পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সরকারের এই দাবি ও বাস্তবতার মধ্যে কোনো মিল নেই। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্যশস্য আমদানির প্রশ্ন ওঠে না। দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরই লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় এবার ৪ দশমিক শূন্য ৯ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এজন্য ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়েছে। ইংরেজি দৈনিক নিউএজ’র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত দু’ বছরে ২৩ দশমিক ৪৮ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর (২২) আমদানি করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ লাখ টন এবং তার আগের বছর (২১) আমদানি করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫৯ লাখ টন। রিপোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে গত ছয় বছরে ২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চাল আমদানি করা হয়েছে। চাল আমদানির এ তথ্য প্রমাণ করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দাবি সঠিক নয়। এ ব্যাপারে কোথাও না কোথাও ফাঁক বা ফাঁকি রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, ২০২১ সালে দেশে ৩ দশমিক ৮৭ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। পক্ষান্তরে কৃষি মার্কেটিং বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ৩ দশমিক ৪৬ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের তথ্যে অমিল থাকলেও এটা সত্য, বার্ষিক চাহিদার তুলনায় চাল উৎপাদন বেশি হয়েছে। কৃষি মার্কেটিং বিভাগের হিসাবে, চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ দশমিক ৫ কোটি টন। এই হিসাবে চালের কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও প্রতি বছর চাল আমদানি করতে হচ্ছে কেন? সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। উৎপাদন মওসুমে এভাবে চালের দাম বৃদ্ধি সচরাচর দেখা যায় না। কোনোভাবেই চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হওয়ায় ৪ দশমিক শূন্য ৯ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে।
পরিসংখ্যানের মধ্যে কোনো ফাঁক-ফাঁকি না থাকলে খাদ্য নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা হওয়ার কথা নয়। এর আগে কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন, পরিসংখ্যান সঠিক নয়। এটা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। পরিসংখ্যান সঠিক না হলে কোনো ক্ষেত্রেই পরিকল্পনা করে কিংবা যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান তৈরি করেন। তাদের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত হয়। একারণে পরিসংখ্যান সঠিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিদ্যমান পরিসংখ্যানে তো দেখা যাচ্ছে, চাহিদার তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বেশি। সেক্ষেত্রে খাদ্যের সংকট বা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কেন ঘটছে? এ অবস্থায় বলতেই হয়, হয় চাহিদার পরিসংখ্যানে ত্রুটিবিচ্যুতি আছে, আর না হয় উৎপাদনের পরিসংখ্যানে আছে। দেশের লোকসংখ্যা কত, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলে তাদের সকলের জন্য খাদ্যের চাহিদা কত, সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। কাজেই জনসংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান অবশ্যই থাকতে হবে। প্রকৃত লোকসংখ্যার স্থলে তা কমিয়ে দেখানো কোনোভাবেই সঙ্গত হতে পারে না। আবার সরকারের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দাবির সমর্থনে খাদ্য উৎপাদন বেশি করে দেখানোও সমর্থনীয় হতে পারে না। সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীরা লাগাতার বলে যাচ্ছেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, দেশ খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রতি বছর যে লাখ লাখ টন খাদ্য আমদানি হচ্ছে, সেটাও তাদের অজানা নয়। এই বৈপরীত্যের চর্চা বছরের পর বছর ধরে করা হচ্ছে কি রাজনৈতিক স্বার্থে? সরকারের নাহক কৃতিত্ব জাহির করার কিছু নেই এবং সেটা করাও উচিত নয়। খাদ্যের ক্ষেত্রে যেমন তেমনি আরো দু’কয়েকটি ক্ষেত্রে দেশ স্বয়ম্ভর হয়েছে বলে দাবি করা হয়। যেমন, মাছের ক্ষেত্রে বলা হয়, মাছ উৎপাদনে দেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাস্তবে প্রতি বছর মিয়ানমার, ভারত, ওমান ও থাইল্যান্ড থেকে মাছ আমদানি করা হয়। সরকারের দাবি ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকা দরকার এজন্য যে, এর উপর দেশ ও সরকারের ভাবমর্যাদা অনেকাংশে নির্ভর করে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কাউকে বিভ্রান্ত করা কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কোনো বিবেচনাতেই কাম্য হতে পারে না।
দেশ এখন একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একে তো করোনাকাল, তার ওপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্বের সকল দেশের অর্থনীতি একটা বড় ধরনের সংকট ও মন্দার সম্মুখীন। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। এতদিন একরকম ভালোই চলছিল। এখন দ্রুত সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। রেমিট্যান্সে নিম্নপ্রবাহ, গার্মেন্ট রফতানি কমার দিকে। রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক নয়। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। সার্বিক মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমবর্ধমান। রফতানি বাড়লেও আমদানিও বাড়ছে। বাণিজ্য ঘাটতি ব্যাপক। বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি আশংকাজনক। সরকার এ প্রেক্ষিতে কৃচ্ছ্রতার পথ অবলম্বন করেছে। এছাড়া উপায়ও নেই। বিরাজমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশংকা প্রকাশ করেছে। আমাদের দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই বলে দাবি করা হলেও চাল-আটার দাম বাড়ছেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমদানির ব্যবস্থা নেয়া হলেও খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য জরুরি। দ্বিতীয়ত, পরিসংখ্যানগত যে ত্রুটি-বিচ্যুতি, তা যে কোনো মূল্যে দূর করতে হবে। ভুল তথ্য, ভুল পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে চলতে গেলে যে কোনো সময় পদস্খলন হতে পারে। আর একবার পদস্খলন হলে উঠে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।