বিদেশি খাদ্য ও দামি গাড়ি আমদানির মতো ক্ষেত্রগুলো সঙ্কুচিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় বা জরুরি নয়, এমন সব প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সরকারি অফিসে, কর্মকর্তাদের গাড়ি ব্যবহার, বিদ্যুৎ খরচ ও এসি ব্যবহার কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জ্বালানি আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনতে ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে বিদ্যুতের রুটিন লোডশেডিং আরোপ করা হয়েছে। উন্নয়নের গতানুগতিক ধারণা এখন চরমভাবে হোঁচট খাচ্ছে। এতদিন ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে দেখা হলেও এবার ডলার সাশ্রয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলিটকের ফাইভ-জি প্রকল্প স্থগিত করা হলো। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিটকের ২৩৬.৫৪ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ফাইভ-জি প্রকল্প স্থগিতের ঘোষণা দেন। তার সিদ্ধান্ত দূরদৃষ্টির পরিচায়ক।
গত অর্থবছরের মধ্যভাগ থেকে দেশে অস্বাভাবিক বাণিজ্য ঘাটতি লক্ষনীয় হয়ে উঠে। রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহেও নি¤œমুখিতা দেখা দেয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভে টান পড়তে শুরু করে। গত বছরের এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার রির্জাভ থাকার তথ্য প্রকাশিত হলেও বাণিজ্য বৈষম্যের কারণে কমতে কমতে তা এখন ৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের আমদানি ব্যয় মিটানো সম্ভব। আমাদের মতো দেশের অর্থনীতিতে কমপক্ষে ৬ মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহের সমান রিজার্ভ থাকলে তা নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। রফতানি এবং প্রবাসী কর্মীদের রেমিটেন্স আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা না থাকলে এ রিজার্ভ তেমন উদ্বেগের কারণ ছিল না। গার্মেন্টে ক্রয়াদেশ এবং প্রবাসী কর্মীদের রেমিটেন্স কমে যাওয়ার বাস্তবতায় অর্থনৈতিক সংকট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ বিপদসীমার কাছাকাছি চলে আসার সাথে সাথে দেশে জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের যা মজুদ রয়েছে তা দিয়ে এক সপ্তাহ থেকে একমাসের প্রয়োজন মিটতে পারে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট ক্রমে ঘনীভূত হয়ে এলেও দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ হয়নি। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, গত চারমাসে ভিআইপি প্রটোকলে বিদেশগামী ব্যক্তিদের মাধ্যমে দেশ থেকে সাড়ে ৩৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বিদেশে চলে গেছে। দেশ থেকে অর্থ সরানোর মূল পথ হচ্ছে আমদানির নামে ভুয়া এলসি মার্জিন এবং অতিরিক্ত মূল্য দেখানো। সামগ্রিকভাবে দেশ থেকে বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতির সংকটকালেও ভিআইপি প্রটোকলে বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিদের দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার এই চিত্র উদ্বেগজনক। দেশে অব্যাহত হারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ব্যবসায়-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়ার সাথে সাথে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এহেন বাস্তবতায় সরকারি প্রকল্পের ব্যয় সঙ্কুচনের পাশাপাশি শ্রমঘন ও কর্মসংস্থান বান্ধব প্রকল্প গ্রহণের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে দেশে মার্কেট-শপিংমলগুলো রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের অফিস এবং কর্মকর্তাদের জীবনাচারে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। শুধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা যাবে না। জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়ন এবং আমদানি-রফতানিতে স্বচ্ছতা এবং অর্থপাচারের বিরুদ্ধে গৃহীত উদ্যোগগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। প্রধানমন্ত্রীর ফাইভ-জি প্রকল্প স্থগিত করার সিদ্ধান্ত থেকেই বুঝা যায়, অর্থ সাশ্রয় দেশের জন্য কতটা প্রয়োজন ও জরুরি। আমরা আশা করবো, সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকে অর্থ সাশ্রয়ের নির্দেশনা নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।