পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রলয়ঙ্করী বন্যায় সিলেট সুনামগঞ্জের আশি ভাগের বেশি ভূমি পানিতে তলিয়ে গেছে। গত মাসের শেষের দিকেই সুরমা-কুশিয়ারার পাড়ে বন্যার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ক্রমবর্ধমান বন্যার পানিতে মাঠ-ঘাট তলিয়ে যাওয়ার শুরুতে সরকারের তরফ থেকে বন্যায় সব ধরণের প্রস্তুতির কথা বলা হলেও বন্যা পরিস্থিতি শত বছরের মধ্যে নজিরবিহিন ও ধারণার চেয়ে খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সরকারি ত্রাণ তৎপরতা খুবই অপ্রতুল। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রনালয়, আবহাওয়া অধিদফতর, পানিউন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারি কোনো সংস্থারই বন্যার এমন তান্ডব সম্পর্কে কোনো রকম পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি ছিল না। রাতারাতি হু হু করে বেড়ে চলা বন্যায় লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার পরও সরকারি-বেসরকারি উদ্ধার তৎপরতা খুবই শ্লথ। অনেক দেরিতে উদ্ধার তৎপরতায় সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হলেও ত্রান ও পুনর্বাসনের চিত্র খুবই শোচনীয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন মানুষের মর্মন্তুদ মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান পানির তোড়ে নিজেদের বসতঘর থেকে বের হয়ে আশ্রয় নিতে না পারায় একই পরিবারের সব সদস্যের সলিল সমাধির বেশ কিছু খবর ভাইরাল হয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার্ত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মানুষ ও গৃহপালিত পশু-পাখিতে গাদাগাদি করে মানবেতর পরিবেশে আশ্রয় মিললেও বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের জন্য হাহাকার চলছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
লাখ লাখ মানুষের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০-৫০ লাখ টাকা বরাদ্দের ঘোষণা নিয়ে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে বেশ ট্রল হতে দেখা গেছে। মূল ধারার গণমাধ্যমেও সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষের অসহায়ত্ব এবং অপ্রতুল-অপযার্পÍ ত্রাণ তৎপরতায় বন্যার্ত মানুষের হাহাকার নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। তবে তাতে অবস্থার তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। দুর্যোগের তীব্রতা, ব্যাপকতা সীমা অতিক্রম করলেও ত্রাণ তৎপরতা সেভাবে জোরদার হচ্ছে না। অনেক স্বচ্ছল-অভিজাত পরিবারের সদস্যরাও সর্বস্ব হারিয়ে শুন্যহাতে ত্রাণকেন্দ্র অথবা নিজ বাড়িতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করলেও তাদের কাছে খাবার পানি, শুকনো খাবার, জরুরি ওষুধপত্র, খাবার স্যালাইন, মোমবাতি-দেশলাইর মত অতিব প্রয়োজনীয় সামগ্রী নেই। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অবর্ননীয় দুদর্শায় দিনাতিপাত করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে টিকে থাকা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। যে কোনো প্রতিকুল পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য মানুষের ঝাঁিপয়ে পড়া এবং সম্মিলিত উদ্যোগে বিপদ থেকে পরিত্রাণের মধ্য দিয়ে আমরা বার বার অনন্য নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। সিলেটের বন্যায় অপ্রতুল ত্রাণ তৎপরতায় সে ঐতিহ্য যেন অনেকটা ম্লান হয়ে পড়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সিলেটের বন্যার্ত মানুষদের সচক্ষে দেখতে ছুটে গেছেন। তার এই সিলেট ভ্রমণে সিলেটের বানভাসি মানুষের মনে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ স্থানীয় জনসাধারণের দাবি-দাওয়া ও আশা-আকাঙ্খার কথা প্রধানমন্ত্রী শুনেছেন এবং সম্ভাব্য সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরও সিলেটে ত্রাণ তৎপরতায় অপ্রতুলতা ও সমন্বয়হীনতা কাটেনি। ত্রাণ আনতে গিয়ে মানুষ অশেষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ত্রান সংগ্রহ করতে গিয়ে করুণ মৃত্যুর শিকার হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। এটা কোনো দুর্গম যুদ্ধক্ষেত্র নয় যে হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণ সামগ্রী ফেলে দায় সারতে হবে। দুর্বল, বৃদ্ধ. নারী ও শিশুদের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ত্রাণ পৌছে দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবিদের মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারি ত্রাণসহায়তার পরিমান এবং প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশি-বিদেশি কর্পোরেট কোম্পানিগুলো আমাদের যে কোনো সামাজিক-ধর্মীয় ও জাতীয় দিবস ও উৎসবকে ঘিরে নানা ধরণের অফারসহ বাণিজ্যিক তৎপরতা নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা গেলেও সিলেটে শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যায় তাদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু ব্যক্তি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গড়ে ওঠা বিভিন্ন গ্রুপ সাহায্য নিয়ে সিলেটে যেতে দেখা যাচ্ছে। সবার পক্ষে বুক পানিতে দাড়িয়ে থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সকলের জন্য ত্রাণশিবিরগুলোতে এবং বাসাবাড়িতে, বাড়ির ছাদে, নৌকা বা ভেলায় আশ্রয় নেয়া বন্যার্ত মানুষের কাছে সুপেয় পানি, শুকনো ও রান্না করা খাদ্য, শিশুখাদ্য ওষুধসহ জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌছে দেয়ার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলেও বন্যা বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে দিকে বিবেচনা করে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে হবে। পণ্যমূল্য ও সরবরাহ ব্যবস্থা যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, কর্মহীন-বাস্তুচ্যুত একজন মানুষও যেন না খেয়ে মারা না যায় সকলকে সেদিকে খেয়াল ও প্রস্তুতি রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।