Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাজার হাজার তরুণ বিদেশে আশ্রয়প্রত্যাশী হচ্ছে কেন?

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২২, ১২:১১ এএম

কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে মানুষের জন্য সুখ-শান্তিতে বসবাসের পরিবেশ নিশ্চিত করা। একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসাবে দেশ এগিয়ে চলেছে অন্যদিকে দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের মেধাসম্পদ, জনসম্পদ ও জনশক্তি। লাখ লাখ তরুণ যেনতেন প্রকারে, এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বাস্তবতায় সেখানকার গৃহহীন উদ্বাস্তুদের একটি অংশ লিবিয়া, তিউনিসিয়া উপকুল হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউরোপীয় সীমান্তে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর ভীড়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশির উপস্থিতি বিশ্বগণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ভ’মধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মারা যাওয়া এবং বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের অভিযানে উদ্ধার হওয়া অভিবাসনন প্রত্যাশীদের এক বড় অংশই বাংলাদেশি নাগরিক। গত বছর জুন মাসে তিউনিসিয়া উপক’লে ভাসমান একটি নৌকা থেকে উদ্ধার হওয়া ২৬৭ জনের মধ্যে ২৬৪জন ছিল বাংলাদেশি। গতমাসে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইউরোপ যাওয়ার সময় তিউনিসীয় নৌবাহিনীর হাতে আটক ৮২ জনের মধ্যে ৩২জন ছিল বাংলাদেশি। এক তথ্যে জানা যায়, গত বছর ভ’মধ্যসাগরে ২ হাজারের বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী মারা যায়। এদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। বিভিন্ন দেশের কারাগারে হাজার হাজার বাংলাদেশী যুবক ধুঁকে ধুঁকে মরছে।

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ২০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত কোনো দেশ থেকে এভাবে হাজার হাজার মানুষের বিদেশে আশ্রয় প্রার্থনাকে যুক্তিগ্রাহ্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার যখন দেশকে উন্নয়নের মহাসরণীতে নিয়ে যাওয়ার দাবি করছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, দেশ উন্নয়নশীল থেকে মধ্য আয়ের দেশের পরিনত হতে চলেছে, ঠিক তখন কেন এভাবে হাজার হাজার তরুন-যুবক দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে! দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। ভ’মধ্যসাগরে আটক হওয়া এবং আশ্রয় প্রার্থীদের ক্রাইটেরিয়া পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিদেশে আশ্রয় প্রার্থী এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পথে পাড়ি জমানো ব্যক্তিদের শতকরা ৯০ভাগেরই বয়েস ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে যেমন গ্রামীণ মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চশিক্ষিত যুবক রয়েছে, আবার শহুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর স্বল্পশিক্ষিত বেকার ও উচ্চাভিলাষি তরুন-তরুনীও আছে । মূলত দেশে যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান না থাকা, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান এবং রাজনৈতিক কারণে পুলিশি হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক যুবক-তরুণ এমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ছাড়ছে। অবৈধ পথেই শুধু নয়, স্বচ্ছল ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানরা লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করেও দেশ ছাড়ছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে এদের বেশিরভাগই আর দেশে ফিরে আসেনা।

সিরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, ইরাক এবং ইউক্রেনের মত যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও নিরাপত্তাহীন দেশগুলো থেকে ইউরোপে সাময়িক অভিবাসন প্রত্যাশি লাখ লাখ মানুষ ভীড় জমাচ্ছে। দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে আবার দলে দলে ফিরে যেতেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বৈধ-অবৈধ পথে হাজার হাজার বাংলাদেশির এমন অভিবাসনের জন্য মরিয়া হওয়া জাতির জন্য লজ্জার বিষয়। দেশে কর্মসংস্থান না থাকায় জনশক্তি রফতানি খাতের উপর বেশি চাপ সৃষ্টি হলেও গতকাল সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়,‘ কর্মী যাওয়া বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে’। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোতেও বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কানদের চেয়ে অনেক কম। এমনকি বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টর, আইটি সেক্টর, রফতানিমুখী ওষুধশিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান কর্মীদের নিয়োগদান, বেতন ও সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি। লাখ লাখ অবৈধ ভারতীয় কর্মী বাংলাদেশ থেকে বছরে শত শত কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী চাকরির জন্য হণ্যে হয়ে ঘুরছে। বিদেশি কর্মীদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সাথে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক হয়রানি এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া বিদেশে অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। এ জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হবে। নৈতিক শিক্ষা, দেশপ্রেম ও মূল্যবোধের চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। অভিবাসনের নামে মানব পাচার ও মেধাপাচারের বিষয়ে জনসচেতনতা মূলক উদ্যোগ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • আলিফ ১ জুলাই, ২০২২, ৫:১৪ এএম says : 0
    দেশের সার্বিক অবস্থা ভালো না বিধায় এ দেশের তরুণরা বিদেশে পারি দিচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • আলিফ ১ জুলাই, ২০২২, ৫:১৫ এএম says : 0
    বর্তমানে দেশের বেকারত্ব অনেক বেড়ে যাওয়ায় তরুণরা এ দেশে থাকতে ইচ্ছুক না।
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ১ জুলাই, ২০২২, ৫:১৮ এএম says : 0
    এ দেশে অপরাধ বেড়েই চলছে। আবার বেশিরভাগ সময় অপরাধীদের বিচারও হচ্ছে না। তারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেঁচে যাচ্ছে। ফলে দেশের বেশিরভাগ লোক এ দেশে থাকতে পছন্দ করেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ১ জুলাই, ২০২২, ৫:১৯ এএম says : 0
    নৈতিক শিক্ষা, দেশপ্রেম ও মূল্যবোধের চর্চা নিশ্চিত করতে পারলেই দেশের মানুষ অন্য দেশে যেতে এতো আগ্রহী হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ১ জুলাই, ২০২২, ৫:২২ এএম says : 0
    লাখ লাখ অবৈধ ভারতীয় কর্মী বাংলাদেশ থেকে বছরে শত শত কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী চাকরির জন্য হণ্যে হয়ে ঘুরছে। এ দেশ থেকে ভারতীয় অবৈধ কর্মীদের দ্রুত বিতারিত করে দেশের তরুণদের চাকরির নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারকে নজর দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবুল ১ জুলাই, ২০২২, ৫:২৪ এএম says : 0
    দেশের সার্বিক অবস্থা ভালো হলেই দেশের মানুষ অন্য দেশে যেতে এতা আগ্রহী হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২ জুলাই, ২০২২, ১১:২৪ এএম says : 0
    ইন্ডিয়া থেকে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি কাজ করে আর আমাদের লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ বেকার হয়ে বসে থাকে আজ 50 বছর হল দেশ স্বাধীন হয়েছে অথচ আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমনভাবে করে রেখেছি যাতে কিনা একটা লোক শিক্ষা গ্রহণ করে কিছুই করতে পারে না একটা সুইচ বানাতে পারেনা সবকিছু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় আজকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যদি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে হত তাহলে আজকে আমরা আমাদের দেশের সব জিনিস তৈরি করতে পারতাম আর যদি বিদেশে লোক পাঠান তাহলে তাদেরকে সেইভাবে শিক্ষা দিয়েই পাঠাতাম তাহলে তারা ঐ সব কাজে পারদর্শী হতো এবং অনেক বেতন পেতে ইন্ডিয়ার যত লোক বিদেশে যায় তারা সবাই শিক্ষিত আমাদের দেশের মতো অশিক্ষিত নয় তারা অনেক বেতন পায় আর আমাদের দেশের সরকার দেশদ্রোহী আল্লাহতালা আমাদের দেশটাকে পরনির্ভরশীল করে রেখেছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাজার হাজার তরুণ বিদেশে আশ্রয়প্রত্যাশী হচ্ছে কেন?
আরও পড়ুন