বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
অনেক দিন আগে এক কবি লিখেছিলেন, ‘অনেক কথাই শুনি? গান গেয়ে কে বৃষ্টি নামায়, ছড়ায় মুক্তোমণি/ ভোজবাজিতে। একটা জিনিস পারবে জাদুকর?/ খাবারগুলো ভাগ কর তো সমান ভাগে?/ দেখি জান কী মন্তর!’ একটু পাল্টে নেই লাইনগুলোকে ‘খাবারগুলো দাও তো কম দামে, দেখি তুমি কেমন সরকার।’ দেশের বিত্তহীন পরিবারেরর সদস্যদের মনের কথা কিন্তু এটাই। এরা বঞ্চিত, তারা অবহেলিত, তাই তারা চাইছেন, সরকার আন্তরিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করুক ক্ষুধা-দারিদ্র্য-বঞ্চনা-বৈষম্য ইত্যাদির বিরুদ্ধে। মুখে লম্বা লম্বা কথা না বলে দেশের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মৌলিক স্বার্থ সুনিশ্চিত করুক। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আগে থেকেই বাড়ছিল। সম্প্রতি তা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। চাল-ডাল-চিনি-সব্জি সব কিছুর মূল্য পঁচাত্তর শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দা এবং যুদ্ধই কারণ। এই সঙ্গে মজুতদারী ও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। সরকার বলছে, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে। তবে সাধারণ মানুষ ও বিজ্ঞজনেরা এসব কথা মানতে নারাজ। তাদের ধারণা, সরকারের কিছু মন্ত্রী ও এমপি, ব্যবসায়ী আড়তদারদের যোগসাজস দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাদের মতে, এজন্য অনেকটাই দায়ী সরকারি নীতি। শহরের বড় বড় পাইকারী বিপণন কেন্দ্রগুলো অর্থাৎ বিগ-মেট্রো বাজারগুলোর প্রতি বাদান্যতা দেখানোর জন্য দাম বেড়েছে পণ্যের। সরকার যদি মজুতদারি ও সিন্ডিকেটবাজি বন্ধে উদ্যোগ নিত ও গণবণ্টন ব্যবস্থাকে জোরদার করে নির্দিষ্ট দামে পণ্য সরবরাহ করত তাহলে মানুষকে এতটা দুর্গতিতে পড়তে হতো না। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তে থাকায় সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। রোজগার বাড়েনি তাদের। যা ছিল তাই আছে। সেখানে বাড়তি কিছু যোগ হয়নি। আগে বরং ঘরোয়া ফসল, হাঁস-মুরগি পালন ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থনৈতিক-গৃহস্থ যোগান ছিল প্রায় প্রত্যেকের ঘরে ঘরে। নানা কারণে এসবও এখন বাধাগ্রস্ত। ফলে বিত্তহীন লোকেরা পড়ছে বিপাকে। তাদের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নির্বাহে চাপ বাড়ছে।
খরা হতে পারে, বন্যা ভূমিকম্প-ঝড়-সাইক্লোন ইত্যাদি হতে পারে অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিপর্যয় যে কোনো সময় ঘটতে পারে। এজন্য দেশের সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হয়। সুদিনে সঞ্চয় করে রাখলে পরে পস্তাতে হয় নাÑ এ রকম নীতিবাক্য প্রাইমারি স্তরের শিক্ষা। সরকার এসব ব্যাপারে নজর দেয় না কেন? আপদকালীন ঘাটতি মেটাতে এমন কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া উচিত নয়, যাতে সাধারণ মানুষকে দুর্গতিতে পড়তে না হয়। খরা হয়েছে, বন্যা হয়েছে, অতএব পণ্যের দাম বাড়বে, বললেই সব হয়ে গেল? কৃষকদের যাতে ভালো ফলন হয়, তারা তাদের ফসল যাতে ভালমতো বাজারজাত করতে পারে, দুটো পয়সা লাভ করে, বাড়তি ফসল সঠিক উপায়ে গুদামজাত করার ব্যবস্থা নেয়, এসব ব্যাপারে কতটা সদর্থক ভূমিকা সরকারের থাকার কথা ছিল এবং সরকার বাস্তবক্ষেত্রে কতটা নেয় তা ভেবে দেখার দরকার রয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
রান্নার গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেলের দাম পর্যায়ক্রমে অনেক বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই যাত্রী ও পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে অনেক। বেড়েছে চাল, আটা, ময়দা, চিনি, ডাল, মসলাপাতি, সয়াবিনসহ অন্যান্য ভোজ্য তেলের দাম। বর্তমানে মসুর ডাল ১৪০ টাকা, চাল মাঝারি ধরনের ৬০ থেকে ৭০ টাকা, আটা ৫০ টাকা, ময়দা ৭০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, সোয়াবিন তেল ১ লিটার ২০০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, আদা ১৫০ টাকা, হলুদ ৪৫০ টাকা, মরিচ ৪০০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা কেজি।
সবজি বাজারের অবস্থা আরো খারাপ। প্রতি কেজি সবজির দাম বেড়েছিল করোনা শুরুর আগেই প্রায় দ্বিগুণ। মুরগীর মাংস, খাসির মাংস, গরুর মাংস ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মাছের অবস্থাও তাই। এ হলো বাজারের সর্বশেষ অবস্থা।
সাধারণ মানুষ খাবে কী? অসুস্থ হলে চিকিৎসাই করাবে কীভাবে? দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের দুঃখ-কষ্টের সত্যই কোনোও শেষ নেই। ঘরে ঘরে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র, এ এক অশেষ যন্ত্রণা।
যারা অতি দীনদরিদ্র কায়ক্লেশে দিন কাটাত, মূল্যবৃদ্ধির চাপে তাদের এখন অনাহারে বা অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর আজ আর কেউ নেই। তাদের জন্য আন্দোলন করার কেউ নেই। গ্রামের গরিব মানুষ প্রকৃত অর্থেই আজ অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত। জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারের যেমন মাথাব্যথা নেই, তেমনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না সরকারের শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও। তারাও নীরব। কোনো কোনো দল বা প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে কথা বললেও কাজ হচ্ছে না।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামের সাঁড়াশি চাপে বিত্তহীন পরিবারগুলোতে বাড়ছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। উপযুক্ত বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে মেয়েদের। বাড়ছে শিশু-প্রসূতি মৃত্যু। শিক্ষা, পুষ্টি ইত্যাদি সব কিছু থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে এক বিরাট অংশের মানুষ, যারা তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক এবারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বিগত দিনের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অবশ্য করোনা ও যুদ্ধ যে তার একটি বিশেষ কারণ তা স্বীকার করতেই হয়। চরম দুর্দশাগ্রস্ত দেশবাসী আজ আর এটাকে নিছক সন্দেহ নয়, একবোরে চরম সত্য হিসাবেই ধরে নিয়েছে। ভাব দেখে মনে হয়, সরকারের এই পিঠে কূলা আর কানে তুলা দেয়া অবস্থা। আর ওদিকে মজুতদার-মুনাফাখোরেরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গোগ্রাসে মুনাফা গিলছে। যদি তাই না হতো তবে বর্তমান অসহনীয় দ্রব্যমূল্য রোধ করার জন্য কঠোরতম আইনী ব্যবস্থা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা না করে শুধু মুখে বড় বড় কথা বলে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার প্রয়াস চালানো হতো না। অন্তত সাধারণ মানুষ তাই মনে করে। অত্যাবশ্যক সামগ্রীর এ লাগামছাড়া মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের নির্বিকার মনোভাব দেখে এ দেশের সাধারণ মানুষ সত্যিই হতাশ।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।