পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চুরি ও দুর্নীতি করে সরকার দেশের জ্বালানি খাতের সর্বনাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পতন ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আমাদের দাবি একটাই, সরকারের পদত্যাগ। আমি সরকারকে বলব, পদত্যাগ করুন। নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি সমাবেশটির আয়োজন করে। বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া ও নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন-মামলার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আর আওয়ামী লীগকে আর সময় দেবো না? তাদের পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আজকে বিদ্যুৎ, এর পরে জ্বালানি তেল, এরপরে দেখবেন খাজাঞ্চি খানা শূন্য হচ্ছে, রিজার্ভ শূন্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পেতে এখন এখন আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। তাই এখন আর অনেক দফা-টফা নেই। এখন একটাই দফা, এক দাবি। এক দফা এক দাবি সরকারের পদত্যাগ। পরিষ্কার কথা এই মুহূর্তে পদত্যাগ করো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করো। একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এই সংসদকে বাতিল করো এবং নতুন একটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে দিয়ে দাও।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আহ্বান আর সময় নেই, এখন জেগে উঠতে হবে। এখন আমাদের নেতা-নেত্রীদের নেতৃত্বে জেগে উঠতে হবে। এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী ভয়ঙ্কর দুর্নীতিবাজ সরকারকে একটা ধাক্কা লাগাতে হবে। সেই বিখ্যাত উক্তি ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।’ আসেন সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলি, মানুষকে জাগিয়ে তুলি এবং মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ সরকারের পতন ঘটাই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বললেন যে, আমরা আইএমএফ থেকে টাকা ধার নেব না। আমরা এখন শক্তি বাড়াচ্ছি অর্থনীতির মধ্যে। এখন পত্রিকায় দেখলাম যে তারা ৪৫০ বিলিয়ন ডলার ধার চেয়েছে আইএমএফের কাছে। এই সরকার মুখে সমস্ত বড় বড় কথা বলে, অনর্গল মিথ্যা কথা বলে, মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা শূন্য হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে ফোকলা দেশে পরিণত করেছে।
দেশের অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে এখন ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার। এই ৩১ বিলিয়ন ডলার সঠিক নয়। এখানে ৮ থেকে ৯ কোটি ডলার আছে স্বর্ণ। আর শুধু ব্যবহার করা যায় এর পরিমাণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ১৬ বিলিয়নের বেশি নয়। তিনি বলেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সুতরাং এদেরকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না, আর কোনো সময় দেওয়া যাবে না। যত বেশিক্ষণ সময় আওয়ামী লীগ থাকবে, এরা থাকলেই বাংলাদেশকে ধ্বংস করে ফেলবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কোনো ঘাটতি নেই। আমার প্রশ্ন ঘাটতি নেই তো লোডশেডিং কেন, ঘাটতি নেই তো ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই কেন? কেন আপনারা জ্বালানি লোডশেডিং রেশন করছেন, গ্যাস রেশন করছেন, কেন আজকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন অশনি সঙ্কেত? তিনি বলেন, দুর্নীতি করে, চুরি করে তারা (সরকার) বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সর্বনাশ করে দিয়েছে। আজকে শহরে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ যায় আর গ্রামে যেখানে বোরো মৌসুমে সেচের জন্য বিদ্যুৎ দরকার সেখানে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা কোনো বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ এই সরকার এই বিদ্যুতের জন্য হাজারো কোটি টাকা লুট করেছে এবং লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে।
সমাবেশে আসা নারী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্রিকায় দেখলাম ব্যর্থ নির্বাচন কমিশনের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৬ মাসের শিশু সুরাইয়া পুলিশের গুলিতে তার মাথার খুলি উড়ে গেছে। পত্রিকা খুলেন প্রতিদিন দেখবেন হাজারো মানুষ তারা হয় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, অথবা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে মারা যাচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের শালীনতাহানি করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন. সমগ্র দেশে আজকে একটা হাহাকার পড়ে গেছে। এর ওপরে মরার খাড়ার ঘা, বিদ্যুৎ নেই। আমাদের মা-বোনেরা এখানে হারিকেন নিয়ে এসেছেন। এই হারিকেনটা গণভবনে শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেন। তার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন। শুধু এই মিটিংয়ের মধ্যে হারিকেন আনলে হবে না। যখনই অন্ধকার আসবে, যখন লোডশেডিং শুরু হবে, আপনারা মোমবাতি ও হারিকেন নিয়ে বেরোবেন। এই মোমবাতি-হারিকেন নিয়ে না বেরোলে আমরা আলোচিত হবো না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ২০২১-২২ সালে বিদ্যুৎ খাতে লোকসান হয়েছে এক বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এমনি প্রত্যেক বছরে সব মিলিয়ে লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে না, বিদ্যুৎ দেয় না, কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জের টাকা নিয়ে চলে যায়। কারা এই টাকাগুলো নিয়েছে জানেন? সামিট গ্রুপ এক বছরে নিয়েছে ৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল ৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, এরদা পাওয়ার হোল্ডিং ৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ ৪ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, কেপিসিএল ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এই রকম ১০টা কোম্পানি যারা এই আওয়ামী লীগের সঙ্গে, মন্ত্রীদের সঙ্গে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা এই হাজারো কোটি টাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদ্যুৎ আনার জন্য কুইক রেন্টাল পাওয়া প্ল্যান্টগুলো নিয়ে এসেছিল কোনো টেন্ডার না করেই হাজারো কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে। এটার জন্যে কোনো মামলা হবে না ইনডেমনিটি আইন তৈরি করেছে। এই আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার এদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে লুটপাট করা, দুর্নীতি করা। কয়েকদিন আগে দেখলেন পদ্মা সেতু খুব ফলো-টলাও করে উদ্বোধন ঘোষণা করল। ১০ হাজার কোটি টাকার ব্রিজ তারা ৩০ হাজার কোটি টাকায় করল। একইভাবে দেখবেন গত ১০ বছর ধরে চলছে এই যে মাথার উপরে (জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মেট্রোরেল পথ) মেট্রোরেল। উত্তরায় এখন যাওয়া যায় না। সেখানের ভিআইপি রাস্তায় গেলে আপনাকে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা হাতে নিয়ে যেতে হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলীতে সুরঙ্গ ব্রিজ করছে। আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষের খাওয়ার টাকা নেই। গত বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেখেছি আপনারা যতই এই সমস্ত টানেল আর মেগা প্রজেক্ট তৈরি করেন, আমার দেশের ৪২ ভাগ মানুষ এখনো ২ বেলা খেতে পায় না। তাদেরকে আজ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করতে হয়।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালামসহ মহানগর ও দলের বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।