পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে গরু, মহিষ আসতে শুরু করেছে। ক্রেতার আনাগোনা বাড়ছে। তবে এখনও জমেনি কেনাকাটা। ক্রেতারা হাটে হাটে ঘুরে কোরবানির পশু দেখছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গত তিন বছরের মত এবারও স্থানীয় গরুতেই চাহিদা পূরণ হবে। এ অঞ্চলের আট হাজার ১৭১টি খামার এবং গৃহস্থের বাড়িতে সযত্নে লালিত-পালিত গরুর সরবরাহ রয়েছে হাটগুলোতে। ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। অন্যসময় মিয়ানমার থেকে কিছু গরু আসলেও এবার তাও বন্ধ। এর ফলে দেশের চাষি ও খামারিরা খুশি। তারা ন্যায্য দাম পাওয়ার আশায় বাজারে বিপুল গরু-ছাগলের সমাবেশ ঘটিয়েছেন।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাশাপাশি প্রতিবারের মতো এবারও কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু আসছে চট্টগ্রামের হাটগুলোতে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চল থেকেও এবার কোরবানির পশু আসছে। মহানগরীর স্থায়ী, অস্থায়ীসহ ছয়টি হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া জেলার ১৫টি উপজেলায় বসেছে আরও দুই শতাধিক কোরবানি পশুর হাট। অনলাইনেও পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে।
সল্টগোলা গরু-ছাগলের হাট ও সাগরিকা গরুর বাজারসহ মহানগরীর কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে গরু, ছাগল, মহিষ আসছে। ইজারাদাররা যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা গরু-ছাগল এসব হাটে খুঁটিতে বাঁধা হচ্ছে। খামারি, বেপারি এবং গৃহস্থরা ব্যস্ত গরু, মহিষের পরিচর্যায়। হাটের বাইরে ট্রাক থেকে নামছে গরু। অনেকে সেখানেই গরুকে গোসল দিচ্ছেন। এরপর গরু বাঁধা হচ্ছে হাটের নির্ধারিত স্থানে খুঁটির সাথে। সেখানেই চলছে ঘাস, ভুষি খাওয়ানোর কাজ। বাজারে এ অঞ্চলের পাহাড়, টিলা এবং গৃহস্থের বাড়িতে সযত্নে লালিত-পালিত গরুর সংখ্যা বেশি। আছে খামারে বড় হওয়া হৃষ্টপুষ্ট গরুও। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় আগের মত কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাকৃতিকভাবেই মোটাতাজা করা গরু আসছে বাজারগুলোতে।
কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতার আগমনও বাড়ছে। ক্রেতারা ঘুরেফিরে দেখছেন, দাম যাচাই করছেন। বিক্রেতা এবং বেপারিরাও চড়া দাম হাঁকছেন। কোরবানির আরও পাঁচ দিন বাকি। এ কারণে ক্রেতারাও দেখে-শুনে, ভেবে-চিন্তে কোরবানির পশু কিনছেন। তাছাড়া মহানগরীতে গরু রাখাও একটা ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার। সব মিলিয়ে কেনাকাটা এখনও জমেনি। বিক্রেতাদের আশা আর কয়েকদিনের মধ্যে জমজমাট হয়ে উঠবে কোরবানি পশুর হাট। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে।
মহানগরীর তিনটি স্থায়ী পশুর হাট- বিবিরহাট, সাগরিকা গরুর বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাটের পাশাপাশি সল্টগোলা ঈশান মিস্ত্রির হাট, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন খোলা মাঠ, পতেঙ্গা খেজুরতলার আউটার রিং রোড এলাকা, কর্ণফুলী এলাকায় বসেছে অস্থায়ী গরুর বাজার। এছাড়া মহানগরীর আশপাশ এবং উপজেলা সদরগুলোতে আরও দুই শতাধিক গরুর বাজার বসেছে। স্থায়ী-অস্থায়ী গরুর বাজারের পাশাপাশি খামারগুলোতেও কেনাকাটা জমে উঠেছে। ক্রেতাদের অনেকে খামার থেকে গরু কিনে নিয়ে আসছেন। অনলাইনেও পছন্দ করে খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনে নিচ্ছেন কোরবানি দাতারা।
খামারের পাশাপাশি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষি ও গৃহস্থের বাড়িতে কোরবানি ঈদকে টার্গেট করে লালিত-পালিত গরুরও চাহিদা খুব বেশি। ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় দেশি গরুর চাহিদা বেড়ে যায়। গত কয়েক বছর কৃষক ও খামারিরা ভালো দামও পেয়েছেন। আর তাতে উৎসাহিত হয়ে অনেকে গরু লালন-পালন করছেন। দেশ যেমন পশু সম্পদে স্বাবলম্বী হচ্ছে তেমনি গ্রামীণ জনপদে প্রান্তিক চাষিরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এর ফলে গ্রামে গরু লালন-পালন বেড়েছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু আসছে। কোরবানি দাতাদের অনেকে আবার ওইসব এলাকায় গিয়ে চাষি ও খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনে আনছেন। গরুর পাশাপাশি এবার পশুর হাটে মহিষের সরবরাহও চোখে পড়ার মত। ছাগলের সরবরাহও পর্যাপ্ত।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে জানান, চট্টগ্রামে এবার কোরবানি পশুর চাহিদা আট লাখ ২১ হাজার। চাহিদার প্রায় পুরোটাই স্থানীয়ভাবে সরবরাহ দেয়া যাবে। তাছাড়া প্রতিবারের মত এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রামে কোরবানির পশু আসছে। তবে ভারত এবং মিয়ানমার থেকে গরু আসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রামে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সাত লাখ ৯১ হাজার পশু। এর মধ্যে গরু পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৮০৩টি। মহিষ ৬৬ হাজার ২৩৭টি, ছাগল ও ভেড়া এক লাখ ৮৯ হাজার ৩৬২টি। অন্যান্য জেলা থেকেও পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু, মহিষ আসছে।
চট্টগ্রাম জেলায় প্রাণি সম্পদ বিভাগের নিবন্ধিত গরুর খামার রয়েছে আট হাজার ১৭১টি। এর মধ্যে জেলার মীরসরাই, কর্ণফুলী, পটিয়া, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার খামারগুলোতে কোরবানির জন্য বেশি পশু লালন-পালন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলাতে বড় খামারের বাইরে ব্যক্তি উদ্যোগেও গরু, ছাগল লালন-পালন করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
এদিকে কোরবানির পশুরহাটগুলোতে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা হাট এলাকায় টহল জোরদার করেছে। আছে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক। ইজারাদারদের উদ্যোগে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহি যানবাহন না থামাতে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান নগর ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জাল টাকা শনাক্ত, অজ্ঞান ও মলম পার্টির অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা হাটগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রেতা আকর্ষণে পশুর হাটগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিলভাবে, চলছে মাইকিং।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।