Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শপিং মলে নামাজ পড়া নিয়ে লখনৌতে তুলকালাম

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২২, ৪:৩৩ পিএম

ভারতে প্রকাশ্য স্থানে মুসলিমদের নামাজ পড়ার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নানা জায়গায় হিন্দুদের যে প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার সবশেষ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের লখনৌতে। ওই শহরে লুলু শিল্পগোষ্ঠীর একটি নতুন ও অত্যাধুনিক শপিং মলের ভেতরে একদল লোকের নামাজ পড়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাজ্য পুলিশ ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

প্রকাশ্য স্থানে নামাজ পড়ে দেশের আইন ভাঙা হয়েছে- একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী এই মর্মে এফআইআর করলে পুলিশ ওই নামাজিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চার্জও এনেছে। এদিকে এই বিতর্কের পর মল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন তাদের কম্পাউন্ডের ভেতরে কোনও ধরনের সমবেত ধর্মীয় প্রার্থনারই অনুমতি নেই - তবে এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশে বিদেশি বিনিয়োগ টানার চেষ্টা ধাক্কা খাবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

দুই হাজার কোটি রুপিরও বেশি খরচ করে এবং ২২ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে লুলু শিল্পগোষ্ঠী লখনৗতে যে নতুন মল তথা হাইপারমার্কেটটি চালু করেছে সেটি ভারতে তো বটেই, সমগ্র এশিয়াতেই বৃহত্তম বলে দাবি করা হচ্ছে। কেরালার লোক এমএ ইউসুফ আলির প্রতিষ্ঠিত লুলু গ্রুপের সদর দফতর সংযুক্ত আরব আমিরাতে, তবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই হাইপারমার্কেটের ব্যবসায় তারা অন্যতম শীর্ষ প্লেয়ার।

সম্প্রতি তারা ভারতেও পা রেখেছে, আর গত রোববার লখনৌতে তাদের নতুন এই স্টোরটির উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজে। কিন্তু উদ্বোধনের দুদিন পরেই মলের এক কোণায় কয়েকজনের নামাজ পড়ার দৃশ্য নিমেষে ভাইরাল হয়ে যায় - অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা নামে একটি সংগঠন এর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

মহাসভার নেতা শিশির চতুর্বেদী বলছিলেন, "এই লুলু মল কেরালা থেকে শুরু করে সর্বত্র 'লাভ জিহাদে'র প্রসার ঘটাচ্ছে বলে আমরা আগেই সোশ্যাল মিডিয়াতে খবর পাচ্ছিলাম।" "এদের কায়দাটা হল, কর্মীদের ৮০ শতাংশ মুসলিম যুবকদের নিয়োগ করে আর বাকি ২০ শতাংশ হিন্দু যুবতীদের চাকরি দিয়ে লাভ জিহাদে উসকানি দেওয়া।"

লুলু গ্রুপ মুনাফার একটা বড় অংশ 'শুধু একটি বিশেষ ধর্মের' লোকেদের পেছনেই খরচ করে বলেও তিনি দাবি করেন। "এখন ওদের মলে নামাজ পড়া হচ্ছে, এটা জানার পর আমরা অভিযোগ করেছি - যে জায়গাটা তাদের ব্যবসার জন্য দেয়া হচ্ছে, সেটাকে কী করে ধর্মীয় স্থান বানানো হচ্ছে?", জানান শিশির চতুর্বেদী। এই হিন্দুত্ববাদী নেতারা লুলু মল বয়কটেরও ডাক দিয়েছেন।

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য ও আইনজীবী জাফরইয়াব জিলানি এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলছিলেন, সম্প্রতি দিল্লি, গুরগাঁও-সমেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের প্রকাশ্য স্থানে নামাজ পড়ায় যেভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে, লখনৌর এই ঘটনাও সেই ধারাবাহিকতাতেই ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন। "ভারতের প্রতিটি নাগরিক তার নিজস্ব বিশ্বাস অনুযায়ী স্বাধীনভাবে যে ধর্মাচরণ করতে পারেন, সেই সাংবিধানিক অধিকারও এর মাধ্যমে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে," মন্তব্য করেন মি জিলানি।

দিল্লির একটি মুসলিম মালিকানাধীন সংস্থা 'কাশেমি গ্রুপ' টুইট করেছে, "জনগণের টাকায় তৈরি নতুন পার্লামেন্ট ভবনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদি হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুসারে পূজাপাঠ করতে পারেন, তাহলে যে বেসরকারি মলের মালিক ইউসুফ আলি, সেখানে কেন মুসলিমরা নামাজ পড়তে পারবেন না?"

লখনৌ পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই ভিডিওর নামাজিদের বিরুদ্ধে ১৫৩এ, ২৯৫এ ও ৩৪১ ধারায় যথাক্রমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো, ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এবং অন্যায়ভাবে বাধা দেওয়ার জন্য শাস্তির চার্জ এনেছে। মলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করারও চেষ্টা চলছে।

এদিকে লুলু মল কর্তৃপক্ষ এই নামাজ বিতর্ক থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টায় জানিয়েছে, তাদের কোনও কর্মী এই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন না। সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার সমীর ভার্মা সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, "আমরা সব ধর্মেরই মর্যাদা দিই - কিন্তু মলের ভেতর কোনও ধরনের সংগঠিত ধর্মীয় কর্মকান্ড বা প্রার্থনার অনুমতি দিই না।"

ওই মলে হিন্দুদের সব ধরনের পূজা সামগ্রীও যে ডিসকাউন্টেড দামে পাওয়া যায়, কর্তৃপক্ষ স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোকে ডেকে সেটাও দেখানোর চেষ্টা করছেন, যা থেকে বোঝা যায় নামাজ ইস্যু তাদের কতটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। তবে লখনৌর সাংবাদিক হেমন্ত মৈথিল বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ৮০০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক শিল্পগোষ্ঠী লুলুকেও যেভাবে এই বিতর্কে জড়ানো হল - তা রাজ্যের শিল্প পরিবেশের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক। "এটি মোটেও কোনও ইতিবাচক সংকেত দেবে না এবং রাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে আদিত্যনাথের চেষ্টাকেও সমস্যায় ফেলবে", বলছিলেন মি মৈথিল। সূত্র: বিবিসি।

 



 

Show all comments
  • MD Akkas ১৮ জুলাই, ২০২২, ৫:২৯ পিএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ আপনি ভারতের এই জাহেল সরকারকে ধংস করে দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নামাজ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ