Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্যুতের অপচয় ও অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

বিদ্যুতের ঘাটতি বেসামাল সরকার যখন কৃচ্ছ্রতা, মিতব্যয়িতা ও রুটিন লোডশেডিংয়ের নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করছে, তখনো সারাদেশে হাজার হাজার অবৈধ বিদ্যুত লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত মেগাওয়াট বিদ্যুতের চুরি-অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই বন্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা থাকলেও সারাদেশে লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিক্সা যথেচ্ছভাবে চলাচল করছে। এসব অবৈধ বিদ্যুৎলাইন এবং বিদ্যুৎচালিত অটোরিক্সা বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে শুধুমাত্র কৃচ্ছ্রতা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঘাটতি পুরণে নানাবিধ উদ্যোগ নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের ৯০ ভাগ গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্য অবৈধ ঘোষিত ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ও মিশুক চার্জ দেয়া হচ্ছে। ব্যাটারি চালিত ছোট যানবাহন পুরোপুরি বন্ধ করা হয়তো সম্ভব নয়। তবে গ্যারেজের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা সম্ভব হলে এসব গাড়ির চার্জ থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। মূলত বিদ্যুত বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারির যোগসাজশে দেশে লাখ লাখ অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ অবিচ্ছিন্ন রয়েছে। সরকারকে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত করে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ সংযোগ দিয়ে এসব কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলছেন। বিদ্যুতের ঘাটতি পুরণে সাধারণ ভোক্তাদের মিতব্যয়ি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। সেই সাথে সরকারি অফিস আদালতে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের ঘাটতি পুরনে ইতিমধ্যে সারাদেশে লোডশেডিংয়ের রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়,বিদ্যুৎ বিভাগের ঘোষণার চেয়ে লোডশেডিং অনেক বেশি। দিনে গড়ে এক ঘন্টার লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও বুধবার রটিন লোডশেডিংয়ের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা এবং রাজধানীর বাইরে ৫ থেকে ৬ ঘন্টার বেশি সময় ধরে লোডশেডিং ছিল বলে জানা যায়। বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন এবং শতভাগ বিদ্যুতায়নে সরকারের অভিষেকের পর এমন বিপর্যয় অনাকাঙ্খিত ও দু:খজনক। বিদ্যুতের অপচয় রোধ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ নিলে এমন ঢালাও লোডশেডিংয়ের জনদুর্ভোগ কিছুটা কমিয়ে আনা এবং বিদ্যুত খাতের রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। বিশেষত বিদ্যুত খাতের কথিত দুর্নীতি, অপচয় ও অস্বচ্ছতা বন্ধের উদ্যোগ না নিয়ে সব দায় ও দুর্ভোগ সাধারণ ভোক্তাদের উপর চাপিয়ে সংকট উত্তরণে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যাবেনা। এ জন্য স্বচ্ছ, সমন্বিত ও বাস্তবানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এই মুহুর্তে ঘাটতি কমিয়ে আনতে সর্ব ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা ও কৃচ্ছ্রতার পাশাপাশি বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের বিকল্প উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে এলএনজি ও ডিজেল নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার কারণে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা পরিপুরণে গ্যাস ও কয়লানির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উপর বাড়তি চাপ পড়ছে। ওখানে যাতে কোনো বিপর্যয় সৃষ্টি না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বন্ধ থাকা বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো যাতে তাৎক্ষনিক বা স্বল্প সময়ে চালু করা যায় যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে তার প্রস্তুতি থাকতে হবে।

যেনতেন প্রকারে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানিতে আমদানি নির্ভরতার কারণে আমাদের বিদ্যুৎখাতে হঠাৎ এই সংকট তৈরী হয়েছে। দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সর্বোচ্চ ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপদনে সক্ষম, যা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোকে মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তকি দেয়া হচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দেশীয় উৎস ও টেকসই উন্নয়নে পরিকল্পনামাফিক বিনিয়োগ করা হলে এমন সংকট হতো না। এখন দেশীয় গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই আমাদের মূল ভরসা হয়েে দেখা দিয়েছে। গত এক দশকে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন, নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনে তেমন কোনো সাফল্য নেই। দেশীয় পেট্টোলিয়াম কোম্পানী বাপেক্সকে শক্তিশালী করে এখাতে বিদেশি কোম্পানীর কারসাজি ও নির্ভরতার জিম্মিদশা কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল। গ্যাস ছাড়াও দেশীয় কয়লা উত্তোলন করে তা কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে জ্বালানি বিভাগের অনীহা ও পশ্চাৎপদতা লক্ষ্য করা গেছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মান কাজ শেষ করে এর উৎপাদন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার পাশাপাশি গ্যাস, কয়লা, পানিবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উন্নয়নে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। টেকসই নিরাপদ, নিরিবচ্ছিন্ন ও , মানসম্পন্ন সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য সরকারের পরিকল্পিত স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই মুহুর্তে বিদ্যমান ব্যবস্থা চালু রেখে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও শিল্পকারখানার উৎপাদন ঠিক রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ।



 

Show all comments
  • কামাল রাহী ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:৫০ পিএম says : 0
    টিউব লাইটে ইলেকট্রিক্যাল ব্যালেষ্ট ব্যবহার না করে যদি ভালো মানের ইলেকট্রনিক্স ব্যালেষ্ট ব্যবহার করা যায়, তাহলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে অনেক।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammod Joynal Abedin ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:৫১ পিএম says : 0
    দেওয়ালের বিভিন্ন পয়েন্টে অযথা চার্জার লাগিয়ে রাখলেও কিছু বিদ্যুৎ খরচ হয়। দরকার না হলে প্লাগ খুলে ও সুইচ বন্ধ করে রাখুন। প্রয়োজন ব্যাতীত ওভেন, ফ্যান, পিসি ইত্যাদি বন্ধ করে রাখুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammod Joynal Abedin ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:৫১ পিএম says : 0
    দেওয়ালের বিভিন্ন পয়েন্টে অযথা চার্জার লাগিয়ে রাখলেও কিছু বিদ্যুৎ খরচ হয়। দরকার না হলে প্লাগ খুলে ও সুইচ বন্ধ করে রাখুন। প্রয়োজন ব্যাতীত ওভেন, ফ্যান, পিসি ইত্যাদি বন্ধ করে রাখুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:৫১ পিএম says : 0
    এসি ছেড়ে ঘুমাবেন না। প্রয়োজনে কয়েক ঘণ্টা এসি চালিয়ে তারপর বন্ধ করে দিন ও ফ্যান চালিয়ে নিন। কারণ ফ্যানের চেয়ে এসিতে বিদ্যুৎ অপচয় হয় বেশি।
    Total Reply(0) Reply
  • Kalamur Rahman Aman ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:৫১ পিএম says : 0
    বর্তমানে অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অযথা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো, রাস্তার বাতি সময়মতো বন্ধ না করাসহ নানাভাবে আমরা প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের অপচয় করছি। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত গৃহস্থালি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Kaycobad Hosen ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:৫২ পিএম says : 0
    বিদ্যুত্ অপচয় নিয়ে মানুষের খামখেয়ালি বেড়েই চলেছে। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিদ্যুতের অপচয় চোখে পড়ার মতো
    Total Reply(0) Reply
  • Antara Afrin ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:৫২ পিএম says : 0
    সরকারি অফিস-আদালত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুত্ অপচয় হয় লাগামহীনভাবে। অযথা বৈদ্যুতিক বাতি, ফ্যান ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী চালানো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আবার সড়ক ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বৈদ্যুতিক বাতি সময়মতো না নেভানোয় বিদ্যুতের অপচয় ঘটছে। আর এরূপ বিদ্যুত্ অপচয়ের কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি লেগেই থাকছে। এরই মধ্যে কিছু অসাধু লোক বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ঘটাচ্ছে। এসব অবৈধ বিদ্যুত্ ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি, আসুন আমরা সবাই সচেতন হয়ে বিদ্যুত্ অপচয় রোধ করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.shahalammiji ২২ জুলাই, ২০২২, ৯:৫২ পিএম says : 0
    অনেক দোকানে ও মাছের দোকানে দিনের বেলায় বেলায় আঅপ্রোয়জনে লাইট জালিয়ে রাখে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.shahalam ২২ জুলাই, ২০২২, ১০:২৬ পিএম says : 0
    বাজারে দিনের আলোতে বড় বড় লাইট জালিয়ে রাখে দেখার কেহ নাই?
    Total Reply(0) Reply
  • Md.shahalam ২২ জুলাই, ২০২২, ১০:৫২ পিএম says : 0
    বাজারে দিনের আলোতে বড় বড় লাইট জালিয়ে রাখে দেখার কেহ নাই?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুতের অপচয় ও অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে হবে
আরও পড়ুন