২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ঋতু বৈচিত্র্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশে হরেকরকম ফলের সমারোহ দেখা যায়। বাংলা বছরের প্রথম চার মাস অর্থাৎ বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাসে মোট ফলের ৫৪ শতাংশ এবং বাকি ৮ মাসে অর্থাৎ ভাদ্র থেকে চৈত্র মোট ফলের ৪৬ শতাংশ উৎপাদিত হয়। এতে সারা বছর প্রয়োজনীয় পরিমাণ ফল পেতে অসুবিধা হয়। বিদেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে ফল আমদানি করতে হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার হলেও আমরা খেতে পারছি মাত্র ৩০-৪০ গ্রাম। এ অবস্থায় পুষ্টির চাহিদা পূরণে দেশীয় ফলের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সারা বছর সুষমহারে ফল প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনা করে চাষের কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সেই সঙ্গে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের মাধ্যমেও সারা বছরের ফলের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ফলের দেশ-বাংলাদেশ। আমাদের দেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে। দেশি ফলগুলো রঙে, রসে, স্বাদে অনন্য। শুধু খাদ্য হিসাবেই নয় দেশীয় ফলগুলোর রয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্যবহার। ফল আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফল আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির একটি অন্যতম উৎস। দেশের প্রায় সর্বত্রই এ সময়ে স্থানভেদে বিভিন্ন প্রজাতির সব ফল পাওয়া যায়, যা খাদ্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।
আম- স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে আম অতুলনীয়। এ দেশের প্রায় সব জেলাতেই আম হয়। অনুকূল আবহাওয়া ও উন্নত মাটি আম চাষের উপযোগী। তবে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর আম চাষের জন্য বিখ্যাত। পাকা আমে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন। আম লিভার বা যকৃতের জন্য ভীষণ উপকারী। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে কাঁচা ও পাকা আম অতুলনীয়। জাম- বাংলাদেশের সুপরিচিত একটি ফল। কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, পাবনা, দিনাজপুর অঞ্চলে সাধারণত জাম বেশি পাওয়া যায়। এই ফলের কচিপাতা পেটের অসুখ সারাতে সহায়ক। আম ও জামের রস একত্রে খেলে বহুমূত্র রোগ ভালো হয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে, জামের রস রক্তকণিকা পরিষ্কারে সহায়তা করে।
লিচু- রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম জেলায় লিচু বেশি উৎপন্ন হয়। এই ফলের রসালো অংশ তৃষ্ণা মেটাতে সহায়ক। এর আঁটি চর্মরোগে বিশেষ উপকারী। কাশি, পেটে ব্যথা ও টিউমার বৃদ্ধি রোধে লিচু অনেক উপকারী। এ দিয়ে জ্যাম তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের লিচু কম খাওয়া ভালো।
কাঁঠাল- জাতীয় এই ফল দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি হয়। তবে ঢাকা জেলার গাজীপুর, টাঙ্গাইল, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী এলাকায় কাঁঠাল বেশি জন্মে। গাজীপুরে রয়েছে এই ফলের সবচেয়ে বড় বাজার। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন-এ। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে আর পাকলে ফল হিসেবে খাওয়া যায়। এর দানা ভেজে কিংবা রান্না করে খেতেও মজা। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর ভেষজ গুণ। এর শাঁস ও দানা চীনে বলবর্ধক হিসেবে বিবেচনা করে। ফলটি সাধারণত জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে পাকে।
বেল- সারা বছর পাওয়া গেলেও গরমকালে এই ফলের চাহিদা বেশি দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় সারাতে বেল অনেক উপকারী। এই ফলের পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও চোখজ্বালা করা রোগের উপশম হয়।
জামরুল- বাজারে ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে এই ফল। রসালো ও হালকা মিষ্টি জামরুল গ্রীষ্মকালেই পাওয়া যায়। এটি ভিটামি বি-২ সমৃদ্ধ ফল। বহুমূত্র রোগীর জন্য জামরুল অনেক উপকারী। বর্তমানে সাদা, খেয়েরি-লাল ও হালকা গোলাপি রংয়ের জামরুল দেখা যায়।
তরমুজ- গরমে ক্লান্তি দূর করতে এই ফলের তুলনা হয় না। প্রায় সব জেলাতেই চাষ হয়। এখন হাইব্রিড জাতরে তরমুজ চাষ হচ্ছে। তরমুজ তৃষ্ণা মেটায়। রক্তস্বল্পতা দূর করে। রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পদার্থ।
বাঙ্গি- রসালো ফল হিসেবে এই ফলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এই পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। দেশের প্রায় সব জেলায় বাঙ্গি চাষ হলেও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি হয়ে থাকে। ভিটামিন সি, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিনসমৃদ্ধ এই ফলটি।
আনারস- সিলেট, মৌলভীবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী জেলায় এই ফল বেশি হয়। পাকা আনারস শক্তি বাড়ায়। কফ নিরাময়ে সহায়ক, পিত্তনাশক এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এ ফলের শাঁস ও পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কৃমি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আনারসের জ্যাম-জেলি তৈরি করেও সংরক্ষণ করা যায়।
ফলের বহুমাত্রিক ব্যবহার মানবইতিহাসের শুরু থেকেই চলে আসছে। শুধু মুখরোচক খাবার হিসেবেই নয়- পুষ্টিগুণ, ওষুধ তৈরিসহ ফলের রয়েছে বহুমাত্রিক ব্যবহার। কিছু ফল সারা বছরই পাওয়া গেলেও জ্যৈষ্ঠ মাসে এসব ফল বাজারে আসে বেশি। গরমে দেশি ফল বেশি খান। সুস্থ থাকুন। তাই দেশি ফলে বেশি পুষ্টি, অর্থ খাদ্যে পাই তুষ্টি।
মো: লোকমান হেকিম
শিক্ষক-কলামিস্ট। মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।