পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নদী মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। এর বিকাশ ঘটেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। মিশরের নীলনদকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল ইতিহাসখ্যাত মিশরীয় সভ্যতা। পৃথিবীর ইতিহাসে নীলনদ মিশরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত। সিন্ধু নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল বিখ্যাত সিন্ধু সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতাকে ঘিরে পত্তন ঘটেছিল উপমহাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি। পদ্মা-মেঘনা-যমুনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। কৃষিকাজ, পানি বিদ্যুৎ, পানি সেচ ও মৎস্য উৎপাদনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। শহর ও শিল্পকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় পানি সরবারহে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু বাংলাদেশের নদীমাতৃক পরিচয় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। দেশের ১৫৮ টি নদী সংকুচিত হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তাদের আসল পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে। ধুধু বালুচর নদীগুলোকে মরুতে পরিণত করেছে। পদ্মা, মেঘনা আর যমুনার মাঝখানে এখন শোভা পাচ্ছে বাড়িঘর। নদীগুলোর মাঝখানে জেগে ওঠা বালুচরে কৃষকরা শুরু করেছে কৃষির আবাদ। বিগত পঞ্চাশ বছরে শোষণ, দুষণ আর দখলের কবলে পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। এ দখল, দূষণের সাথে যুক্ত হয়েছে নদী ভরাট। এতসব কারণে বিলীন হওয়ার শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে নদীগুলো।
মানুষ ছাড়াও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নদ-নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল হলো এ নদী। কিন্তু বর্তমান নদী তার আপন সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। নদী আজ নর্দমা আর বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে নদীগুলো বদ্ধ ড্রেনে রূপ নিয়েছে। ফলে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে, ভূপৃষ্ঠে যার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসন্মুখ অবস্থায় নিপততিত হয়েছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে প্রাণীসমূহ হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর সাথে জড়িত সকলের জীবনধারণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
দেশ ক্রমে মরুভূমি হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। দেশের সাম্প্রতিক আবহাওয়াপরিবর্তন সেদিকের ইঙ্গিত বহন করে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা ও বার বার বন্যায় দেশের ষড়ঋতুর বৈশিষ্ট্য অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অভ্যন্তরে বহমান নদনদী ও খালসমূহ সুরক্ষায় কোনো পরিকল্পনা নেই। তাই নদীর ইতিহাস ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগের নাম হলো সিলেট। নদী গবেষকদের মতে, সিলেটের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত নদীর সংখ্যা দুই শতাধিক, যার উৎসমুখ হলো ভারত। প্রতি বছর পাহাড়ি ঢল বয়ে আনে লাখ লাখ টন বালি ও মাটি। বয়ে আসা এ বালি ও মাটি সিলেট বিভাগের এসব নদ-নদী ও হাওর-বাঁওড়কে ভরাট করে দিয়েছে। এই বালি ও মাটি শুধু নদ-নদীর তলদেশকেই নয়, বরং এর উৎসমুখও ভরাট করে দিয়েছে। ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে মাও সাংসাং থেকে উৎপন্ন একটি নদীর নাম বরাক। এটি সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা দুই শাখায় প্রবাহিত হয়েছে। সেখানে দীর্ঘ এক যুগ ধরে সুরমার প্রবেশ মুখ ভরাট হয়ে চলেছে। যার ফলে শুষ্ক মৌসুমে বরাকের পানির ৭৫ শতাংশ কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সুরমা নদী। ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে সুরমাতে চর জেগেছে অন্তত ২০ টি। এ সমস্ত চর পলিথিন ও ময়লা-আবর্জনার স্তুপে উঁচু টিলায় পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে আবাদি জমি থাকলেও পানির অভাবে কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেন না। এ কারণে আবাদি জমিগুলোও এখন অনাবাদি হয়ে পড়ছে। যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সুরমা নদীতে পানির প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নদী ভাঙন। ফলে তীরবর্তী মানুষ নানা দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের সাথে সমানভাবে ক্ষতিসাধনে লিপ্ত হয়েছে নদী খেকো ভূমিদস্যুরা। বাংলা ডট রিপোর্টের এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের ৬১ জেলাতে নদীখেকোর সংখ্যা মোট ৪৬ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে নদীখেকো আছে ৬৯৬ জন। মৌলভীবাজারে আছে ৪৬৮ জন, সিলেটে আছে ২৪৪ ও হবিগঞ্জে আছে ৬০০ জন। রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলায় নদী দখলকারীর সংখ্যা ৯৮০ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০৩ জন, কুড়িগ্রামে ৫৪ জন, রংপুরে ১৬ জন, লালমনিরহাটে ১৪ জন ও দিনাজপুর জেলায় এক হাজার ৪৭ জনের নাম তালিকায় আছে।
এসমস্ত দখলদার রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নদী ভরাট করেছে। সেখানে তারা বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর গতি ধারাকে ব্যাহত করেছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক চরিত্রকে নষ্ট করেছে। অবৈধভাবে পাথর ও কয়লা উত্তোলনের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক গতিধারাকে ধ্বংস করেছে। শিল্প কল কারখানার বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে নদীর পানি নষ্ট করেছে। শহরগুলোতে প্রবাহমান খালগুলোর গতিধারাকে রুদ্ধ করেছে। এ সমস্ত নদী দখলকারী ও ভূমিদস্যুদের মাধ্যমে নদী এবং খালগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে দেশে নদী ও খাল পাড়ের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নদী ও খালগুলো তাদের স্বাভাবিক গতিপথ ও নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানি নদী এবং খালগুলো ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। ফলে দুকুল ভেসে লোকালয়ে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অসময়ে বারবার দেশবাসী বন্যার কবলে পড়ে সীমাহীন ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সামগ্রিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় ভূ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশের অনেক ভাটি অঞ্চল যখন পুড়ছে তীব্র দাবদাহে, তখন সিলেট ভাসছে পানিতে। সেখানে বিরাজ করছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। এর আগে গত এপ্রিলে বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেটসহ আশপাশের হাওর এলাকার ফসল। এক মাস না যেতেই সিলেটে আবারও দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে বৃহত্তম সিলেটবাসী মোট তিনবার বন্যার কবলে পতিত হলো। তৃতীয়বারের বন্যা স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হিসেবে রুপ নিয়েছে । তলিয়ে গেছে প্রায় পুরো সিলেট ও সুনামগঞ্জ। এ দুই জেলার এক তলা বিল্ডিংয়ের বেশিরভাগই এখন পানির নিচে। প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে পতিত হয়েছে। বিভাগীয় শহর সিলেট থেকে বিভিন্ন উপজেলা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুনামগঞ্জের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সবকটি এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া না গেলেও দুই জেলার কৃষি অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলার ৪ লাখ মুরগী ও ২ লাখ গরু পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যার কবলে সম্পূর্ণ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সিলেট বিভাগ। খবরে প্রকাশ, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেটবাসী এমন বন্যা কখনো দেখেনি।
বন্যাকবলিত এলাকা থেকে যখন পানি কমতে শুরু করবে, ক্ষতির খতিয়ানটা তখন প্রকাশ পেতে থাকবে। আর ক্ষতির এ খতিয়ানটা হবে অনেক দীর্ঘ ও বেহিসাব। এমতাবস্থায় বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়বে চরম বিপাকে। কয়েক মাসের ব্যবধানে তিনটি বন্যা! দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের মধ্যে ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। বন্যায় বিধ্বস্ত বাড়িঘর বারবার সংস্কার, দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা-কোনোটাই তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে স্বাস্থ্য, সেনিটেশন, বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদিতো থাকলোই। প্রশ্ন হলো, বারবার কেন সিলেটে বন্যা হচ্ছে? বন্যা কেন এত তীব্র আকার ধারণ করছে? সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটে প্রধান নদীগুলো বিশেষত সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জলাশয় ভরাট করে নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন। নদী ও খাল ভরাট করে সেখানে নির্মিত হয়েছে শিল্প কল-কারখানা। সাথে যুক্ত হয়েছে সিলেটের উজানে অবস্থিত মেঘালয়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত। এসব কারণেই প্রতিবছর সিলেট বিভাগে বন্যা হানা দেয়।
বৃহত্তর সিলেটে চিরকাল খরস্রোতা নদী হিসেবে বহমান ছিল সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা পিয়াইন, বৌলাই, রক্তি, যাদুকাটা, মনু, খোয়াই, সুতাংসহ অনেক নদী। এসব নদীর উৎস ভারত থেকে । আজ নদীগুলো তাদের বৈশিষ্ট্য ও যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। এমনিতেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্রতিবছর সাধারণ বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যায়। নদী এবং খালের নাব্যতা না থাকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়। প্রাকৃতিকভাবে অনেক স্থানে পলি ও বালি পড়ে হারিয়ে গেছে নদী। দখলকার কর্তৃক নদীদখল, দূষণ আর ভরাটে নদীর পানি প্রাকৃতিকভাবে নামতে পারছে না। বিভাগের নদ-নদী, খাল-বিলগুলো মরে ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিবছর এখানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। এছাড়া শুকনো মৌসুমে নদীজুড়ে চলে বালু ও কয়লা উত্তোলনের মহোৎসব। নদীর উৎস মুখের চিত্র আরো করুণ। জেগে ওঠা চরে কিংবা হাঁটুসমান পানিতে যত্রতত্র গর্ত খুঁড়ে বের করা হয় কয়লা। বস্তাবন্দি করে নদী তীরেই চলে কেনাবেচা। এ কারণে নদীর উৎসমুখসহ পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় লালাখাল বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নদীর পানিতে থাকতে পারছে না মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি।
সিলেটের অধিকাংশ বড় নদীর উৎস উত্তর-পূর্ব ভারতের খাসিয়া-জৈন্তিয়াহিল ও ত্রিপুরা রাজ্যে। ভারতের এসব এলাকায় চলমান রয়েছে অবাধ বৃক্ষ নিধন। রয়েছে পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত কয়লা ও পাথর উত্তোলন। পাহাড় থেকে নেমে আসা এসব বালি, কয়লা ও পাথর নদীর তলদেশকে ভরাট করে দিচ্ছে। পাশাপাশি এর উৎসমুখ পর্যন্ত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে সিলেটে দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা আর সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা।
বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করত সিলেটে গমন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবুল মোমেন। তিনি সিলেট জেলারই একজন বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘সিলেটে এই মৌসুমে সব সময়ই ঢল নামে। আমাদের ছেলেবেলায়ও এমনটি দেখেছি। তবে তখন পানি আটকে থাকতো না, নেমে যেত। কারণ আমাদের শহরে অনেক পুকুর ছিল।
প্রত্যেক বাড়ির সামনেই পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর-দিঘি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এ ছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ভরাট হয়ে গেছে উন্মুক্ত মাঠগুলোও। এ কারণে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, পানি নেমে যেতে পারছে না। যেকোনো দুর্যোগেই সিলেটের জন্য এটা একটা ভয়ের কারণ।’
সাগরদিঘির পাড়, লালদিঘির পাড়, রামেরদিঘির পাড়সহ সিলেট নগরীর অন্তত ২০/২৫টি এলাকার নাম এমন। দিঘির নামে এলাকার নাম ঠিকই আছে, কিন্তু নেই দিঘিগুলো। ভরাট হয়ে গেছে অনেক আগেই। গত তিন দশকে ভরাট হয়ে গেছে নগরীর অর্ধশতাধিক দিঘি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসেবে, ১৫/২০ বছর আগেও সিলেট নগরে অর্ধশতাধিক বৃহৎ দিঘি ছিল। অথচ এখন টিকে আছে মাত্র ১০/১১টি। বাকিগুলো ভরাট হয়ে গেছে।
এ ছাড়া সিলেটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি প্রাকৃতিক খাল, যা ‘ছড়া’ নামে পরিচিত। পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে ছড়াগুলো গিয়ে মিশেছে সুরমা নদীতে। এসব ছড়া দিয়েই বর্ষায় পানি নিষ্কাশন হতো। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। এখন অনেক স্থানে এসব ছড়ার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। ছড়াগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। সিলেটের স্থানীয় খবরে প্রকাশ, নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৩টি বড় খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব খালের দু’পাশ দখল করে রেখেছে। স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ ঐ প্রভাবশালী দখলদাররা। এ ছাড়া নগরের উপশহর এলাকার হাওর ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। বাঘা এলাকার হাওর ভরাট করে নির্মিত হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট। জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরের পানি ধারণের ক্ষমতা কমে গেছে। তাই সামান্য বৃষ্টি হলেই এখন নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর ঢল নামলে বন্যায় প্লাবিত হয়।
তাই বন্যা প্রতিরোধে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সীমান্তে সকল নদীর উৎসমুখ খননের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। যৌথ নদী কমিশনে বিষয়টি জরুরিভাবে উত্থাপন করা জরুরি। সুরমাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা জরুরি।
নদীকে দূষণমুক্ত রাখা নাগরিক জীবনের সাংবিধানিক মৌলিক কর্তব্য। চিরাচরিত কাল ধরেই নদীর তীরে মৎস্যজীবীদের বসবাস। দৈনন্দিন নদীতে মাছ শিকার তাদের প্রধান জীবিকা। মানুষের অপকর্মের কারণে প্রাকৃতিক নদী দিন-দিন হারিয়ে ফেলছে তার নাব্যতা। নির্বিচারে বন ধ্বংসের কারণে পাহাড়ের মাটি আগের মতো বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারছে না। ফলে শুকনো মৌসুমে নদী ও খালগুলো শূন্য হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলো খরার প্রকোপে পানিহীনতায় ভুগতে থাকে। বন ধ্বংসের ফলে নদী ও খাল পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে চির সবুজের বাংলাদেশ মরুর দেশে পরিণত হচ্ছে। দেশপ্রেমিক স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।