Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রথম জয়ে বাংলাদেশের টানা ৯

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

টেস্ট সিরিজের পর বৃষ্টি বিঘিœত টি-টোয়েন্টি সিরিজও হাতছাড়া বাজে ক্রিকেটের মহড়ায়। তবে প্রিয় সংস্করণে ফিরতেই স্বরূপে দেখা গেল বাংলাদেশকে। গায়ানায় অনেকটা নিজেদের দেশের মতো উইকেট পেয়ে ব্যাটে-বলে আলো ছড়াল তামিম ইকবালের দল। শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ বোলিংয়ে লক্ষ্যটা ছিল নগালেই। পাল্টা আক্রমণে অধিনায়ক সুর বেঁধে দেওয়ার পর বাকিটা সারলেন সতীর্থরা। এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বৃষ্টি বিঘিœত প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ, এগিয়ে গেছে তিন ম্যাচের সিরিজে। বৃষ্টির জন্য ৪১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ৯ উইকেটে কেবল ১৪৯ রান করেতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সফরকারীরা সেই রান পেরিয়ে যায় ৫৫ বল বাকি থাকতেই। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি তাদের টানা নবম জয়।
টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে ২-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। এই সংস্করণে একটি ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। সফরে একে এমন পারফরম্যান্স, তার উপর নেই সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও ইয়াসির আলি চৌধুরিরা। তবুও যেন এগিয়ে থেকেই ওয়ানডে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। এই সংস্করণে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারেনি কোনো ম্যাচ। মাঠে নামে টানা আট জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ম্যাচের ফলে রয়েছে তারই স্পষ্ট ছাপ।
মাঠ ভেজা থাকায় খেলা শুরু হয় সোয়া দুই ঘণ্টা দেরিতে। তবে ম্যাচের লাগাম মুঠোয় নিতে বাংলাদেশ খুব একটা দেরি করেনি। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গড়তে পারেনি একটিও পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি, কোনো ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারেননি চল্লিশ। শামার ব্রæকস ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কোনো ব্যাটসম্যান যেতে পারেননি বিশ পর্যন্ত। অনেকটা সময় ক্রিজে থাকা এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান করেন ৩৩। স্বাগতিকরা নিজেদের সেরা জুটি পায় দশম উইকেটে। ৩৪তম ওভারে নবম উইকেট হারানোর পর বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন অ্যান্ডারসন ফিলিপ ও জেডেন সিলস। ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের নিদারুণ ব্যর্থতায় গড়েন ৩৯ রানের জুটি। উইকেট বেশ মন্থর। বল গ্রিপ করেছে উইকেটে, ব্যাটে এসেছে ধীরে। বাউন্সও ছিল একটু অসমান। তা কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ৩৪ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ওয়ানডেতে এটাই তার সেরা বোলিং। মিরাজ ৩ উইকেট নেন ৩৬ রানে। ঝড় তোলার আগেই তিন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান কাইল মেয়ার্স, নিকোলাস পুরান ও রভম্যান পাওয়েলকে বিদায় করা এই অফ স্পিনার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। অভিষেকে কোনো উইকেট না পেলেও বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ৮ ওভারে দেন কেবল ১৬ রান। টি-টোয়েন্টিতে খরুচে বোলিং করা গতিময় পেসার তাসিকন আহমেদের ৮ ওভারে থেকে আসে মোটে ২৫ রান।
বোলারদের নৈপুণ্যে লক্ষ্যটা ছোটই ছিল। তবে ‘জেতা’ ম্যাচ হেরে যাওয়ার নজির তো আর কম নেই বাংলাদেশের। তবে এই ম্যাচে নিজেদের কাজটুকু ভালোভাবেই সারেন ব্যাটসম্যানরা। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সংস্করণে টানা হারের পর পাওয়া এই সাফল্যে তৃপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে শেষদিকে ফিল্ডাররা ক্যাচ মিসের মহড়া দেওয়ায় একইসঙ্গে আফসোসও ঝরল টাইগার অধিনায়কের কণ্ঠ থেকে। জানালেন, ড্রেসিং রুমে ইতিবাচক বার্তা আসবে এই জয় থেকে, ‘সিরিজ শুরুর আগেও বলেছিলাম যে হারতে কখনোই ভালো লাগে না। জিতলে আবহ ভালো থাকে, ড্রেসিং রুমের অবস্থা ভালো থাকে। সেদিক থেকে ভালো লাগছে প্রথম ম্যাচ জিতে।’
সিরিজে ভালো শুরুকে গুরুত্বপ‚র্ণ মানছেন তিনি, ‘টিম মিটিংয়েও আমি একটা কথা বলেছি যে আমি ওয়ানডে অধিনায়ক বলেই যে সব বদলে যাবে তা না। টি-টোয়েন্টি ও টেস্টে যারা অধিনায়ক ছিল, খেলোয়াড় যারা খেলেছে, সবাই তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে ভালো করতে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভালো করতে পারিনি আমরা। এই ম্যাচে আমরা ভালো শুরু করতে পেরেছি। এটা গুরুত্বপ‚র্ণ।’ বোলারদের প্রশংসায় মেতেছেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম, ‘বোলাররা যেভাবে বল করেছে...কখনও কখনও এই ধরনের উইকেটে, যেখানে অনেক সহায়তা আছে, বোলাররা বেশি লোভী হয়ে উঠতে পারে। তবে আমরা তা হইনি। এটা জরুরি ব্যাপার ছিল। মিরাজ ও পেসাররা দারুণ বল করেছে। যদিও বল অনেক টার্ন করছিল উইকেটে, এখানেই আমাদের একজন পেসার ৪ উইকেট নিয়েছে। সে ম‚লত আমাদের ম্যাচে ফিরিয়েছে। সব মিলিয়ে তাই খুব তৃপ্তিদায়ক।’
তবে ফিল্ডিংটা হয়েছে যাচ্ছেতাই। চারটি সহজ ক্যাচ ছাড়ায় তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অধিনায়ক, ‘ভালো দলের বিপক্ষে এই ক্যাচগুলো ছাড়ার ম‚ল্য অনেক বড় হতে পারে। অধিনায়ক হওয়ার পর থেকেই বলছি, এটা নিয়ে আমি চিন্তিত। এটা বন্ধ করতে হবে, কমে আসতে হবে। ক্যাচগুলো ধরলে আমরা হয়তো এই ম্যাচে ১১৫ রান তাড়া করতাম। সমস্যা কোথায় খুঁজে বের করতে হবে।’ সেই সুযোগ অবশ্য খুব তাড়াতাড়িই পাচ্ছে তামিমের দল। একই ভেন্যুতে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যে হবে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। এই ম্যাচটি জিতলেই অন্তত একটি সিরিজ জয়ের সান্ত¡না নিয়ে দেশে ফিরতে পারবে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ