Inqilab Logo

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বন্দরের যাতায়াত আরো গতিশীল ও মসৃণ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২২, ১২:০৬ এএম

দেশের প্রায় ৯০ ভাগের বেশি আমদানি-রফতানির কাজ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বন্দর এটি। এই একটি বন্দর দিয়ে সিংহভাগ আমদানি-রফতানির কাজ করায় এর উপর চাপও বেশি। এতে প্রায়ই নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বন্দরে যাওয়ার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট, কন্টেইনার জট থেকে শুরু করে কারিগরি ত্রুটি কিংবা স্থান সংকুলানের অভাব জাহাজ জট ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে, মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ১০ ভাগের মতো আমদানি-রফতানির কাজ সম্পন্ন হয়। বন্দরটিকে যে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না, তা বলা বাহুল্য। অথচ এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করলে দেশের আমদানি-রফতানির গতি বৃদ্ধি পেত এবং এককভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর যে চাপ, তা অনেকটা কমত। আশার কথা, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার ফলে মোংলা বন্দর ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রফতানিকারকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মাসেতুর কল্যাণে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে গার্মেন্ট পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে পোল্যান্ড রফতানি করা হয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জের ২৭টি গার্মেন্ট কারখানার ১৭টি কন্টেইনার এ বন্দর দিয়ে পাঠানো হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি একটি ভালো খবর। আশা করা যাচ্ছে, এ বন্দরও ক্রমেই ব্যস্ত বন্দরে পরিণত হবে।

পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে আকাশ পথের চেয়ে সমুদ্র পথই সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী। উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে সব দেশই সমুদ্র বন্দর দিয়েই তাদের সিংহভাগ আমদানি-রফতানির কাজ সম্পন্ন করে। এক সিঙ্গাপুর শুধু বন্দর কার্যক্রম দিয়ে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। একে ‘পোর্ট সিটি’ বলা হয় এবং বন্দর ব্যবহারে দেশটির অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। ভারত, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের দেশগুলোও সমুদ্রপথকেই আমদানি-রফতানির প্রধান অবলম্বন হিসেবে নিয়েছে। এসব দেশের একাধিক বন্দর থাকায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর বাদে মোংলা ও নতুন হওয়া পায়রা বন্দর বলতে গেলে অলস পড়ে আছে। পায়রার অবশ্য নির্মাণ শেষ হয়নি। মোংলাকে গতিশীল করার যথাযথ উদ্যোগের অভাব রয়েছে। আমরা যদি চট্টগ্রাম বন্দরের কথাই ধরি, দেখব, এ বন্দর পূর্ণ গতিশীল রাখার সব সময় সম্ভব হচ্ছে না যানজটের কারণে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায়ই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। গতকালের ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার কুমিল্লা অংশে ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয় ও পরিবহন মারাত্মক বিপর্যয়েল শিকার হয়। এ মহাসড়কে এ ধরনের যানজট প্রায়ই লেগে থাকে। এতে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে যেমন অতিরিক্ত সময় লাগছে, তেমনি ব্যয়ও বাড়ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। সর্বক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ ও সহজ হলে যে মানুষের যাতায়াত এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে যায়, তার বড় প্রমাণ পাওয়া গেছে এবারের ঈদে। ঈদে সাধারণত মানুষ বেড়ানোর জন্য সবার আগে কক্সবাজারকেই বেছে নেয়। এ সময় সেখানের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট আগে থেকেই বুকিং হয়ে যায়। পর্যটকদের থাকার জায়গা পর্যন্ত থাকে না। এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। কক্সবাজারে পর্যটকদের তেমন ভীড় দেখা যায়নি। হোটেল-মোটেলগুলো ডিসকাউন্ট দিয়েও অন্যান্যবারের মতো পর্যটক টানতে পারেনি। বরং দেখা গেছে, কুয়াকাটায় কক্সবাজারের মতো থাকা-খাওয়ার তেমন সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও সেখানে প্রচুর পর্যটক গিয়েছে। এখনও যাচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, পদ্মাসেতু। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও মসৃণ হওয়ায় মানুষ কম সময়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছে যেতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যাতায়াত ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমও গতিশীল হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃণ হলে যে অর্থনীতি গতিশীল হয়, তা এই দৃশ্যপট থেকেই বোঝা যায়। পক্ষান্তরে কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম যেতে অনেক বাধা-বিপত্তি ও দীর্ঘ সময় লেগে যায়। দেশের আমদানি-রফতানির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি কাক্সিক্ষত মানে কোনো ভাবেই গতিশীল করা যাচ্ছে না।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট এবং পোর্ট কানেক্টিং সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে বন্দরে যাতায়াত রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়েছে। সঙ্গত কারণেই ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে নিরুৎসাহী হয়ে পড়ছে। যেকোনো মূল্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে হবে। পোর্ট কানেক্টিং রোড থেকে পার্কিং উঠিয়ে দিতে হবে। বন্দরে যাতায়াত সম্পূর্ণ বাধামুক্ত ও নির্বিঘ্ন করতে হবে যাতে বন্দর ব্যবহার সহজ হয়। একই সঙ্গে মোংলা বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো যেসব বাধা আছে, তা দ্রুত দূর করতে হবে। এ বন্দরে সব ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজিত করে চট্টগ্রাম বন্দরের সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম যেমন গতি পাবে, তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর থেকেও চাপ কমবে। এছাড়া, এই দুই বন্দরের একটিতে সমস্যা দেখা দিলে আরেকটি ব্যবহার করা যাবে। সরকারের উচিৎ, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা। এ বিষয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা নেয়া হবে বলে আমরা মনে করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্দরের যাতায়াত আরো গতিশীল ও মসৃণ করতে হবে
আরও পড়ুন