পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সৃষ্টির শুরু থেকেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আর এ কারণে প্রকৃতির কাছে মানুষ বরাবরই অসহায়। আদিমকাল থেকেই প্রকৃতির এ প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তারা লড়াই করে টিকে আছে। মানুষ তার বুদ্ধি ও কৌশল দিয়ে প্রকৃতির পরিবেশকে বাসযোগ্য করে তুলেছে। সময়ের পরিক্রমায় মানব সভ্যতায় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মানুষ প্রকৃতিকে জেনেছে, চিনেছে এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছে। এই চেনা, জানা ও যথাযথ ব্যবহারের মধ্য দিয়েই সমাজসভ্যতা বিকশিত হয়েছে। মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে শিখেছে। প্রকৃতিকে মানুষ শুধু ব্যবহার করতেই শেখেনি বরং সেটাকে জয় করার কৌশলও রপ্ত করেছে। মানবসৃষ্ট এ কৌশল প্রকৃতিতে নানা পরিবর্তন সাধন করেছে। প্রকৃতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নানা ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে। বিজ্ঞানের শক্তিবলে প্রকৃতি মানুষের হাতের মুঠোয় এসেছে। বিজ্ঞানের এ শক্তির আগমন ঘটেছে পঞ্চদশ শতাব্দীতে। এ শতাব্দীতে পৃথিবীতে বিভিন্ন স্বাধীন দেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। এ সময় ইউরোপ জুড়ে শিল্প বিপ্লবের উত্থান ঘটেছে। শিল্পের জন্য দিকে দিকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও নানা পণ্যের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। কাঁচামাল ও পণ্যের যোগান দিতে সরবরাহকারীরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে গরিব দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠিত হয়েছে। সীমাহীন মুনাফা অর্জনে শিল্পপতিদের লালসার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে তারা রিজার্ভ ও পুঞ্জিভূত করেছে। ভিন দেশের সম্পদ কুক্ষিগত করতে কুনজর দিয়েছে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য তারা তাদের ইচ্ছাধীন বাজার সৃষ্টি করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশকে তারা দখল করেছে।
তবে মানুষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন প্রকৃতির কাছে তারা আজও অসহায়। প্রকৃতিকে জয় করলেও প্রকৃতির উপরই তারা নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বিশ্বময় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর যাবৎ প্রচন্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। শহর-বন্দর ও গ্রামের মানুষ এই গরমে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মের বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠে তারা গরমে অস্থির হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিহীন রৌদ্রের খরতাপে পুড়ে চৌচির হয়ে গেছে মাটি। কৃষক, শ্রমিক আর দিনমজুররা হয়ে পড়েছে দিশেহারা। মধ্য আষাঢ়েও গরম এতটুকু হ্রাস পায়নি। গ্রাম, শহর আর গঞ্জের মানুষের মুখে একটিই বয়ান ‘গরম, গরম, অসহ্য গরম’। মানুষ প্রকৃতিকে জয় করলেও প্রকৃতির গরমের কাছেই তারা ধরাশয়ী হয়ে পড়েছে। কিন্তু এসব সাধারন মানুষ সীমাহীন গরমের উৎসমূলের সন্ধান জানে না। একসময় বাংলাদেশের সর্বত্র জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল অসংখ্য নদ-নদী ও খাল-বিল। আর এ কারণেই বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হতো। বিআইডব্লিউটির অধীনে একসময় অভ্যন্তরীণ নদী ও শাখা নদীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ হাজার। আর বিআইডব্লিউটির আওতার বাইরে নদী ও উপনদীর সংখ্যা ছিল সব মিলিয়ে ২২ হাজার! অর্থাৎ বাংলাদেশের নদী, শাখা নদী ও উপনদীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ছিল ২৬ হাজার! স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২৬ হাজার নদীর মধ্য হতে এখন টিকে আছে মাত্র ৮০টি নদী। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতালক্ষ্যা, সুরমা, কর্ণফুলী ইত্যাদি দেশের প্রধান নদী। কিন্তু ভারতের ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা বাঁধ এবং আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত করেছে। এসব কারণে নদীতে নাব্য সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বড় বড় নদীগুলো আজ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে ধুধু বালুচর। আর সে বালুচরে শোভা পাচ্ছে বাড়িঘর। কৃষকেরা সেখানে শুরু করেছে কৃষি আবাদ! অন্যদিকে নদীখেকো ভূমিদস্যুরা রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নদী এবং জলাশয়গুলো ভরাট করেছে। সেখানে তারা নির্মাণ করেছে বহুতল ভবন। স্লুইসগেট, ব্রিজ এবং বাঁধ নির্মাণ করে তারা হাজার হাজার খাল-বিলের অস্তিত্ব বিলীন করেছে। পরিবেশ গবেষকদের মতে, প্রকৃতির সাথে এই অন্যায্য আচরণই এই তাপদাহ সৃষ্টির কারণ। পরিবেশবিদদের মতে, প্রচন্ড এই গরমের উৎস এখানেই। এসব কারণেই আবহাওয়া এবং জলবায়ুতে আজ মারাত্মক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা শহর দিয়ে একসময় নদী এবং বড় বড় খাল প্রবাহিত ছিল। বড় বড় খাল দিয়ে মানুষ সাধারণত নৌকা ও ট্রলারযোগে যাতায়াত করতো। আর নদীগুলো দিয়ে যাতায়াত করতো লঞ্চ ও স্টিমার। আজ সেসব খাল এবং নদী ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেছে। হাজার হাজার নদী এবং খাল চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেছে প্রাসাদের নিচে। অগত্যা বেঁচে থাকা খালগুলো যদি এখনো সংস্কার করা যেত, তাহলেও দেশের অধিকাংশ জেলাসদর একেকটি উন্নত ব্যবসায়ী নগরে পরিণত হতো। কিন্তু কে করবে এ কাজ! এজন্য তো দরকার নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম, দূরদর্শী চিন্তা আর সূক্ষ্ম পরিকল্পনা। এটা দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, স্বাধীন বাংলাদেশে কখনও নৌপথ গুরুত্ব পায় নাই। বিগত ৫০ বছর ধরেই নৌপথ অবহেলিত। অথচ পৃথিবীর মধ্যে অতি অল্প সংখ্যক রাষ্ট্রের মধ্যে এটি একটি মাত্র রাষ্ট্র, যার পুরোটাকেই নৌপথে সংযুক্ত করার ব্যাপক সুযোগ ছিল। বিগত ৫০ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নের চাপে নৌপথ এক তৃতীয়াংশে নেমে এসছে! বিপরীতে দেশে সড়ক পথ বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকশ গুণ। পানিতে ঘেরা দেশে সড়ক তৈরি করতে নির্মাণ করতে হয়েছে হাজার হাজার সেতু। এসব সেতু উন্নয়ন প্রকল্পেরই আওতাধীন বলেই বিবেচিত। মেগা প্রকল্পে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এডিবি, বিশ্ব ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক নানা দাতা সংস্থা। এসব সংস্থার মূল আগ্রহ সেতুকে কেন্দ্র করেই। কারণ সেতুর পেছনে আছে গাড়ির বিজনেস। দেশের উন্নয়নের চিত্র এমনই যে, যেখানে অসংখ্য সেতু আছে, কিন্তু তার দুই পাশে কোনো রাস্তা নাই। আবার অনেক সেতু আছে যার নিচে পানি নেই! অথচ এটা সর্বজনবিদিত যে, বাংলাদেশের জনঘনত্ব অনেক বেশী এবং জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমান অনেক কম। চীনে প্রতি বর্গকিমি জায়গায় মানুষের বসবাস ১৪৮ জন, ভারতে ৩৮২ জন আর বাংলাদেশে সেই সংখ্যা ১,২৪০ জন! এমতাবস্থায়, এসব বিবেচনায় রেখেই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া জরুরি ছিল। কিন্তু এ জাতীয় পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়নি বিধায় নৌপথও গুরুত্ব পায়নি। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথমই নৌপথ গুরুত্ব পাবার কথা ছিল। উচিত ছিল নৌপরিবহন উন্নয়ন, সংস্কার ও আধুনিকায়ন। এরপর গুরুত্ব পাবার কথা ছিল রেলপথ। স্বাধীনতার পর রেলপথের উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। কোথাও এপথ বেড়েছে আবার কোথাও কমেছে। সব মিলিয়ে প্রায় সমান সমান। অন্যদিকে দেশের সড়ক, মহাসড়ক ও হাজার হাজার সেতু হাজার হাজার নদীকে গিলে খেয়ে ফেলেছে। আগামীতেও খাবারের এ ব্যবস্থা চলমান থাকবে। কারণ এখানে অনেকের লাভ ও সুখ্যাতি জড়িত। এখানে রয়েছে দাতা সংস্থার লাভ, জড়িত আছে ঋণদাতাদের লাভ, কনস্যালট্যান্টদের লাভ, ঠিকাদারদের লাভ, সরকারের লাভ। চারিদেকে শুধু লাভ আর লাভ। আর বাস্তবে এটা এমনি এক লাভ যা জনগনকে দেখানো যায়। মূর্খ জনগণও উন্নয়ন বলতে এ লাভকেই বুঝে থাকে!
প্রচণ্ড তাপদাহের আরেকটি কারণ হলো দেশের বনাঞ্চল ধ্বংস করা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল থাকা অপরিহার্য। সর্বত্রই একসময় বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু হিংস্র মানুষরূপী বনখেকোরা বন-জঙ্গলগুলোকে খেয়ে ফেলেছে। পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের মতে, দেশে বর্তমান বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৭ বা ৮ শতাংশ। অথচ এই বন-জঙ্গলই ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু নদীখেকোর মত বনখেকোরাও বাংলার বনাঞ্চলকে নিধন করে সেখানে অট্রালিকা নির্মাণ করেছে। ফলে চিরসবুজের দেশ আজ মরুভূমিতে রূপান্তর হতে চলেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং ঘন বনাঞ্চল হলো সুন্দরবন। পরিবেশবিদরা মনে করেন, সুন্দরবন বেঁচে আছে বলেই বাংলাদেশ বেঁচে আছে। সুন্দরবন না থাকলে সিডরের রাতেই বাংলাদেশ সাগরের তলদেশে হারিয়ে যেত। শত শত বছর ধরে এ সুন্দরবনই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে সুন্দরবন আজ অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে বসেছে। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ভারত সরকার ভারতীয় কোম্পানিকে বিদ্যুৎ কারখানা বানাতে ভারতের কোনো জায়গায় অনুমতি দেয়নি। কিন্তু অনুমতি দেয়া হয়েছে আমাদের দেশে! বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর ভিতর তাই নানা রকম প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উন্নয়নের একটি মেগা প্রকল্প হলেও দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ বিপর্যয়ের সর্বশেষ ও সর্বগ্রাসী রুপ হিসেবে করোনা মহামারিকে উল্লেখ করা যেতে পারে। এ মহামারি দেশ-বিদেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনা মহামারিতে পৃথিবীতে মোট দেড় কোটি লোকের মৃত্যু হয়েছে। তবে প্রকৃত হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা এর দ্বিগুণ বা তিন গুণ হতে পারে। বর্তমানে এর চতুর্থ ঢেউয়ের চোখ রাঙ্গানি দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে নিত্য ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাসে বিশ্ববাসী নিঃস্ব হচ্ছে। খরা, অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শীতে এশিয়া যখন জুবুথুবু, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে তখন আমেরিকা ও ইউরোপে। আর পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায় ক্রমাগত গলছে বরফ। বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ফণি, আম্ফান, আইলা ও নার্গিসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে বাস ও চাষযোগ্য জমি। ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে মানুষ হচ্ছে নিঃস্ব ও ভূমিহীন। বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। ভূপৃষ্ঠের তলদেশে পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে। গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জলবায়ুর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পরিবেশগত সকল ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর ১৬ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে পরিবেশ দূষণের কারণে। আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২৮ শতাংশ। পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী দেখা দিচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। দরিদ্র নারী ও শিশুরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নারীদের গর্ভের শিশু মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দূষিত বায়ুর প্রভাবে চোখ, নাক ও গলার সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। ফুসফুসের নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ জন্ম ও ক্যান্সার মারাত্মক আকারে বেড়ে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। ১০ লাখ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে রয়েছে। মরুভূমি দীর্ঘ হচ্ছে। জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর এক কোটি হেক্টর বন বিলিন হচ্ছে। সমুদ্রের মাছগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বায়ু ও পানি দূষণে ৯০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
প্রকৃতির রুদ্ররূপে পৃথিবী আজ এক ভয়ানক ভঙ্গুর দশায় পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির রোষানলে পড়ে পৃথিবী আজ ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত। পৃথিবীকে বাঁচাতে তাই সকল দেশই সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশ ও জাতি রক্ষায় তারা তাদের উন্নত জ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণা ব্যবহার করে চলেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছুই করতে পারছে না। মূলত মানুষের অপ্রয়োজনীয় উচ্চাকঙ্খা আর আবিষ্কার থেকে জন্ম হচ্ছে নানা বিপর্যয়। বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের প্রযুক্তির প্রতি অতিমাত্রায় ঝোঁকপ্রবণতা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বড় কারণ হতে পারে। মানুষের আবিষ্কৃত রোবটই একদিন মানবতাকে ধ্বংস করে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। তিনি আরো বলেছেন, মানুষের গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টি হবে কিছু ভাইরাস বা জীবাণু, যা জীবজগতকে চরম বিপর্যয়ে নিয়ে যাবে। পৃথিবীতে করোনাভাইরাসের চেয়েও বহুগুণ শক্তিশালী ভাইরাস আবিষ্কৃত হবে। যা সুন্দর পৃথিবীকে নিমিষেই ধ্বংস করে দেবে। পৃথিবীতে সৃষ্টি হতে পারে মহাজাগতিক বিস্ফোরণ ও সৌর ঝড়। এর ফলে পৃথিবীতে সৃষ্টি হতে পারে বর্তমানের চেয়েও প্রচন্ড তাপদাহ, যা জ্বালিয়ে ভস্য করে দিতে পারে সমগ্র জগতকে। পৃথিবী ধ্বংসের সবচেয়ে বড় উপকরণ হলো মানবসৃষ্ট পারমাণবিক অস্ত্র। এটার অপপ্রয়োগের কারণে তৈরি হতে পারে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। বিস্তীর্ণ এলাকা হয়ে যেতে পারে মরুভূমি। বেড়ে যেতে পারে মারাত্মক জীবানুর প্রকোপ। আর ছোটো এই নীল গ্রহটি হয়ে যেতে পারে বসবাসের একেবারেই অযোগ্য। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবশ্য এ বিপর্যয়ের পিছনে মানুষের কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানুষ প্রাণীকূলের আবাসন ধ্বংস করছে। বন্য প্রাণীর বসবাসের জায়গার উপর হস্তক্ষেপ করছে। ফলে বিক্ষিপ্ত এসব প্রাণী থেকেই উৎপত্তি হচ্ছে ভাইরাস। প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ চলমান থাকলে করোনার চেয়েও শক্তিশালী ভাইরাস উৎপত্তি হতে পারে।
লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, দা’ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।