পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরণা রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের ১১ জন যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৬ জন। নিহতদের ১০ জন হাটহাজারীর জুগিরহাট আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের ছাত্র-শিক্ষক। তারা ঝরণা দেখে ফিরছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি রেলক্রসিং পার হওয়ার আগেই মাইক্রোবাসটি উঠে পড়ে। ট্রেনের ধাক্কায় গাড়িটি ইঞ্জিনের সাথে আটকে যায় এবং প্রায় অর্ধকিলোমিটার পর্যন্ত চলার পর থামে। এ সময় রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ছিল না। গেটম্যান জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার পর তাকে আটক করা হয়। এ দুর্ঘটনায় বিভাগীয় পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ১০টি তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ায় এলাকায় বেদনাবিদূর ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ২০১৯ সালেও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাস দুমড়ে-মুচড়ে বর-কনেসহ ১১ জন নিহত হয়েছিল। সেখানেও গেটম্যান ছিল না।
রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। এটি নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে ট্রেন বিবেচিত হলেও এর চলাচলের পথে দুর্ঘটনা প্রায় নিয়মিত ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে অরক্ষিত রেলপথ, অবৈধ লেভেলক্রসিং, গেটম্যানের অভাব এবং চলাচলকারীদের অসচেতনতাকে দায়ী করেছেন পর্যবেক্ষকরা। অবশ্য সমস্যা চিহ্নিত হলেও রেল কর্তৃপক্ষ তা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি, যার ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত একমাসে লেভেকলক্রসিংয়ে অন্তত ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেলওয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৬০১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৪৩ জন নিহত হয়েছে। গত ১০ বছরে ৩১০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৮১ জন। আহত হয়েছে অসংখ্য। লেভেলক্রসিংয়ে সবসময় গেটম্যান যেমন থাকে না, তেমনি অবৈধ ক্রসিংয়ে কেউই থাকে না। অবৈধ ক্রসিং বন্ধ করারও কোনো উদ্যোগ রেল কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত নেয়নি। এর ফলে যেকোনো এলাকায় স্থানীয়রা লেভেলক্রসিং সৃষ্টি করে রেলপথকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। বিশ্বের আর কোথাও এভাবে লেভেলক্রসিং তৈরি হয় বলে আমাদের জানা নেই। রেলের দুর্নীতির বিষয়টি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। সরকার রেলের উন্নয়নে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা দিলেও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না। যাত্রী দুর্ভোগ, সিডিউল বিপর্যয়, ট্রেনের ভেতরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সর্বোপরি রেল দুর্ঘটনা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যখন নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে রেলকে গুরুত্ব দিয়ে অত্যাধুনিক করে গড়ে তুলেছে, যাত্রীদের আরও কিভাবে সেবা দেয়া যায় এ নিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন আমাদের রেল ব্যবস্থা সেই মান্দাতার আমলেই পড়ে রয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কেন রেলকে উন্নত করা যাচ্ছে না? জনগণের এই অর্থ কোথায় যায়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সর্বাগ্রে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কথা চলে আসে। এত আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও রেল মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের কোনো বিকার নেই। সরকারও এ ব্যাপারে তাদের কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আনছে না। ফলে রেলের যেমন উন্নয়ন হচ্ছে না, তেমনি দুর্ঘটনার হারও দিন দিন বাড়ছে।
লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে, এক্ষেত্রে গেটম্যানের অবহেলা ও অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি দুর্ঘটনার শিকারদেরও দায় রয়েছে। গাড়ি নিয়ে লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময় চালক চলন্ত ট্রেন দেখবে না, এটা হতে পারে না। নিরাপদ দূরত্ব থেকেই ট্রেন দেখা যায়। তারপরও লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময় গাড়ির চালক ও যাত্রীরা কেন সচেতন হবে না? কেন তারা বিপজ্জনকভাবে পার হতে যাবে? রেল লাইনে শুধু গাড়ি দুর্ঘটনাই নয়, অনেক অসচেতন লোকজনও কাটা পড়ে নিহত হয়েছে। অনেক তরুণ-তরুণী কানে হেডফোন লাগিয়ে রেল লাইনের উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে ট্রেনের নিচে পড়েছে। এসবই চরম অসচেতনতা। বলা বাহুল্য, চলন্ত ট্রেন গাড়ির মতো যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ব্রেক চেপে থামানো যায় না। এটি গতিশীল এবং নির্দিষ্ট স্টেশন ছাড়া কোথাও থামে না। এই বিষয়টি সম্পর্কে সকলেরই অবগত থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে ট্রেন কর্তৃপক্ষকে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। যেসব অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে, সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করে দিতে হবে। বৈধ লেভেলক্রসিংয়ে গেটম্যান যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা, তা তদারকি করতে হবে। রেলের সার্বিক উন্নয়ন এবং উন্নত যাত্রীসেবা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।