Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকের দংশনে যুবসমাজ

| প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

একটি সুন্দর বাগানকে বিনষ্ট করার জন্য যেমনি একটি হুতোম পেঁচাই যথেষ্ট তেমনি যুব-তরুণ সমাজকে বিনষ্ট করার জন্য মাদকই যথেষ্ট। মাদক আগ্রাসন যুবসমাজকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে সে প্রশ্ন এখন জনমনে। মাদকদ্রব্য এক ভয়াবহ সমস্যার কারণে পরিণত হয়েছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে আজ মাদকের ভয়াল বিস্তার। সর্বনাশা মাদকদ্রব্য আমাদের গোটা সমাজকে গ্রাস করে চলেছে। এর শিকার যুব-তরুণ সমাজ। মাদক নিয়ে অতীতে অনেক লেখালেখি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। আমাদের দেশে সীমান্তের মাত্র একটি জেলার ৫০ স্থান দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ করছে। প্রতিদিন সেখানে মাদক ধরাও পড়ছে, অনেক মাদক কারবারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছেন। মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযানের সময় ২২ জন মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন সেই জেলায়। এর পরও সেখানে মাদকের কারবার রমরমা। কুমিল্লা জেলার মাদক পরিস্থিতি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। সম্প্রতি জেলায় এক সাংবাদিককে মাদক কারবারিরা ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে ওই সন্দেহভাজন মাদক কারবারি প্রধান আসামি প্রাণ হারায়। অন্য আরেকটি প্রতিবেদনে জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্তে ১৪০ টি ইয়াবা কারখানা রয়েছে। এগুলো থেকে কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে বানের মতো মাদক প্রবেশ করছে। বাংলাদেশে মাদকের বিস্তৃতি কোন পর্যায়ে রয়েছে, এ দু’টি জেলার উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারছি।

জাতির দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যত এত কঠোরতার পরও কেন মাদকের সয়লাবে লাগাম টানা যাচ্ছে না? কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটির সীমান্ত রয়েছে ভারতের সাথে। এগুলো মাদকের জনজমাট মোকাম। জানা যায়, মাদক নিয়ন্ত্রণে সেখানে সক্রিয় রয়েছে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর স্বয়ং। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে ওইসব এলাকা থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক জব্দ করে। বিজিবি গত বছর ১০ মাসে ৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের মাদক জব্দ করে ধ্বংস করেছে। চলতি বছর মাদকের বিরুদ্ধে আরো বেশি অভিযান চলছে। মাদক আটকও হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি।

২০১৮ সালে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে মাদক কারবারি বলে অনেকে প্রাণ হারালেও মাদক কারবারিরা এখনো আগের চেয়ে বেপরোয়া। কেউ এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে তার ওপর তারা চড়াও হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও মাঝে মধ্যে ছাড় পান না যার সর্বশেষ নজির সাংবাদিক হত্যা। এ ধরনের পরিস্থিতিকেই সম্ভবত ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ বলা হয়। তাহলে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এত কড়াকড়ি অবস্থান গ্রহণের অর্থ কী দাঁড়ায়? দিনশেষে মাদক কারবারিরাই যদি সবার চেয়ে শক্তিশালী প্রমাণিত হয়। আমাদরে দেশে মাদকের ব্যাপক বিস্তারের নেপথ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক পক্ষই জড়িত। তারই প্রমাণ মিলছে এতে। মাদককে নির্মূল করতে হলে রাষ্ট্রের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। না হলে মাঠে কিছু চুনোপুঁটিকে সবসময় বলির পাঁঠা বানানো হতেই থাকবে। অন্যদিকে, মাদকের মূল কারবারিরা থাকবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর দেশের যুবসমাজ মাদকের নীল দংশনে শেষ হয়ে যেতেই থাকবে।

কক্সবাজার রুটটি দিয়ে মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে ক্ষতিকর মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে সীমান্তে ইয়াবা কারখানা রয়েছে। তারা সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে জানানোর পরও দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষ আমলে নিচ্ছে না। মিয়ানমার সরকার উল্টো বাংলাদেশ সীমান্তে মাদকের কারখানা থাকার তথ্য দিচ্ছে। যদিও বরাবরই তাদের জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর মাদক বাণিজ্যের শিকার। মিয়ানমার তাদের অন্যায় অবস্থান থেকে সরবে না। তবে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট বাংলাদেশ কেন নির্মূল করতে পারে না সেটা এক বিস্ময়। টেকনাফে মাদক চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে একজন ওসি প্রদীপ কুমারই কয়েক শ’ বন্দুকযুদ্ধ করেছেন। তিনি একা নন, অন্যরা মাদক দমনের নামে এমন অভিযান চালিয়েছেন। তাহলে কক্সবাজার দিয়ে মাদকের কারবার কেন কমছে না? বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির মূল জায়গায় কোথাও গলদ রয়েছে। এখানে সব কিছু গলার জোরে চলে। কাজের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যায় না।

মাদক থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে প্রকৃতপক্ষে কাজ করতে হবে। মাদকের কারবারিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রেখে মাদক নির্মূল করতে যাওয়া একটা প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু নয়। সেই কারণেই মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান আমাদের দেশে মাদক নির্মূল কোনো ভূমিকা রাখছে না। দেশের যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে হলে সরকারকে তার নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে।

মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট।
মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকের দংশনে যুবসমাজ
আরও পড়ুন