২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতেই নবজাতক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে জন্ম নেওয়া, খুব কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া, প্রাণঘাতি সংক্রমণ থেকেও বেঁচে ওঠা শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরওপি বা রেটিনোপ্যাথি অফ প্রিম্যাচুরিটি নিয়ে অন্ধত্বের শিকার হচ্ছে অনেকেই। সময়মত চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এদের অনেককেই অন্ধত্ব থেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। এদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ বা ৬ লাখ শিশুর জন্ম হয় অপরিণত অবস্থায়। অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া এসব শিশুদের মধ্যে আবার ২০ থেকে ২২ শতাংশ রেটিনোপ্যাথি অফ প্রিম্যাচুরিটির ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
চোখের ভিতর যে আলো সংবেদনশীল অংশ আছে তাকে আমরা বলি রেটিনা। এই অংশটিতেই অপরিপক্ক, অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক রক্তনালী তৈরী হয় যা শিশুকে অন্ধ করে দিতে পারে। মারাত্মক অস্বাভাবিক রক্তনালী এক সময় এই রেটিনাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, আর তখই শিশু চিরকালের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। কিছু সাধারণ লক্ষনের মধ্যে আছে-লিউকোকোরিয়া বা সাদাটে চোখ, টেরা চোখ, চোখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া, মাইয়োপিয়া ইত্যাদি।
নবজাতক ওয়ার্ড কিংবা নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কিছু শিশু আরওপি›র বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে। এরা হচ্ছে -
১। গর্ভের ৩২ সপ্তাহ বা আরও আগে জন্ম নেওয়া শিশু। ২। ৩২-৩৬ সপ্তাহে জন্ম নেওয়া সঠিকভাবে পরিচর্যা না পাওয়া শিশু। ৩। জন্মের ওজন যাদের ১৫০০ গ্রামের কম। এরচেয়ে বেশি ওজন থাকলেও ঠিকমতো যত্ন না নিলে আরওপি হতে পারে। ৪। চিকিৎসা চলাকালীন যাদের অতিরিক্ত কিংবা লম্বা সময় অক্সিজেন লেগেছিল। ৫। যে শিশুদের কৃত্রিম শ্বাসের যন্ত্র অথবা সিপ্যাপ যন্ত্র লেগেছিল। ৬। রক্ত সঞ্চালন, রক্ত বদল (এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন), ফটোথেরাপি পাওয়া শিশু। ৭। যাদের নিউমোনিয়া, বুকে বাতাস জমা কিংবা প্রচন্ড শ্বাসকষ্টের রোগ হয়েছিল। ৮। হৃৎপিন্ডের ছিদ্রের সমস্যা (পিডিএ)। ৯। রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে পড়া, মস্তিষ্কের পর্দায় প্রবাহ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (ভেন্ট্রিকুলার হেমোরেজ)। ১০। শ্বাস বন্ধ, খিঁচুনি হওয়া শিশু। ১১। জমজ শিশু, রক্ত শুন্যতাও এই সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসব লক্ষ্মণ, ঝুঁকি বিবেচনা করে শিশুকে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। এটাকে আমরা বলি আরওপি স্ক্রিনিং। অনেক ক্ষেত্রে শুধু পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে লেজার চিকিৎসা কিংবা শল্য চিকিৎসার দরকার পড়তে পারে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দৃষ্টিশক্তি টিকিয়ে রাখা। আরওপি রোগ, এর প্রতিরোধ, সময়মত স্ক্রিনিং করার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি। এর মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক শিশুর অন্ধত্ব আমরা প্রতিরোধ করতে পারি।
ডা. আহাদ আদনান,
রেজিস্ট্রার, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।