পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্ষার মৌসুমী বায়ু এখন পুরোদমে সক্রিয়। এর ফলে প্রধান সব নদ-নদীর উজানের অববাহিকায় উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, সিকিম, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল ও চীনে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে উজানে নদ-নদীসমূহে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাটির দিকে ঢল-বান আসা অব্যাহত রয়েছে। একযোগে ফুলে-ফুঁসে উঠেছে গঙ্গা-পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা প্রধান এই দুই অববাহিকা। সেই সাথে ভারত নিজেদের বন্যামুক্ত করতে তিস্তা নদীর উজানভাগে গজলডোবা বাঁধসহ নদ-নদীর উৎসে সব ধরনের বাঁধ-ব্যারেজ খুলে অকাতরে পানি ছেড়ে দিয়েছে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও নদ-নদী এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে করে বন্যা এবং একই সঙ্গে নদীভাঙন আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে।
আবহাওয়া-জলবায়ু ও পানি বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, মৌসুমী বায়ুর আগমনে সবেমাত্র বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। আর এখনই উত্তর-পূর্ব ভারতে শতবর্ষের রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি ঝরেছে। ঘোর বর্ষার ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের আরো দীর্ঘ সময় সামনে রয়েই গেছে। বর্ষার মৌসুমী বায়ুর সার্কেল বা বলয় উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহার, নেপাল, চীন থেকে শুরু করে হিমালয় পাদদেশীয় এলাকা হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। এটি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই অঞ্চলজুড়ে আরো ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চলমান বন্যা দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। আপাতত উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা কমে এলেও আসছে সপ্তাহে বর্ষণের মাত্রা ফের বৃদ্ধি পেতে পারে।
মৌসুমী বায়ু জোরদার হলে বৃষ্টিপাতও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্যার প্রকোপ থাকে। এবারের বন্যার শুরুতেই প্রধান দুই অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা-পদ্মা উভয় অববাহিকায় একযোগে পানি বাড়লে তা বড় আকারের বন্যার আলামত বহন করে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পাশাপাশি গতকাল পদ্মা নদীও সুরেশ^র পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানের ঢলে প্রধান এই তিনটি নদ-নদীর সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই দুই অববাহিকার তিনটি নদ-নদীর পানি প্রবাহের অন্তত ৯০ শতাংশই আসে উজান থেকে। বন্যার কারণও একই।
এদিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণা-কিশোরগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, কুড়িগ্রাম-নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চল, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জসহ উত্তর-মধ্যাঞ্চল, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর-মাদারীপুর-ফরিদপুরসহ মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে বন্যা ব্যাপক বিস্তৃত হচ্ছে। বন্যার সঙ্গেই গ্রাম-জনপদের ভাঙনও ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। সর্বত্র ত্রাণের আশায় করুণ চোখে তাকিয়ে আছেন লাখো বানভাসী। বন্যার্তরা অবর্ণনীয় অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। তাদের খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ-পথ্য নেই। বন্যার্তদের আয়-রোজগারের কোন উপায় বা কাজকর্মও নেই। বাড়িঘর তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। ছিটেফোঁটা ত্রাণসামগ্রী অনেকেরই হাতে পৌঁছেনি। বন্যা কবলিত এলাকার শিশু ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ চরমে।
এ মুহূর্তে বন্যা ও নদীভাঙন কবলিত জেলাগুলো হচ্ছেÑ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী।
গতকাল মঙ্গলবার পদ্মা, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াইসহ ১০টি নদ-নদী ২০টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। পাউবোর পর্যবেক্ষণাধীন নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পয়েন্টের মধ্যে ৬৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজানে ভারত গজলডোবা বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দেয়ায় গতকাল আবারো তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে উত্তরের জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তার দুই পাড়ে।
গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে জানান, দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস অনুুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অপরদিকে কিশোরগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
উত্তর জনপদে তিস্তা নদীর পানি গতকাল বিপদসীমা অতিক্রমের প্রেক্ষিতে লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অপরদিকে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৬৪ মি.মি., জলপাইগুড়িতে ৫৭ মি.মি., অরুণাচলের পাসিঘাটে ৪৩ মি.মি.।
গতকাল পাউবোর ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৮টিতে পানি বৃদ্ধি ও ৩৪টিতে হ্রাস পায়। ১০টি নদ-নদীর ২০টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরমধ্যে তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে, ব্রহ্মপুত্র নদ ৪টি পয়েন্টে, যমুনা ৫টি পয়েন্টে, ধরলা ও ঘাগট একটিতে, সুরমা তিনটি পয়েন্টে, কুশিয়ারা দু’টিতে, খোয়াই ও সোমেশ্বরী একটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। দেশের অধিকাংশ স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
সর্বশেষ আবহাওয়া ও পূর্বাভাস : গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়েছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে কুতুবদিয়ায় ১২২ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মৌসুমী বায়ুর একটি অক্ষ বা বলয় ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি ধরণের সক্রিয় রয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
এদিকে প্রবল বজ্রপাত ও ভারী বর্ষণের সতর্কতায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও প্রবল বজ্রপাতসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও পাহাড়ধস বা ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।