Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেছারাবাদে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যর অভিযোগ

নেছারাবাদ(পিরোজপুর)উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২২, ৫:৪৬ পিএম

নেছারাবাদ উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী(ভারপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্লিপ,রুটিন মেরামত,ক্ষুদ্র মেরামত, ওয়াশব্লক সহ বিদ্যালয়ের ভিবিন্ন খাতের ২০-২১ অর্থ বছরের বরাদ্দ থেকে ইউসুফ আলী বিশ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বরাদ্দ পাওয়া উপজেলার ভিবিন্ন বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এ অভিযোগ করেছেন। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেছেন, যেসব শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন তারা আমার কাছ থেকে ঠিকমত সুবিদা পায়নি বলে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

উপজেলার নান্দুহার বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: বাসেদ, মুক্তাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিরা রানী ঢালী, উত্তর আরামকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ মিস্ত্রী সহ একাধিক শিক্ষক তার দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছেন। তাদের অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী তাদেরকে জিম্মি করে বিদ্যালয়ের বরাদ্দ পাওয়া অর্থ থেকে প্রতিটি বরাদ্দে দশ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। কেহ ঘুষ দিতে অনিহা প্রকাশ করলে ভিবিন্ন কারন দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা আটকে রাখার ভয় দেখিয়ে ঘুষ নিয়েছেন।
শিক্ষকদের অভিযোগে জানাযায়, শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বিদ্যালয়ের স্লিপ বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকা থেকে দশ হাজার, রুটিন মেরামতের ৪০ হাজার টাকা থেকে সাত হাজার, ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকা থেকে বিশ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। শিক্ষকরা আরো অভিযোগ করেন, তিনি এডুকশেন এমারজেন্সি খাত, নীড বেইজড প্লেয়িং সহ বিদ্যালয়ের ভিবিন্ন খাত থেকে শিক্ষা কর্মকর্তা ঘুষ দাবী করেন। এছাড়াও তিনি টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের রিপেয়ারিং কাজে নিজের মনোনীত লোককে কাজ পাইয়ে দিয়েও ঘুষ নিয়ে থাকেন। শিক্ষকদের অভিযোগ তার সীমাহিন ঘুষ বানিজ্যে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নাজেহাল হয়ে পড়েছে।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাযায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে উপজেলার ১৭০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্য বিদ্যালয় প্রতি স্লিপে ৫০ হাজার, ৭৬ টি বিদ্যালয়ে বিদ্যালয় প্রতি দুই লাখ, ৮৬ টি বিদ্যালয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে রুটিন মেরামতে ৪০ হাজার এবং ১৭ টি বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মানের জন্য ওয়াশ ব্লক প্রতি বিশ হাজার করে বরাদ্দ আসে।
অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয়গুলোর অনেক বিদ্যালয় কাজ না করেও শিক্ষা কর্মকর্তাকে সন্তুষ্ট করে তারা ভুয়া বিল বাউচার বানিয়ে শিক্ষা অফিসে জমা প্রদান করেছেন। আর শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী কাজ না দেখেই সেই বিলে সহি স্বাক্ষর করে বরাদ্দের টাকা ছেড়ে দিয়েছেন।
উত্তর আরামকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ মিস্ত্রী অভিযোগ করেন, তিনি ২০-২১ অর্থ বছরে তার বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ আলীকে সেই টাকা থেকে বিশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা হাতে পেয়েছেন। এছাড়া স্লিপের কাজে পাওয়া ৫০ টাকার বরাদ্দ থেকেও তাকে দশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন।
নান্দুহার বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: বাসেদ অভিযোগ করেন, তিনি রুটিন মেরামত বরাদ্দ থেকে ২ হাজার টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত বরাদ্দ থেকে দশ হাজার টাকা, এডুকেশন এমারজেন্সি বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে দশ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ইউসুফ আলী অনেক শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব বরাদ্দ থেকে অনেক বেশি ঘুষ নিয়েছেন। আমার কাছেও বেশি চেয়েছিল। আমি রাজি হয়নি বলে, অফিসের চা খরচ সহ উর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করার কথা বলে নানান বাহানা করে আমার কাছ থেকে একটু কম নিয়েছেন।

মুক্তাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হিরা রানি ঢালী অভিযোগ করেন, আমার বিদ্যালয় স্লিপের কাজে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। বিনিময়ে শিক্ষা কর্মকর্তা সবার কাছ থেকে যে রকম নিয়েছেন আমার কাছ থেকেও সেরকম নিয়েছেন। করব কি আমরা সবাই নিরুপায়।

ঘুষের অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন ঘুষ খাইনা। আমার সামনে প্রমোশন হবে। তাই একদল লোক সংঘবদ্ধ হয়ে দুর্নাম ছড়াচ্ছে। তাছাড়া যে সব শিক্ষকরা অভিযোগ দিয়েছে তাদের কোন অনৈতিক সুবিদা দিতে পারিনা বলে তারা এসব রটাচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও নেছারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, আমি উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি বটে। কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা। আমি তার দুর্নীতির খবর অনেক পাচ্ছি তবে কোন একশনে যেতে পারছিনা। তারা অধ্যবদি কোন সভা ডাকেনি। সম্প্রতি ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে কিছু কথা শুনে তাকে ডেকে কড়া ভাষায় কথা বলেছি। তবে তার কোন ফল হয়নি। তিনি ইচ্ছেমত যা খুশি তা করে যাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ