Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ববাজারে দাম কমছে নিত্যপণ্যের, দেশে কমার লক্ষণ নেই

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১০:১৬ এএম

বিশ্ববাজারে দাম কমছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের। ভোজ্যতেল, গম, ভুট্টা, দুধ, কফিসহ বেশ কিছু খাদ্যপণ্যের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। মাসের হিসাবে এ কমতির হার আরও বেশি। নিত্যপণ্যের দাম ও মজুত পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণাকারী বিশ্বের একাধিক প্রতিষ্ঠান দাম কমার এ তথ্য দিয়েছে। তবে বিস্ময়কর হলো বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে যত দ্রুততার সঙ্গে দেশের বাজারে তা বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে, দাম কমলে দেশের বাজারে এসব পণ্যের দাম কমানোর দ্রুত কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। পণ্যগুলোর দাম সমন্বয় করে কবে নাগাদ খরচের চাপে পিষ্ট সাধারণ ভোক্তাকে স্বস্তি দেওয়া হবে–ব্যবসায়ী বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো পক্ষ থেকেই এখনো তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।
তবে আশার কথা হলো, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল, গম, দুধ, কফিসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম অনেক দিন ধরেই কমতির দিকে। কমতে কমতে এসব পণ্যের দাম বেশ খানিকটা সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। গতকাল বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস ও ইনডেক্স মুন্ডিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সবশেষ পণ্যের দাম ও মজুত পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে সয়াবিনের দাম কমেছে ৩ দশমিক ১২ শতাংশ। এক মাসের হিসাবে তা কমেছে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। সয়াবিনের দাম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কমোডটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেড বলছে, দুই মাসের ব্যবধানে সয়াবিনের দাম কমেছে ৩২ শতাংশ।
অপর ভোজ্যতেল পাম তেলের দাম এক সপ্তাহে কমেছে ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এক মাসে কমেছে ৩৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের কমোডটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেড বলছে, দুই মাসে এ পণ্যটির দাম কমেছে ৪৮ শতাংশ। সংস্থাটি জানায়, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম উঠেছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৯৫০ ডলার। সে সময় প্রতি ডলার ৮৬ টাকা হিসাবে লিটারপ্রতি দর দাঁড়ায় ১৫৩ টাকা। গত বৃহস্পতিবার এই দর নেমে আসে টনপ্রতি ১ হাজার ৩১৮ ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের দরে (৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা) লিটারপ্রতি দর দাঁড়ায় ১১৩ টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে দরপতন হয়েছে ৬৩২ ডলার বা ৩২ শতাংশ। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভোজ্যতেলের দামের এমন পতন নিকট অতীতে দেখা যায়নি।
সান ফ্লাওয়ার তেলের দাম বিশ্ববাজারে এক সপ্তাহে কমেছে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে কমেছে ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ক্যানোলা তেলের দাম দাম এক সপ্তাহে কমেছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ আর মাসে কমেছে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
গমের দামও দ্রুততার সঙ্গে কমছে। ট্রেডিং ইকোনমিকস বলছে, গতকাল এক দিনেই প্রতি টনে গমের দাম ১৮ দশমিক ২৫ ডলার কমেছে। এক সপ্তাহে কমেছে ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ আর মাসে কমেছে ২৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। কমছে ভুট্টার দামও। এক সপ্তাহে ভুট্টার দাম কমেছে ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ আর এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া, দুধের দাম সপ্তাহে কমেছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ আর মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কমেছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। কফির দাম সপ্তাহে কমেছে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ আর মাসে কমেছে ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে, দেশে দ্রুত তা বাড়ানো হলেও, দেশের বাজারে দাম না কমানোর বিষয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব। গতকাল সংগঠনের পক্ষ থেকে এর সহসভাপতি নাজের হোসেইনের উদ্ধৃতি দিয়ে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বে দাম বাড়লে, এখানে দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীরা তৎপর হলেও, দাম কমাতে এখনো কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো তাঁরা এখন বুকিং বেশি, ডলারের উচ্চমূল্যসহ নানান অজুহাত দিচ্ছেন। সংগঠনটি দাবি করেছে, এখন বাণিজ্যমন্ত্রীও নীরব, ট্যারিফ কমিশনেরও তৎপরতা নেই। কারসাজি করে দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলেও, এখন দাম কমানোর বেলায় কেউ নেই। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করছে কিনা-এ প্রশ্নও তুলেছে ক্যাব।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী আহাদ খান গতকাল বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তবে ঋণপত্র খোলার ৪৫ দিন পরে পণ্য দেশে আসে, তাই উৎসে দাম কমলেও এখানে রাতারাতি বাড়ানো যায় না। তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দাম কমার ধারা অব্যাহত থাকলে তা এখানে সমন্বয় করা হবে। তবে কবে নাগাদ দাম সমন্বয় হবে- এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত এ সরকারি কর্মকর্তা।
জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাজারে সয়াবিন, পাম অয়েল, সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলাসহ প্রায় সব ধরনের রান্নার তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে এ নিত্যপণ্যটির দাম খুচরায় অনেক বেড়ে যায়। এতে অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ মারাত্মকভাবে ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। ভোজ্যতেলের পাশাপাশি গমের দামও অস্বাভাবিক বাড়ে। বিশেষ করে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গমের সংকট তীব্র হয়। শুধু ভোজ্যতেল আর গমই নয়; ওই সময় থেকে দুধ, কফি, চিজসহ আরও বহু খাদ্যপণ্যের দামই লাগামহীন বাড়তে থাকে। এ দাম বৃদ্ধিতে ঘি ঢালে উচ্চ পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির পারদ উঠতে থাকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দ্রব্যমূল্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ