পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি মানুষের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। যে কোনো গণমানুষের নেতাকে সাধারণ মানুষের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে সেই আস্থারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল। তবে সমাজে এবং সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র সব সময়ই সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে জনবিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। তথাকথিত গণকমিশনের মাদরাসা শিক্ষা ও আলেম-উলামাবিরোধী তদন্ত রিপোর্ট এবং দেশের প্রথিতযশা ও জনপ্রিয় ১১৬ জন আলেম ও ইসলামি বক্তার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদী উস্কানির অভিযোগে দুদকে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তা নিয়ে দুদক এখন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে! গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডলের সুপারিশে এবং দুদক চেয়ারম্যান পরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান-২) সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গতমাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের নেতৃত্বে গঠিত গণকমিশন তার রির্পোট আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে মোড়ক উন্মোচন করায় এবং দুদক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে তদন্তের জন্য পাঠায়। সে সময় এই রিপোর্ট নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার এক প্রতিক্রিয়ায় এই গণকমিশনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই বলে মত প্রকাশ করলেও এখন ১১৬জন আলেম-ওয়ায়েজিনের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত বা অনুসন্ধানের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
করোনা পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় এমনিতেই দেশ নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সেই সাথে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সিলেটসহ দেশের ও উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেশকে একটি মানবিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এহেন বাস্তবতায় সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের ঈমান-আক্বিদা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে এমন যে কোনো কর্মকান্ড জাতিকে বিভক্ত ও দুর্বল করে তুলবে। শত শত মাদরাসা এবং ১১৬ জন আলেম ও ইসলামি বক্তার বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগের কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক ও আইনগত ভিত্তি নেই। এসব আলেম-ওলামার প্রতি দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও সমর্থন থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো পক্ষের উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ ও হয়রানিমূলক অনুসন্ধান অথবা এসব অভিযোগের দোহাই তুলে তাদের মুখ বন্ধ করার যে কোনো অপচেষ্টা দেশের কোটি কোটি মানুষকে হতাশ ও বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে গণঅসন্তোষের জন্ম দিতে পারে। সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকারকে দেশের গরিষ্ঠ মানুষের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়ার এটা একটা হীন অপচেষ্টা বলে ধরে নেয়া যায়। এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে সতর্ক থাকতে হবে এবং এ ধরনের অপপ্রয়াস বন্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে।
দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টর আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে এবং পাচার এখনো অব্যাহত আছে। সুইস ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের টাকা জমায় রেকর্ড বৃদ্ধির তথ্যও এ সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। দেশের শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, ব্যাংক জালিয়াতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফ্ট কোড হ্যাক করে শত শত কোটি টাকা লোপাটের সাথে সন্দেহভাজন ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে তথাকথিত ঘাদানিক ও গণকমিশনের উদ্দেশ্যমূলক অপতৎরতাকে আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর সিদ্ধান্তে মানুষের মধ্যে বিষ্ময়ের জন্ম দিয়েছে। মানুষের ক্ষমতায় বিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে বিব্রত করতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। দুদককে অবশ্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যাকশন নিতে হবে। দেশের মানুষ দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার এবং ক্ষমতাবান রাঘব বোয়ালদের দখলবাজি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যাবহারের বিরুদ্ধে দুদকের সক্ষমতা ও সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চায়। দেশের হাজার হাজার মাদরাসার পরিচালক, ইসলামি বক্তা তথা আলেম সমাজ কোনো গণবিচ্ছিন্ন শক্তি নয়। এদের সাথে সরকারের বৈরীতা সৃষ্টির এজেন্ডা নিয়ে কোনো মহল মাঠে নেমে থাকতে পারে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও গণকমিশনের কার্যক্রমের সাথে সরকারের ভেতরের একটি মহলের যোগসাজশ না থাকলে তারা এতদূর অগ্রসর হতে পারত না। ইতিপূর্বে নানা ইস্যুতে দেশের মাদরাসা শিক্ষা এবং আলেম সমাজের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জঙ্গিবাদের কোনো অভিযোগেরই প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে একটি ধোঁয়াশা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। কথিত গণকমিশন নিয়ে দুদকের অতি উৎসাহী তৎপরতাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।