পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ বাস্তব। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই সেতুর উদ্বোধন করে ‘দখিন দুয়ার’ খুলে দিয়েছেন। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি যথার্থই বলেছেন, পদ্মাসেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক। পদ্মাসেতু নির্মিত হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে। এর আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, পদ্মাসেতুর মতো বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন সম্ভব। এর ঠিকাদার, শ্রমিক, কর্মী, বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলীদের একাংশ বাংলাদেশি। এছাড়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনী এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা সবাই লাগাতার শ্রম দিয়ে, অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে প্রকৌশলগত বিস্ময়কর এই সেতু নির্মাণ সম্ভবপর করে তুলেছেন। আর সেতু নির্মাণে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছে দেশের মানুষ। এটা ছিলা সবচেয়ে বড় শক্তি ও অনুপ্রেরণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবনায় সক্রিয় ছিল পদ্মাসেতু। ভাগ্যগুণে সে ভাবনা বাস্তবায়নের দায়িত্বও তার ওপরই পড়েছিল। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু শুরুতেই দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয় সেতু। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা দুর্নীতির তথাকথিত অভিযোগে এর অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। সেতুর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন হবে। তার এ ঘোষণায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রশ্ন তোলেন, কোথা থেকে আসবে এই বিপুল অর্থের যোগান? এটা অসম্ভব কল্পনা ও দূরাশা মাত্র। এ সেতু কখনোই হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রকার নেতিবাচক অভিব্যক্তি ও কথা প্রত্যাখ্যান করেন। তারই দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অর্থায়নসহ সব কিছুর ব্যবস্থা হয় এবং স্বপ্নের সেতু শেষ পর্যন্ত বাস্তবে এসে ধরা দেয়। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্থির সংকল্প, দৃঢ়তা ও সাহসিকতাই পদ্মাসেতু নির্মাণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। এ জন্য জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সকল বাধা-বিপত্তি বেতোয়াক্কা না করতেন, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্নভিন্ন না করতেন, কঠোর মনোবল ও জেদ না দেখাতেন, পদ্মাসেতু হতো না। জনগণের সমর্থন এ ক্ষেত্রে তার শক্তি ও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। গণসমর্থন ও গণশক্তির এই মহিমা তিনি নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন। উদ্বোধনী ভাষণে তার গভীর সন্তোষের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, পদ্মাসেতুর জন্য আমি গর্ববোধ করি। বাঙালি আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। দেশের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে আমিও আজ আনন্দিত, গর্বিত ও উদ্বেলিত। অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহুল কাক্সিক্ষত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা ও জেদ। অনেকেই বলেছেন, স্বাধীনতার পর আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন পদ্মাসেতু। বলা বাহুল্য, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। শুধু অর্জনের বিষয় হিসেবেই নয়, সক্ষমতা, অনুপ্রেরণা, আত্মবিশ্বাস ও অহংয়ের প্রতীক হিসেবেও পদ্মাসেতুর কথা ভবিষ্যতে বহুদিন উচ্চারিত হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ এ সত্য আরো একবার প্রমাণিত হলো। বাঙালি কোনো কিছুতেই হার মানে না, মাথা নত করে না, এটা পুনর্বার প্রতিষ্ঠিত হলো। কোনো কোনো অর্জন, বিজয়, সাফল্য ও কৃতিত্ব জাতীয় আত্মশ্লাঘাবোধ বাড়িয়ে দেয়, জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম দৃঢ়বদ্ধ করে, আত্মবিশ্বাস বিস্তারিত করে। পদ্মাসেতু সে রকমই একটি উপলক্ষ। প্রমত্তা পদ্মাকে সেতুর শৃঙ্খলে আটকানো কোনো সহজসাধ্য কাজ ছিল না। কিন্তু যত কঠিনই হোক, আমরা সেটা করতে পেরেছি। ‘আমরাও পারি’ এটা দেখিয়ে দিয়েছি। এ জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকেও সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসিত ও ধন্যবাদার্হ হয়েছেন।
পদ্মা দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে পৃথক করে রেখেছিল। পদ্মাসেতু তাকে জুড়ে দিয়েছে। এ সেতু ‘সেতুবন্ধ’ রচনা করেছে। এর সুফল গোটা দেশ পাবে, বিশেষভাবে পাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। যোগাযোগ ও যাতায়াতে বাধা-প্রতিন্ধকতা থাকায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছে। অর্থনীতি, জীবনমান, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই। পদ্মাসেতু এই পটভূমিতে আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওই পশ্চাদপদ অঞ্চলের যোগাযোগ, যাতায়াত, কৃষি, শিক্ষা, অবকাঠামো, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, পর্যটন প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই পদ্মাসেতু বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। ইতোমধ্যে ওই সকল ক্ষেত্রে কর্মতৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পদ্মাসেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে পদ্মাসেতুর অবদান মোটেই নগণ্য হবে না। পদ্মাসেতু সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ও অবদান যথাযথভাবে রাখুক, আমরা সঙ্গতকারণেই সেটা প্রত্যাশা করি। পদ্মাসেতুর উদ্বোধন শুধু একটা সেতুর উদ্বোধন নয়, অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন। এ সম্ভাবনা পদ্মাসেতুর মতোই নান্দানিক ও আলোকশোভিত হোক, এটাই একান্ত কামনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।