Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাউন্টব্যাটেন-র‌্যাডক্লিফদের দূরভিসন্ধি এবং সিলেটের বন্যা

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কেমন হয়েছে এমন প্রশ্ন এখন অবান্তর। এটি একটি স্থানীয় নির্বাচন ছিল। সরকারি দলের একজন প্রার্থী ছাড়া আর কোনো দলীয় প্রার্থীর অংশগ্রহণ ছিল না। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তে অটল থেকে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। বিএনপি দলীয় দুজন প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তবে গত ১৬ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ও নির্বাচনী আইন-কানুন উপেক্ষা করে কুমিল্লার একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান ও প্রভাব বিস্তারের যে অভিযোগ উঠেছে তা আবারো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র এবং নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্বই যেন তুলে ধরেছে। অনেক নাটকীয়তা এবং ইভিএম কারসাজি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পেরিয়ে নির্বাচনী ফলাফলে সরকারদলীয় প্রার্থী প্রায় সাড়ে তিনশ’ ভোটে পাস করেছেন অথবা পাস বলে ঘোষিত হয়েছেন। তবে ঘোষিত ফলাফলে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের অঙ্ক আওয়ামীলীগের প্রার্থীর চেয়ে ৩০ হাজারের বেশি। যেভাবেই হোক, দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত হয়েছে। এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু যদিও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নয়, তথাপি সিলেটের ভয়াবহ বন্যার প্রসঙ্গে দেশভাগের আগের নির্বাচন প্রসঙ্গক্রমে এসে যায়। ১৯৪৭ সালের ৬ এবং ৭ জুলাই সিলেট ও করিমগঞ্জে সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনে পাকিস্তানে যাওয়ার পক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়েছিল। ভোটের রায়ে করিমগঞ্জসহ মেঘালয় পাহাড় এলাকা সিলেটের সাথে বাংলাদেশে পড়ার কথা থাকলেও র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদে এক মর্মন্তুদ বিচ্ছিন্নতার জন্ম হয়। সিলেট-করিমগঞ্জে মুসলমানদের মধ্যে শত শত বছর ধরে যে সামাজিক অবিচ্ছিন্নতা ও আত্মীয়তা বিদ্যমান ছিল তা চিরতরে রুদ্ধ হয়ে একই বৃহৎ পরিবারের নিকটাত্মীয়রাও দুই দেশের বাসিন্দায় পরিনত হয়েছিল। মাঝখানে দুর্লঙ্ঘ প্রাচীরের মত খাড়া করিয়ে দেয়া হল আন্তর্জাতিক সীমান্ত। সিলেট শহর থেকে হাইওয়ে ধরে তামাবিল সীমান্তের দিকে যেতে দূরে দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে থাকা মেঘালয় পাহাড়টি ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশকে অরক্ষিত-অনিরাপদ করে তোলা হয়েছে।

দেশভাগের আগে শান্তিরক্ষার নামে ভারতের স্বাধীনতা আইনের অধীনে বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো বৃটিশরা নিজেদের মুখরক্ষার জন্য গণভোটের আয়োজন করেছিল। হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো নিয়ে মোটাদাগে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতের কংগ্রেসের পক্ষে বৃটিশদের পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মাউন্টব্যাটেন-র‌্যাডক্লিফদের দুরভিসন্ধি ও কংগ্রেস নেতাদের আঁতাত বুঝতে পেরে বলেছিলেন, আমাকে মথ ইটেন (পোকায়খাওয়া) পাকিস্তান দেবেন না। কংগ্রেসের সাথে যোগসাজশে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্তে¡ও পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, করিমগঞ্জ, খুলনা, মালদা-মুর্শিদাবাদ ও গুরুদাসপুর ভারতের অংশে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। নির্বাচনে এসব অঞ্চলের পাকিস্তানের পক্ষে যাওয়ার পক্ষে রায় এলেও র‌্যাডক্লিফের রেখা মুর্শিদাবাদ, গুরুদাসপুর, করিমগঞ্জকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ভারত শাসনে যেমন তারা হিন্দু-মুসলমানের বিভাজন তথা ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ঠিক একইভাবে উপনিবেশোত্তর দেশগুলোতেও তারা সেই বিভাজনের বিষবৃক্ষ রোপন করে রেখে যায়। বৃটিশ সরকার ডাকসাইটে আমলা ও সার্ভেয়ারদের দিয়ে রাষ্ট্রগুলোর নতুন বিভাজনরেখা তৈরী করতে গিয়ে র‌্যাডক্লিফ লাইন, ডুরান্টলাইন, ম্যাকমোহন লাইন নামে যে সীমান্তরেখা অঙ্কন করেছিল তা প্রতিটি অঞ্চলে আঞ্চলিক বিভক্তি ও তীব্র বৈরিতার জন্ম দিয়েছে। ভারত-পাকিস্তানে বাংলা-আসাম, কাশ্মির, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান বিভাজনে খামখেয়ালিপনা না ঘটলে ভারতীয় উপমহাদেশ বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়ে উঠতে পারত। এর মধ্যে আসামসহ অবিভক্ত বাংলার সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি। র‌্যাডক্লিফ-মাউন্ট ব্যাটেনদের দূরভিসন্ধিমূলক পক্ষপাতিত্বের কারণে বাংলা ও আসামকে শুধু বিভাজিতই করা হয়নি, ভবিষ্যতে নানামুখী প্রাকৃতিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির জন্য সবকিছুই করা হয়েছে। গুরুদাসপুর জেলার জনসংখ্যার বেশিরভাগ মুসলমান হলেও জেলার চারটি তহশিলের একটিকে পাকিস্তানের অংশে দিয়ে বাকি ৩টি অংশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে র‌্যাডক্লিফ যুক্তি দেখিয়েছিল, গুরুদাসপুর শতদ্রæ খালের মুখ হওয়ায় তা ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানির উৎস, তাই এটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ। আসামের চেরাপুঞ্জীতে বিশ্বের সর্বোচ্চ মাত্রার বৃষ্টিপাত হয়, সেখানকার পাহাড়ি ঢলে ভাটির জনপদ সিলেট ডুবে যায়। সেই চেরাপুঞ্জিসহ মেঘালয়, খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ ভারতকে দিয়ে র‌্যাডক্লিফ যে ষড়যন্ত্রের ছক এঁকেছিলেন, তারই খেসারত দিচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জের ৫০ লক্ষাধিক মানুষ। চেরাপুঞ্জির পাহাড়ি ঢলে সিলেট শহরসহ পুরো সিলেট অঞ্চল এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। পানির তীব্র ¯্রােতে ভেসে যাচ্ছে বাড়িঘর, গবাদিপশু ও মানুষ। গত শত বছরেও এমন দুর্যোগ দেখেনি সিলেটের মানুষ। আবাহাওয়া দপ্তর বলছে, ১২২ বছরের মধ্যে এটি সিলেট-সুনামগঞ্জে সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ- সর্বগ্রাসি বন্যা।

আপাতদৃষ্টিতে বর্ষার অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের বন্যাকে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করা হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের জন্য এসব মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। আন্তর্জাতিক নদীর উপর উজানে একতরফা বাঁধ নির্মান, পানিপ্রত্যাহার, রির্জাভার নির্মাণ এবং যত্রতত্র পানি আটকে রাখা ও ছেড়ে দেয়ার অপরিনামদর্শী তৎপরতার শিকার বাংলাদেশের মানুষ। ফারাক্কা ও তিস্তা বাঁধের কারণে দেশের প্রধান নদী পদ্মা, যমুনা, তিস্তার পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে এসব নদীর উপর পলি জমে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা সংকীর্ণ হওয়ার করণে বর্ষার সময় বাঁধের ¯øুইসগেটগুলো খুলে দেয়া এবং পাহাড়ি ঢলের অতিবৃষ্টিপাত মেঘালয় পাহাড় থেকে গড়িয়ে বরাক উপত্যকা থেকে সুরমা-কুশিয়ারায় প্লাবন সৃষ্টি করে সিলেট সুনামগঞ্জসহ উত্তরের জেলাগুলোকে ডুবিয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে এই দুর্যোগপ্রবণতা নতুন নতুন রূপে ও নতুন মাত্রায় আবির্ভূত হতে দেখা যাচ্ছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওরে ইতিহাসে নজিরবিহীন ভয়াবহ রাসায়নিক দূষনের শিকার হয়েছিল হাওরের কৃষকরা। হাজার হাজার টন মাছ, জলজ প্রাণী, পাখি এবং গবাদিপশু মরে হাওরে এক ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। সে বিপর্যয়ের কারণ উৎঘাটনে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সরকারি তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট জনসম্মুখে খোলাসা হতে দেখা যায়নি। মেঘালয় পহাড়ে কথিত ইউরেনিয়াম খনি থেকে সৃষ্ট দূষণে এই বিপর্যয় নেমে এসেছিল বলে তখন নানা মাধ্যমে তথ্য বেরিয়েছিল। পরিবেশগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করেই মেঘালয় পাহাড়ে ভারতের ইউরেনিয়াম উত্তোলনই যদি সেই বিপর্যয়ের কারণ হয়ে থাকে, তদন্তে তার সঠিক তথ্যগুলোও উন্মোচিত হওয়া বাঞ্চনীয়। ভারত পারমানবিক সমরাস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে। চীন-পাকিস্তানের সাথে প্রতিযোগিতা করে ভাÐার আরো সমৃদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠা অস্বাভাবিক নয়। তবে পারমানবিক অস্ত্র ছাড়াই শুধুমাত্র ত্রæটিপূর্ণ বা অরক্ষিত পদ্ধতিতে পাহাড় থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলনের কারণে ভাটির দেশ বাংলাদেশের হাওরে পারমানবিক দুর্ঘটনার মত দূষণ ঘটতে পারে, সে নজিরও আমরা স্বচক্ষে দেখলাম। হাওর বদ্ধ জলাভূমি নয়। বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষা পাড়ের হাজার হাজার শিল্পকারখানার মত হাওরের কৃষকরা সেখানে কলকারখানা গড়ে তুলেনি যে, সেখানে শিল্পবর্জ্য থেকে পানিতে রাসায়নিক দূষণ ঘটিয়ে হঠাৎ এমন বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। সে সময় পরমানু শক্তি কেন্দ্রের গবেষকদের কেউ কেউ বলেছিলেন, ভারত থেকে ইউরেনিয়াম মিশ্রিত পানি বাংলাদেশের হাওরগুলোতে আসার সম্ভাবনা অনেক। আর যদি তাই ঘটে তা আমাদের জন্য অনেক বিপজ্জনক হবে। পরীক্ষা বা তদন্ত না করেই সিদ্ধান্ত দেয়া ঠিক হবে না বলে সরকারি কর্মকর্তারা সে সময় মন্তব্য করলেও গত ৫ বছরেও সে বিষয়ে আমরা অথেনটিক কোনো তথ্য পাইনি। তবে মেঘালয় ও জয়ন্তিয়া-খাসিয়া পাহাড়ে ইউরেনিয়াম মাইনিং নিয়ে সেখানকার স্থানীয় উপজাতীয় অধিবাসী ও পরিবেশবাদিদের তীব্র আপত্তির কারণে প্রায় এক দশক বন্ধ থাকলেও কয়েক বছর আগে তা আবার শুরু হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। অপরিকল্পিত ইউরেনিয়াম মাইনিংয়ে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কায় কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজের তরফ থেকেও জোর আপত্তি জানানো হলেও বাংলাদেশের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য আমরা দেখিনি। গত এক দশকে সিলেটের হাওরে যে সব অভ’তপূর্ব বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছে তার পুরোটা প্রাকৃতিক নয়, অনেকটাই মানবসৃষ্ট। এ ধরণের বিপর্যয়ের পেছনে প্রতিবেশি দেশের অপরিনামদর্শি ও বেপরোয়া তৎপরতা আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিকারের ঊর্ধ্বে নয়।

সিলেটের বন্যা আমাদের সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। বিগত শতকের আটাশি-আটানব্বইতে ঢাকাসহ দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল। তখনো সিলেটে বন্যা তেমন কোনো প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। হাওর এবং সুন্দরবন আমাদের অস্তিত্বের জলাভ’মি ও বনভূমি। এসব ভূপ্রাকৃতিক ও পরিবেশগত এলাকাগুলো ভারতীয় আধিপত্যবাদী অপতৎপরতার কাছে জিম্মি হয়ে থাকলে দেশের নিরাপত্তা বলে কিছুই অবশিষ্ট্য থাকে না। একদিকে টিপাইমুখ বাঁধের খড়গ, মেঘালয়-জয়ন্তিয়া পাহাড়ে ইউরেনিয়াম খনির দূষণ অন্যদিকে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র এসব অতিব গুরুত্বপূর্ণ ও পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সুন্দরবন এবং হাওরের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি দাঁড়াবে। এ সব বিষয়ে এখনি দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বোঝাপড়া হওয়া প্রয়োজন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিদ্ধু নদীর পানিচুক্তির মত বাংলাদেশের যৌথ নদীর পানি বন্টনসহ অমিমাংসিত দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলোতে ভারতকে আন্তর্জাতিক কনভেনশান মানতে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মত আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যস্থতার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়না। ভারতের অনীহা ও বেপরোয়া মনোভাবের কারণে যৌথ নদী কমিশনের কোনো কার্যক্রম না থাকায় পানিচুক্তি বাংলাদেশের পক্ষে কোনো কাজে আসেনি। তিস্তা বা সুরমা কুশিয়ারার পানি প্রবাহে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে অবশ্যই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। গতানুগতিক উন্নয়ন ধারণা, অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা আমাদের এই গ্রহকে দূষিত ও অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে। এখন বিশ্বের উষ্ণায়ন এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের মত ইস্যুগুলো এক সময়ের নিউক্লিয়ার ননপ্রলিফারেশনের রূপ লাভ করেছে। পরিবেশগত নিরাপত্তা ও সুপেয় পানির উৎসগুলোকে নিরাপদ করতে না পারলে রাষ্ট্রের অন্যসব সম্পদ কোনো কাজে আসবে না। সব নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে, পানির উৎসমুখে ইউরেনিয়াম দূষণের মত দূষণ সৃষ্টিকারী তৎপরতা অব্যাহত রেখে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে তুলে দিতে পারিনা। ফারাক্কা বাঁধ ডি-কমিশনের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে। চীন-ভারত-নেপাল, বাংলাদেশের সমন্বয়ে অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে হবে। তার আগেই নিজস্ব বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গঙ্গাব্যারাজসহ প্রস্তাবিত ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। এই মুহুর্তে সিলেট-সুনামগঞ্জের নজিরবিহিন বন্যায় আক্রান্ত-উদ্বাস্তু ৫০লক্ষাধিক মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে ক্রমবর্ধমান প্লাবনের অসহায় মানুষের সম্ভাব্য পুনর্বাসনে সরকারের তেমন কোনো প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যায়নি। বানভাসি লক্ষ লক্ষ মানুষ, গবাদি পশু, গোলার ধান-চাল ও সম্পদ রক্ষায় কার্যকর প্রস্তুতি না থাকায় অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মানুষ। দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত প্রভাব ও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া যত্রতত্র অবকাঠামো উন্নয়নের খেসারত দিচ্ছে আমাদের একেকটি জনপদ। অবকাঠামো উন্নয়নের চেয়ে মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে নিরাপদ রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
[email protected]



 

Show all comments
  • bongobudhdhu ২২ জুন, ২০২২, ১১:৫৯ পিএম says : 0
    Joy Bongobudhdhu.
    Total Reply(0) Reply
  • Mizan ২২ জুন, ২০২২, ২:২৭ পিএম says : 0
    Topics is good ! But no need to describe vote matters !
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ২২ জুন, ২০২২, ৯:৪৪ এএম says : 0
    সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না কুমিল্লায় সুষ্টু ভোট হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ২২ জুন, ২০২২, ৯:৪৫ এএম says : 0
    বন্যার্তদের জন্য সরকারে মোকাবেলা আরো জোরদার করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ২২ জুন, ২০২২, ৯:৪১ এএম says : 0
    কুমিল্লা সিটিতে বুঝা গেছে ইসির শক্তি। আগে প্রথম ভেবেছিলাম তারা সুষ্ঠু ভোট করবে। আসলে তারাও আগের ইসির মতো করবে। তারা শুধু চায় এ সরকার আরো ক্ষমতায় থাকুক।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২২ জুন, ২০২২, ৬:১৪ পিএম says : 0
    ইন্ডিয়া ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল যে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে ইন্ডিয়ার একটা অঙ্গরাজ্যে পরিণত করা এবং সেটা করেছে আমাদের যারা এখন দেশ শাসন করছে স্বাধীনতার পর তারা আমাদের দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে বিদেশ থেকে সাহায্য গুলো এসেছিল ইন্ডিয়া সেগুলো সব লুটপাট করেছে সেটাও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হবে আর এখনতো ইন্ডিয়া আমাদের দেশটাকে একদম খেয়ে ফেলেছে সবদিক থেকে কারণ যে সরকার দেশ চালায় সে তো আমাদের দেশকে ভালোবাসে না মানুষ কেউ ভালবাসে না ভালবাসে শুধু ক্ষমতা আর টাকা এদের ক্ষমতা চলে গেলে সব বিদেশে পালিয়ে যাবে আর আমরা মরবো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন