পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও বলে একটা প্রবাদ রয়েছে। এর অর্থ কারো অজানা নয়। ছোটবেলায় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স.)-এর একটি ঘটনা জেনেছি। সংক্ষেপে ঘটনাটি ছিল এমন, রাসূল (স.) মিষ্টি খেতে পছন্দ করতেন। একদিন এক মহিলা তার পুত্রকে রাসূলের (স.) কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, হে রাসূল (স.) আমার পুত্র অধিক মিষ্টি খেতে চায়। ওকে এত মিষ্টি খেতে নিষেধ করেন। তখন রাসূল (স.) তাৎক্ষণিকভাবে মহিলার পুত্রকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করেননি। তিনি তার কাছ থেকে কয়েক দিনের সময় চেয়ে নেন এবং তারপর তাকে আসতে বলেন। কারণ, রাসূলও (স.) মিষ্টি খেতে পছন্দ করতেন। এই কয়েক দিনে রাসূল (স.) নিজে মিষ্টি খাওয়া কমিয়েছেন। তারপর ঐ মহিলা যখন তার পুত্রকে নিয়ে রাসূলের (স.) কাছে আসেন, তখন রাসূল (স.) ছেলেটিকে মিষ্টি কম খাওয়ার উপদেশ দিলেন। রাসূল (স.) নিজেও যেহেতু মিষ্টি খাওয়া পছন্দ করতেন, তাই তিনি তৎক্ষণাৎ ছেলেটিকে মিষ্টি কম খাওয়ার কথা বলতে পারেননি। আগে নিজে মিষ্টি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে, তারপর ছেলেটিকে মিষ্টি বেশি খেতে নিষেধ করেন। এর মর্মার্থ এই, যে কাজ তুমি করো, সে কাজ অন্যকে না করার পরামর্শ বা নিষেধ করা শোভন নয়। এ প্রসঙ্গের অবতারণা করার কারণ হচ্ছে, গত ১৫ জুলাই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। কলকাতায় যুদ্ধ জাহাজের উদ্বোধনের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, যে দেশ ধর্মান্ধতা আর কট্টরপন্থীদের কারণে অশান্তিতে আছে, তাদের বাংলাদেশ থেকে শেখা উচিত। বাংলাদেশ সরকার কট্টরপন্থীদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। ভারতের দৈনিক হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদনে তার এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। রাজনাথ সিং আরও বলেছেন, যারা ধর্মান্ধতা আর কট্টরপন্থীদের কারণে অশান্তিতে আছে ভারতের জন্য সমস্যা তৈরি করছে তাদের বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার। রাজনাথ সিং-এ বক্তব্য রেখেছেন ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে।
দুই.
রাজনাথ সিংয়ের এ বক্তব্য দেয়া থেকেই নিবন্ধের শুরুতে রাসূল (স.)-এর ঘটনাটির অবতারণা করা হয়েছে। রাজনাথের এ কথা থেকে যে কারো মনে প্রশ্ন উঠবে, তার মুখে কি এ কথা শোভা পায়? তিনি কি তার দেশ ভারতের উগ্র হিন্দুদের ধর্মান্ধতার জয়জয়কার দেখছেন না? সেখানে কীভাবে উগ্র এবং ধর্মান্ধ হিন্দুরা মুসলমানদের নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ ও হত্যা করছে? সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প পুরো ভারতে ছড়িয়ে দিচ্ছে? রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র হিন্দুরা কীভাবে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় মুসলমান নির্মূল করার উন্মত্ততায় মেতে উঠেছে? বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের চরিত্র এখন এই, শাসক দল বিজেপি ভারতকে পুরোপুরি একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছে। এ সরকার যেমন নাগরিকত্ব আইন পাস করে মুসলমানদের দেশছাড়া করার উদ্যোগ নিয়েছে, তেমনি তার সমর্থক উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিশ্ব সভা ও আরএসএস-কে মুসলমান নিধনে লেলিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, হাজার বছর ধরে ভারত শাসন করা মুসলমান শাসকদের নির্মিত মসজিদ, স্থাপত্যকীর্তিসহ নানা ঐতিহাসিক স্থান ভাঙ্গা থেকে শুরু করে পরিবর্তন করে ফেলছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ কাজ করা হচ্ছে, ভারত থেকে মুসলমান শাসনের ইতিহাস মুছে ফেলে পুরোপুরি একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য। এসব সংবাদ খুব কমই প্রকাশিত হয়। মাঝে মাঝে দুয়েকটি ঘটনা প্রকাশিত হলে তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। কয়েক মাস আগে কর্ণাটকে একদল উগ্র হিন্দু মুসকান খান নামে এক কলেজ ছাত্রীর হিজাব খুলে ফেলতে বলায় সে তা খুলতে অস্বীকার করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। আসামে পুলিশের গুলিতে নিহত এক মুসলমানের লাশের ওপর এক উগ্র হিন্দু ফটোগ্রাফারের লাথি মারা ও নৃত্য করার দৃশ্য বিশ্বব্যাপী তুমুল সমালোচিত হয়। মুসলমানদের প্রতি উগ্র হিন্দুদের কী ঘৃণা ও প্রতিহিংসা তা এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ভারতের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের মুখ বা সামান্য ধোঁয়ামাত্র। ভেতরে ভেতরে মুসলমান নিধনের আরও অসংখ্য ঘটনা ঘটছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। সাম্প্রদায়িকতার আগ্নেয়গিরির উদগীরণ হচ্ছে। শুধু পত্র-পত্রিকা, বিভিন্ন গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ালেই কেবল তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ভারতে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি ‘হাই টলারেন্সে’ পরিণত হয়েছে এবং সরকার তাতে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, তা নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্ববাসী জেনে গেছে। কোনো কোনো রাজ্যে খোলা জায়গায় মুসলমানদের জুমার নামাজ পড়া, মাইকে আজান দেয়া, কোরবানি নিষিদ্ধ করা, জোর করে হিন্দুতে পরিণত করা থেকে শুরু করে সব ধরনের মৌলিক অধিকার সংকুচিত করার কাজ মোদি সরকারের আমলে জোরেসোরে চলছে। এরকম ভয়ংকর সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মান্ধতা বিশ্বের অন্যকোনো দেশে আছে কিনা জানা নেই। সাম্প্রদায়িকতার অগ্নিগর্ভে থেকে কিংবা বালিতে মুখ গুঁজে রাজনাথ সিং হয়তো ঝড় উপেক্ষার নীতি অবলম্বন করছেন। সেখান থেকে মুখ তুলে বা নিজের দিকে না তাকিয়ে যখন অন্য কোনো দেশকে ছবক দেন, তখন তা শুধু স্ববিরোধী নয়, দৃষ্টিকটুও বটে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তার চিরশত্রু পাকিস্তানে এক সময় উগ্রবাদীদের ব্যাপক উৎপাৎ ছিল। আত্মঘাতী বা অন্য কোনো উপায়ে বিস্ফোরণ ঘটাত। তবে এ অভিযোগও রয়েছে, এসব উগ্রবাদীদের মদদ দিত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। এখন এ ধরনের ঘটনা দেশটিতে কদাচ ঘটে। বলা বাহুল্য, এসব হামলার শিকার মুসলমানরাই হয়েছে। অন্যকোনো ধর্মের মানুষ নয়। দেশটিতে ভিন্ন ধর্মের মানুষের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, ধর্ম পালনে বাধা দেয়ার মতো বা জোর করে মুসলমান বানানোর ঘটনার কথা শোনা যায় না, বিশ্ব গণমাধ্যমেও তা প্রকাশিত হয় না। যদি ঘটত, তাহলে মুসলমানদের মৌলবাদী বা জঙ্গী অপবাদ দেয়া পশ্চিমা মিডিয়া তা অনেক বড় করে তুলে ধরে বলতো, মুসলমানরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতন করছে। দুঃখের বিষয়, ভারতে যে মুসলমানদের প্রতিনিয়ত নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে, পশ্চিমা বিশ্ব এবং তাদের বশংবদ মিডিয়া তা দেখেও না দেখার ভান করে। এ নিয়ে তেমন কোনো কথা বলে না। দুয়েকটি আলোচিত ঘটনা ঘটলে তা ‘না দেখালেই নয়’, এমন মনোভাব নিয়ে প্রচার করে। রাজনাথ সিং যে ধর্মান্ধতার কথা বলছেন, তার দেশে যে বিশ্বসভা ও আরএসএস-এর মতো ধর্মান্ধ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রয়েছে, তা কি তিনি দেখেন না? এমনকি তার যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনি কি ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলমান নিধনে মিথ্যা অজুহাতে যে দাঙ্গা লেগেছিল, তাতে উসকানি দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হননি? এ অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র কি তাকে দেশটিতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি? এ ঘটনা কি তিনি ভুলে গেছেন? প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদির ওপর থেকে আদালত অভিযোগ প্রত্যাহার করলেও তার আচরণ থেকে কি সাম্প্রদায়িকতা মুছে গেছে? মুছে যে যায়নি, তার প্রমাণ মুসলমান বিতাড়নের নাগরিকত্ব আইন করা এবং তিনি ক্ষমতায় আসার পর ভারতকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার পদক্ষেপ নেয়া থেকেই বোঝা যায়। এ নিয়ে কয়েক মাস আগে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও অভিযোগ উত্থাপন করেছে। এসব অভিযোগ রাজনাথ সিং অস্বীকার করবেন কীভাবে?
তিন.
রাজনাথ সিং পাকিস্তানকে ছবক দিতে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন। তার এ কথা আক্ষরিক অর্থেই বাস্তব। তবে তার দেশকে এখন উগ্র ও ধর্মান্ধ হিন্দুরা মুসলমান দমনের যে উন্মত্ততা দেখাচ্ছে, সেদিকে নজর দিয়ে যদি এ কথা বলতেন, ভারতকে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে হবে, তাহলে বিষয়টি শতভাগ সঠিক হতো। বাস্তবতা স্বীকারে তার সৎ সাহসের পরিচয় ফুটে উঠত এবং প্রশংসা পেত। তিনি হয়তো দুটো ভিন্ন বিষয়কে এক করে গুলিয়ে ফেলেছেন। প্রথমত, বিচ্ছিন্ন উগ্রবাদীদের দ্বারা হামলায় মানুষ হত্যার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দ্বিতীয়ত সামগ্রিকভাবে সরকারের এজেন্ডাভুক্ত হয়ে একটি সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার সকল প্রক্রিয়া অবলম্বন করা। এ দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। দ্বিতীয়টি সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। কারণ, এর মাধ্যমে একটি সম্প্রদায়কেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, মোদি যে হিন্দুত্ববাদ মনেপ্রাণে ধারণ করেন এবং তিনি ভারতকে শুধু একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান, তা তার কথা থেকেই বোঝা যায়। তিনি ভারতকে সবসময়ই ‘হিন্দুস্থান’ বলে অভিহিত করেন। অথচ, দেশটির আরও দুটো নাম রয়েছে। একটি ‘ভারত’, আরেকটি ‘ইন্ডিয়া’। এ দুটো নাম তিনি খুব কমই উচ্চারণ করেন। তা তিনি করতেই পারেন, তবে অন্য ধর্মকে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করা কি বিদ্বেষপ্রসূত ও ধর্মান্ধতা নয়? রাজনাথের বক্তব্যের ইতিবাচক দিক হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশ সরকার কট্টরপন্থীদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি তার দেশের ধর্মান্ধ ও কট্টরপন্থীদের দিকে দৃষ্টিপাত করেননি। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করলে যে ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হতো, এ বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। না নেয়ার কারণেই তাদের প্রশ্রয় দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি যে বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের জিরো টলারেন্সের প্রশংসা করেছেন, এ ধরনের কট্টরপন্থী বা ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ভারতের মতো সেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি আমাদের চিরায়ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনের কারণে। যেসব ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের কথা বলা হয়, তারা যখনই তৎপরতা চালিয়েছে, সরকার তা দমন করেছে। ভারতের মতো সরকারের সামনে বিশ্বসভা বা আরএসএসের মতো মুক্তভাবে কর্মকাণ্ড চালানোর কোনো জায়গা তাদের নেই। এটা শুধু সরকারই নয়, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এর কোনো সুযোগই দেয়নি, দেবেও না। এটা বাংলাদেশের মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য এবং তা তারা অর্জন করেছে ইসলাম থেকে। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে মৌলবাদী, জঙ্গী অপবাদ দেয়ার জন্য আমাদেরই কিছু অতি প্রগতিশীল এবং ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি উঠেপড়ে লেগেছে। তারা মুসলমানদের অতিপ্রিয় ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে আপত্তি ও অভিযোগ তুলেছে। এটা যে ইসলাম চর্চা ও হেদায়েতের পথকে রুদ্ধ করা এবং প্রকারন্তরে ইসলামকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রের অংশ, তা সচেতন মহলের বুঝতে বাকি থাকে না। কারণ, ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কোনো অভিযোগ নেই, বরং ভক্তি ও শ্রদ্ধা রয়েছে। ওয়াজ-মাহফিল থেকে অন্যকোনো ধর্ম সম্পর্কেও বিরূপ মন্তব্য করা হয় না। এখানে শুধু ইসলামের কল্যাণের কথা তুলে ধরে মানুষকে অবহিত করা হয়। সম্প্রতি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দুয়েক জায়াগায় হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, শিক্ষককে অপমান করার মতো ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গেল গেল বলে চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে তথাকথিত কিছু সুবিধাভোগী প্রগতিশীল ব্যক্তি। অন্য কোনো ধর্ম নয়, শুধু ইসলামের কথা শুনলেই তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। বিশ্বব্যাপী ইসলামের অগ্রযাত্রা তাদের মনেও ভীতি সঞ্চার করেছে। ফলে অন্যদেশে গিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ ও যোগ্যতা না থাকায়, তারা নিজ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বিশ্বাসে আঘাত করার কাজটি করছে। তারা মোদির চেয়েও বড় মোদি হতে চেষ্টা করছে। তারা ইসলামকে বাধাগ্রস্ত করে তাদের নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি তারা ১১৬ জন আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে তালিকা দিয়ে ইসলামের হেদায়েতের পথ ও প্রসারকেই প্রকারন্তরে বাধাগ্রস্ত করার অপকৌশল নিয়েছে। তাদের এ কাজ অনেকটা ভারতের উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠন বিশ্বসভা ও আরএসএস-এর মতো। আশার কথা, তাদের এই চরিত্র এবং মানসিকতা এখন দেশের মুসলমান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে। তারা তাদের কাছে চিহ্নিত হয়ে গেছে। তারা যে ধর্মবিরোধী এটা দেশের সকল ধর্মের মানুষ বুঝতে পেরেছে। ফলে তাদের কথা তাদের বিদেশি এজেন্টদের কাছে মূল্য থাকতে পারে, এদেশের মানুষের কাছে কোনোই মূল্য নেই।
চার.
বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বিশ্বে বিরল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও হাজার বছর ধরে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা অত্যন্ত শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে যুথবদ্ধভাবে বসবাস করছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগেনি এবং ভিন্ন ধর্মের কাউকে হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতনের মতো ভয়াবহ কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর ঘটবেও না। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও তার পেছনে যে দেশি-বিদেশি এবং তথাকথিত প্রগতিশীলদের ইন্ধন ও প্ররোচণা রয়েছে, তা সাধারণ মানুষ মাত্রই বুঝতে পারে। এসব ঘটনার পেছনে বা নেপথ্যে যারা আছে তদন্ত করে আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিচারের ব্যবস্থাও নিতে দেখা যায়নি। এর কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। সরকারের হাত তাদের পর্যন্ত পৌঁছে না। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐসব নেপথ্যের কুশীলবরা যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করতে পারে, এ ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, বাংলাদেশের মুসলমানদের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাতে যতই উসকানি ও উত্তেজিত করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হোক না কেন, তারা কোনো দিনই তাতে সাড়া দেবে না। এটাই হচ্ছে, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবচেয়ে বড় শক্তি। রাজনাথ সিং সেটা ভালোভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন বলেই বাংলাদেশের উদাহরণ টেনেছেন। তার উচিত, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে বৈশিষ্ট্য তা তার সরকারকেও অবলম্বন করার কথা বলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।