পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যা আবারও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানি কিছুটা কমায় যারা বাড়ি ফিরেছিলেন তারা আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। সিলেট সুনামগঞ্জের লাখ লাখ মানুষ গত বৃহস্পতিবার থেকে ফের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। ভারি বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা ঢলে আবার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। সারি-গোয়াইনঘাট সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনিতেই বন্যাকবলিত সিলেট। কুশিয়ারা অববাহিকার তীরবর্তী ৬ উপজেলার বাড়িঘরে থৈ থৈ পানি। পঞ্চাশ হাজারের অধিক মানুষ বসবাস করছেন আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। পানি কমতে শুরু করায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন ঈদের আগে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু এখন তাদের সেই আশায়ও গুড়েবালি। সিলেট সদরসহ সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটের মানুষের ঈদ হয়তো আশ্রয় কেন্দ্রেই কাটবে। সিলেটে পানিবন্দি ৩০ লাখ মানুষ। ৬১৪টি কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া ১৩ উপজেলায় ৪০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ পরিবার।
এদিকে পদ্মা-যমুনায় বাড়ছে পানি। ফলে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ও ভারতের ঢলে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। আবারও পানি বাড়ায় অভ্যন্তরীর্ণ নদ-নদী ও খাল-বিলেও পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের নিন্মাঞ্চল নিমজ্জিত হচ্ছে। গতকাল শহরের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। এছাড়াও কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৭৬ মিটার। বন্যায় কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে ১৩৪ কোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২ জেলায় ২৪ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ১৬ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, স্মরণকালের ভয়াল বন্যায় সিলেটে পানিবন্দী হয়ে পড়ে ৩০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৬১৪টি কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন আড়াই লক্ষাধিক। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ পরিবার। এছাড়া ১৩ উপজেলায় ৪০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গত বুধবার সিলেট জেলা প্রশাসন এ তথ্য জানায়। এসব ক্ষতিগ্রস্থদের ঘরবাড়ি নির্মাণ বা মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তা বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে জানানো হয়েছে। এদিকে, চলতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের জন্য এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দাবি করেছে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। এছাড়া গত বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটজুড়ে। বৃষ্টি আরও তিন দিন থাকতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এদিকে এই বৃষ্টির কারণে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া সুরমার কানাইঘাট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীতে এর প্রভাব না পড়লেও পানি বেড়েছে সারি নদী ও ধলাই নদের। তবে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও এর ফলে বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ভেসে যায় সিলেট সিটি করপোরেশন, ৫টি পৌরসভা এবং ১৩টি উপজেলা। এরমধ্যে জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষে পানিবন্দী হয়ে পড়েন। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও এর ফলে বন্যার কোনো পূর্বাভাস আপাতত নেই। চলমান আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়, সামনে শ্রাবণ মাস। এই সময়ের মধ্যে আরও দুই একটি বন্যা দেখা দেয়। এ জন্য পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে জুলাইয়ের শেষের দিকে একটি বন্যা হতেও পারে। এরপরও ১০ দিন আগে আবহাওয়া পূর্বাভাস জানা যাবে। বর্তমানে ভারতের দিকে বৃষ্টি হলেও আগের তুলনায় কম বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে পানি উঠানামা করছে। নদীর পানি কিছুটা কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে গতকাল সকালে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার। গত বৃহ¯পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ২১ মিলিমিটার। এর আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল ১৮৫ মিলিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলেই জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা বাড়বে। তবে সেটার পরিমাণ বেশি হবে না। আগের মতো পরিস্থিতি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই। জেলায় বানভাসী অনেকেই এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়ে গেছেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে তাবু টাঙিয়ে শত শত পরিবার দিন যাপন করছেন। তাদের অনেকেই বাড়িঘর হারিয়েছেন। অন্যদের ঘর থেকে নামছে না পানি। বন্যা পরিস্থিতি উত্তরণ না হওয়ায় ৪ টি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাজীর পয়েন্ট, বিলপাড়া, নবীনগর, পশ্চিম নতুনপাড়া এলাকার যেসব স্থানে গত বৃহ¯পতিবার নতুন করে পানি উঠে, রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় স্থান থেকে পানি নেমে যায় ।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নদ-নদীর পানি কমলেও এখনও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম সদর ও উলিপুর উপজেলার অন্তত ৬০টি চর গ্রাম ও নদী সংলগ্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। প্লাবিত হয়েছে বিস্তৃর্ণ এলাকার পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও সবজিসহ ফসলের ক্ষেত। বিশুদ্ধ পানি ও গবাদী পশুর খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। যাতায়াতের রাস্তা ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে চরবাসীর। জেলার পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ইনকিলাবকে জানান, ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টির ফলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বর্তমানে বড় কোনো ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন নাসিরনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফ কর্তৃক আয়োজিত ও বর্তমান গদ্দিনিশীন পীর আলহাজ্ব মাও. মুফতী শাহ্ সুফী সৈয়দ ছালেহ আহমাদ আল হোসাইনীর পরামর্শে ও পীরজাদা মাও. মুফতী সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল হোসাইনীর পরিচালনায় সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩৫ হাজার বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কালে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে ইসলামী ছাত্র মহলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব মাও. সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক আল হোসাইনী, সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমাদ শিবলী, সৈয়দ আশরাফ শামীম আল হোসাইনী, পীরজাদা সৈয়দ বাকের মোস্তাফা আল হোসাইনী, সৈয়দ সালমান ফার্সিসহ প্রমুখ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।