Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত, শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটে পাঠদান ব্যাহত

টাবরা-নবকৃষ্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

আতিয়ার রহমান, নড়াইল থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জেলা শহর থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে বিলাঞ্চলের পাস দিয়ে টাবরা গ্রাম। পাশে ডুমদি, নন্দখোল, আগ্রাহাটি গ্রাম। অনেক দূর থেকে যেন মনে হয় বিলাঞ্চলের ওপর গ্রামগুলি ভেসে আছে। এই ডুমদি গ্রামে লোককবি কবিয়াল বাউল বিজয় সরকারের জন্ম। পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী। বিজয় সরকার নিজ নিষ্ঠা, পরিশ্রম, অর্থ ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে পিতার নামে ১৯৪২ সালে “টাবরা নবকৃষ্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়” নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তর সময় পর্যন্ত বিদ্যালয়টি পূর্ণোদ্যমে চলমান থাকার এক পর্যায়ে ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি সরকারের রিকগ্নেশন পায়। বিদ্যালয়টি হিন্দু জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় স্থাপিত হলেও এখানে মুসলমানসহ বর্তমানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বাস। একজন কমিটির সদস্য বলেন, বিদ্যালয়ে এক সময়ে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর কলকাকলিতে মুখরিত থাকলেও বিদ্যালয় থেকে অদূরে চারপাশে বেশ কয়েকটি জনপদে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টাবরা নবকৃষ্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ছাত্রছাত্রী সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রা ভেদ করতে পারছে না। বিদ্যালয়ের গমনাগমনের রাস্তাঘাটও ছাত্রছাত্রীদের চলাচলের উপযোগী নয়। এটাও শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণ। প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৭০ জন। তার মধ্যে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। পাঠকক্ষ ব্যবহার উপযোগী তিনটি, পরিত্যক্ত ৩টি। এ বছর জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ২৪ জন। এসএসসি পরীক্ষার্থী ২৯ জন। বিদ্যালয়ে কখনো বাণিজ্য বিভাগ খোলা হয়নি। শিক্ষক সংখ্যা ১২ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা ৫ জন। আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক থাকলেও কম্পিউটার ও কম্পিউটার ল্যাব নেই। বিশুদ্ধ পানীয় ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি দেওয়াল নেই। সব মিলে নিতান্ত যতœ-আত্তির অভাবে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে অন্তরায় হয়ে আছে। অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ জানান, ১৯৯৫ সালে এখানে তিনকক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করে সরকারের ফ্যাসিলিটি বিভাগ। ১০বছর পার না হতেই তা ধ্বসে পড়ছে। ২০১৪ সালে ভবনটি সরকারি মহল থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে করে ভৌত অবকাঠামোগত সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। বিদ্যালয়ের স্থানীয় হিতাকাক্সক্ষী কয়েকজন জানান, এই উন্নত শিক্ষা ও প্রযুক্তির যুগেও কর্তৃপক্ষের নিদারুন উপ্ক্ষো ও অবহেলার কারণে গ্রাম বাংলার এই কোণের সংস্কৃতি ও লোকচারী ব্যক্তিত্ব বিজয় সরকারের আরাধনার ধন সুরক্ষার জন্য এই বিদ্যালয়টির দিকে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের আশু দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, টাবরা নবকৃষ্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা হলো ক্লাসরুম সংকট। এছাড়া রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। নড়াইল জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, কবিয়াল বিজয় সরকারের প্রতিষ্ঠিত টাবরা গ্রামের এই স্কুলটির অবকাঠামো উন্নয়নসহ সংকট সমাধানের জন্য এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সম্ভাব্য চেষ্টা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যালয়


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ