Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই জেলায় ক্ষতি দুই হাজার কোটি টাকা

সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যার চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

বন্যায় সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা (১৯২৭ কোটি) টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে বন্যায় ১৮০০ কোটি টাকা ক্ষতি এবং কুড়িগ্রাম জেলায় ১২৭ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকবলিত হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর প্রাথমিকভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়েছে দুই জেলা প্রশাসন।
সুনামগঞ্জ : সরকারি তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭টি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো জেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাণ তৎপরতা-সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে বন্যা পুরোপুরি কমে গেলে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলায় ২৫ হাজার ২০৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১ হাজার ৬৪২টি গবাদিপশু মারা গেছে। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৬৯টি ও ভেড়া ৫১৪টি। এ ছাড়া বন্যায় ২৮ হাজার ৮০৫টি মুরগি ও ৯৭ হাজার ৮৩১টি হাঁস মারা গেছে। বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত ৩৮৪ কিলোমিটার সড়ক, ১৫৫টি সেতু-কালভার্টের সংযোগ সড়ক এবং ৪টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো বিভিন্ন স্থানে পানি আছে। তাই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এলজিইডি ও সওজের দাবি অনুযায়ী, মোট ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সড়ক, সেতু, কালভার্ট ও অ্যাপ্রোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এলজিইডি সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানান, বন্যায় ৪৫৭১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, সওজের আওতাধীন ৮টি সড়কের ৩৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাদের দুজনেই জানান পানি পুরোপুরি নামলে ক্ষতি আরও বাড়বে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের বাড়িঘর, সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো অনেক জায়গায় পানি থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে দেওয়া যাচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই অর্থসহায়তা দেওয়া হবে, যাতে তারা নগদ অর্থ দিয়ে বাড়িঘর মেরামত ও পুনর্বাসিত হতে পারেন।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকার চার শতাধিক চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাট, ধান ও শাক-সবজিসহ জেগে ওঠেছে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। কুড়িগ্রামে বন্যায় ১২৭ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষিবিভাগ এ তথ্য অনুযায়ী চলতি বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল বিনষ্ট হওয়ায় কৃষিতে ১২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে ৮০ হাজার ৩৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি খরিপ মৌসুমে ৩৪ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছিল। ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসলি জমি। ১০ থেকে ১৫ দিনব্যাপী বন্যায় ৭ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ও ৮ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এতে উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে মোট ৩৫ হাজার ৫৫ মেট্রিকটন ফসলের। যা মোট ফসলের ২৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাট, আউশ ধান ও সবজি ক্ষেতের।
চলতি মৌসুমে চাষ করা ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর পাট ক্ষেতের মধ্যে বন্যার কারণে ক্ষতি হয়েছে ৯ হাজার ৫২১ হেক্টর পাট ক্ষেতের। মোট ৮ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা আউশ ধানের মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর আউশ ধান ক্ষেতের।
অপরদিকে ৪ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ করা সবজি ক্ষেতের মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৬১ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত। এরমধ্যে ১৫৪ হেক্টর জমির মরিচ ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে।
কুড়িগ্রামে আবাদ করা বিভিন্ন ফসলের মধ্যে রয়েছে- আমন বীজতলা, পাট, আউশধান, তিল, শাকসবজি, কাউন, চিনা, কলা, ভুট্টা, চিনাবাদাম, মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, আখ ও মুগডাল।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সরকারকে অবগত করেছি। যা আগামী দিনে একটি পুনর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় এ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা ৭ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনার একটি বরাদ্দ পেয়েছি। যা সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ