পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্যা পরিস্থির আরও অবনতি হয়েছে।নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহ রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন জেলা। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর এবার মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলেও বন্যা বিস্তৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২১ জেলার মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। মহুরি নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ফেনি জেলা। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা এসব জেলার আশ্রয় কেন্দ্রেও এখন আর মানুষের জায়গা হচ্ছে না। অনেক আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আর গবাদি পশু গাদাগাদি করে বসবাস করছে। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। ত্রাণের জন্য বন্যার্তরা ছাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছেন। কোথাও কোন নৌকা বা ট্রলার আসতে দেখলেই মানুষ থালা-বাটি নিয়ে ত্রাণের আশায় ছুটছেন। কিন্তু ত্রাণ পাচ্ছেন না। বিমানবাহিনীর সদস্যরা কোথাও কোথাও হেলিকপ্টার থেকে শুকনো খাবার ছুড়ে দিচ্ছেন। এ খাবার ধরার জন্য ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে চলে কাড়াকাড়ি। এ দৃশ্য দেখে সোমালিয়া বা সিয়ারালিয়েনের অনাহারি মানুষের খাবার নিয়ে টানাটানির দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে। ত্রাণের জন্য বানভাসিদের হাহাকার চলছেই। সেনাবাহিনী, প্রশাসন বা অন্য কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে যে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে তা খুবই সামান্য। এ ত্রাণে বানভাসি মানুষের এক বেলার খাবারও হচ্ছে না। সিলেট সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণার মানুষ গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যা কবলিত থাকলেও গত দু’দিন ধরে কোন কোন আশ্রয় কেন্দ্রে কিছু কিছু শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তবে বিশুদ্ধ খাবার পাসির সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া পয়:নিষ্কাসনের ব্যবস্থা না থাকায় বান্যর্তদের মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে ভাতের জন্য হাহাকার চলছে। সেই সঙ্গে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এ উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি স্কুল কলেজসহ দেড় শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে । এসব আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যা কবলিত লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও উঁচু স্হান হিসেবে খ্যাত টেকেরঘাট ও বাদাঘাট এলাকায় আত্মীয় স্বজনসহ ব্রিজ ও খোলা মাঠে গবাদিপশু নিয়ে তাঁবু টাঙ্গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার বানভাসি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, এক মুঠো ভাত ও শুকনো খাবারের জন্য হাহাকার চলছে। কেউ তাদের দেখতে গেলে থালা-বাটি নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন খাবারের জন্য। কোনো কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আর গরু একসঙ্গে বসবাস করছেন। খাবার জুটছে না একবেলাও।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, হবিগঞ্জ ছাড়া সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। গতকাল ৯টি নদ-নদীর পানি ১৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এসময়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। এর ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার নদ-নদীসমূহের পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বন্যাকবলিতদের পাশে দাঁড়াতে ও তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী সিলেট সফরে যাচ্ছেন আজ। তিনি আরও বড় বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকার প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল মন্ত্রীসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন।
সিলেট ব্যুরো জানায়, ভয়াবহ বন্যার চতুর্থ দিনে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জে। সিলেটের উঁচু জায়গা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি নেমেছে সুনামগঞ্জের প্রধান প্রধান সড়ক থেকেও। তবে শেষ হয়নি আশঙ্কা। স্থানীয় পাউবো এবং বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, গত রোববার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। এদিকে, সিলেটের সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বাড়ছে কুশিয়ারার পানি। তবে নগরীর বিভিন্ন এলাকা এখনও পানির নিচে। আর যেসব এলাকায় পানি কমে গেছে ওই সব এলাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে সুরমা নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বানবাসী মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে দিশেহারা তারা। খাবার নেই, নেই বিশুদ্ধ পানি। খাবারের অভাবে ক্রমশ: কাতর হয়ে পড়ছে তারা। বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা তথৈবচ। সীমাহীন এক কষ্টের মধ্যে পার করছে প্রতিটি মুর্হুত। সিলেট নগরীর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠিকমতো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না। দেখা মিলছে না জনপ্রতিনিধিদেরও। সেই সাথে নেই সিলেটের ভিআইপি, সিআইপি, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান ধনাঢ্যরা। অথচ তারা সিলেটবাসীর ক্রান্তি:লগ্নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারতেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। সিলেটে পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা ইনকিলাবকে জানান, ‘সুরমা নদীর পানি আরও কমবে।’ তিনি জানান, ‘কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও প্লাবিত এলাকার মানুষ এখনও অন্ধকারে রয়েছেন। এসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম সংঙ্কটে রয়েছেন নগরবাসী।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, জেলার যমুনা নদীতে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনায় ২২ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ৫২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সারিয়াকান্দি উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি ও ৯টি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও ল্যাট্রিনের অভাব। বন্যার্তদের মাঝ এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হয়নি। জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, উপজেলার চন্দনবাইশা রোহদহ গ্রাম রক্ষায় ভেড়িবাঁধের দুর্বল অংশে মেরামতের কাজ চলছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল জনপদসহ ফসলী জমি এখন প্লাবনের কবলে। ভোলার তজুমদ্দিনে মেঘনা এবং ঝালকাঠী ও বরগুনার পাথরঘাটার বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। তেতুলিয়া ও দৌলতখানে মেঘনা, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের বুড়িশ^র, বরগুনা সদরে বিষখালী এবং পিরোজপুরের বলেশ^র নদীর পানি বিপৎসীমার কাছে প্রবাহিত হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সমস্ত নদী বন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, গাইবান্ধা থেকে জানান, জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৪ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ৫৯টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ওইসব উপজেলার চরাঞ্চলসহ নতুন নতুন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন জানায়, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ৫৯টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে ৪১ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হওয়ায় লোকজনকে এখন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওই ৪ উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৮০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, জেলার খরস্রোতা গোমতী নদীতে পানি ক্রমেই বাড়ছে। কুমিল্লা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান ইনকলিবকে জানান, অব্যাহত বর্ষনে নদীতে বৃদ্ধি পাওয়া এ পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বেড়ে যাওয়ায় উৎকন্ঠার মাঝে রয়েছেন নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিচু এলাকায় প্রবেশ করছে পানি। তিনি আরো জানান, গতকাল দুপুরে গোমতী নদীর টিক্কারচর পয়েন্টে ৯ দশমিক ৯ মিটার উচ্চতায় গোমতীর পানি প্রবাহমান। এখানে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭৫ মিটার পর্যন্ত। যা বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত পানি প্রবাহ প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নদীর চরের কাছে দাঁড়িয়ে হা-হুতাশ করছেন। কেবল চরের ফসল নয়, চর এলাকায় বসবাস করা অনেকের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় মালামাল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লোকজন।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারতের ঢলে ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম উপজেলায় অবস্থিত মুহুরী নদীর বাঁধের ৪ স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে নদীতে পানি বিপৎসীমার ১.২৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর ১টি, দেড়পাড়া ১টি ও দক্ষিণ বরইয়া ১টি এবং পরশুরাম উপজেলার অলকায় ১টি স্থানে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে দুই উপজেলার প্রায় ১২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে মানুষের বসতঘর, রাস্তাঘাট, পুকুর, মৎস্যঘের ও বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে চলে গেছে। স্থানীয়রা জানান, গত দুই-চারদিন আগ থেকে মুহুরী নদীতে পানি বাড়তে থাকে। গতকাল নদীতে পানি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকালের দিকে মুহুরী নদীতে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। যেভাবে ভাঙ্গনস্থান দিয়ে পানি ডুকছে এর ফলে অনেক গ্রাম প্লাবিত হবে এবং নদীর ভাঙ্গন আরো বাড়তে পারে।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, সানিয়াজান ও স্বর্ণামতি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার পরিবার গত ৫ দিন থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়ে আছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। পানিবন্দি পরিবারের মাঝে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ১৫০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩ টায় হাতীবান্ধার দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫২.৯১ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। স্কুল কলেজ পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলার ১৬ টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও পোষাপ্রাণী গরু, ছাগল, হাস মুরগী নিয়েও অসহায় অবস্থায় রয়েছেন তিস্তা পারের লোকজন।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েয়ে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসনের তথ্য মতে, টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দূর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলার ৬৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। অসংখ্য পুকুর পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ। সবচেয়ে বেশী খারাপ অবস্থা কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলা। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ইনকিলাবকে জানান, নেত্রকোনা জেলায় বন্যা দূর্গতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লাখ নগদ অর্থ, ৩ শ ৩৩ মেট্রিকটন চাল ও ৪ হাজার ৯ শ ৫০ প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বন্যা দুর্গত লোকজনের মাঝে ১ শ ৩১ মেট্রিকটন চাল, ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা ও ২ হাজার ৩ শত শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
রংপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে সর্বগ্রাসী তিস্তা দুই কুল ছুইয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে তিস্তা অববাহিকার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাইসহ সবক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে জেলার গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর ও বাসাইল উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১১৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়াও ৫ হাজার একর জমির পাট, আউস ধানসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার পাউবো জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার, এছাড়াও ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের চরম সংকট। গবাদিপশু নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে বানভাসিদের।
মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অভ্যাহত রয়েছে। গতকাল দুপুরের পর থেকে মনুনদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় জেলায় ৫০ ইউনিয়নের ৫ শ গ্রামের ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি রয়েছেন। কুলাউড়া-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্নস্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষ বাড়ি-ঘড় ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র খুঁজছেন। পানি প্রবেশ করায় ইতোমধ্যে কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ইনকিলাবকে জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ২১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, দ্রুত গতিতে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল সকালে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রৌমারী উপজেলা। সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ইনকিলাবকে জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দফতর ও প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও আইন শৃংখলা সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বালাগঞ্জ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার প্রায় সবকটি গ্রাম। ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ। গতকাল উপজেলার ৮ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষের বসতঘরে উঠেছে বানের পানি। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কবরস্থান রয়েছে পানির নিচে। মানুষ এখন আশ্রকেন্দ্রের দিকে ছুটে চলেছেন। ভয়াবহ বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গত ৪ দিন ধরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ত্রাণের জন্য অপক্ষোয় রয়েছেন পানিবন্দি মানুষ। সরকারি সহায়তা না পৌঁছায় আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দারা ভুগছেন খাদ্য সংকটে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডাইকের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। প্রায় সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সাথে সংযুক্ত সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেলে নৌকাই এখন একমাত্র চলার বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নৌকা পর্যাপ্ত না থাকায় মানুষ বের হতে পারছেন না। অসহায় মানুষের জন্য ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায় ইনকিলাবকে জানান, সরকারি উদ্যোগে ৮ টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় বন্যার পানি বিপৎসীমার ৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ২ হাজার ৫ শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে পাট, আউস, বীজতলা, চীনা বাদামসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। এছাড়া উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে নদ-নদী ও খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর হয়েছে। হু-হু করে বাড়ছে বানের পানি। চরাঞ্চলের নিমজ্জিত ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উচু এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫ শ পরিবারের ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, অতিবর্ষন ও উজানের ঢলের পানিতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার তিনটি নদী মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর পানি বেশীরভাগ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার বিশাল এলাকা প্লাবিত হবার শঙ্কা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। ডুবতে বসেছে ফেনীর উত্তরাঞ্চল। ফুলগাজী সদরের উত্তর দৌলতপুরে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলের জমি ও মাছের ঘের, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহু মানুষ। ফলে কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকালে ফুলগাজী বাজারে পানি উঠে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের নেপাল সাহা জানান, মুহুরী নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকটি স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও তা ছুঁই ছুঁই করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।