পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সিলেট জেলার প্রায় পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এসব জেলারও ৯০ ভাগের বেশি অঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরে হাঁটু পানি। অনেক এলাকায় একতলা পানির নিচে। বাসায় বসবাসের অবস্থা নেই। নিরাপদ আশ্রয় খঁজছেন অনেকে। কিন্তু কোথাও নেই এতটুকু শুকনো জায়গা। বন্যার এমন ভায়ল রূপ গত ১০০ বছরেও সিলেট, সুনামগঞ্জবাসী দেখেনিন। বানভাসীদের উদ্ধারের সিলেট সুনামগঞ্জে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্ট গার্ড এবং ফায়ারসার্ভিসের কর্মীরা। সিলেটে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নেত্রকোণায়ও বেশ কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। টানা ভারি বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভী বাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
সিলেটের রেলস্টেশন, বিমান বন্দর পানির নিচে। ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া তলিয়ে গেছে জেলার সব রাস্তাঘাট। ফলে সারাদেশ থেকে সিলেট কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় বানের পানির নিচে থাকায় সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেটে সাময়িকভাবে বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। সব মিলিয়ে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে সিলেট, সুনামগঞ্জের বানভাসী মানুষের। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঢুকেছে পানি। সেখানে মানুষ আর গবাদিপশু ঠাসাঠাসি করে বাস করছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই, খাবার নেই, পয়:নিস্কাসনের ব্যবস্থা নেই। সিলেটে টাকা দিয়েও মিলছে না খাবার। সব মিলিয়ে বন্যার্তদের জীবন এখন দুর্বিষহ।
ভারি বৃষ্টি এবং ভারতের ঢলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও চরম অবনতি হয়েছে। এসময়ে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর জেলার নতুন নতুন এলঅকা প্লাবিত হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর এবার মধ্যাঞ্চলেও আসছে বন্যা। ইতোমধ্যে দেশের ২১ জেলায় প্রাথমিকভাবে বন্যা দেখা দিয়েছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে দেশের ৩৫ জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের প্রায় সকল প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্থানে মাঝারি থেকে ভারী কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সকল প্রধান নদ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসময়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে। কেন্দ্র জানায়, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, দুধকুমার, সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, খোয়াই, পুরতন সুরমা, সোমেশ্বরী ও কংসসহ ১১টি নদীর ১৭ পয়েন্টের পানি এখন বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বভাসে বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণবাগে ২২৬ মিলিমিটার। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার ও ভৈরববাজারে ১৭৫ মিলিমিটার, সিলেটের জকিগঞ্জে ১৫০ ও মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ১৪৫, সিলেট পয়েন্টে ১৪৩, হবিগঞ্জে ১৪৮ এবং সিলেটের শেরপুরে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারতের আগরতলায় সর্বোচ্চ ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চেরাপুঞ্জিতে ১২০ এবং ত্রিপুরার কৈলাশহরে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
মধ্যাঞ্চলেও আসছে বন্যা
দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর বন্যা মধ্যাঞ্চলেও ছড়াতে পারে। তবে রংপুর (উত্তরাঞ্চল) ও সিলেটের (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি আগামী সপ্তাহ থেকে উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কেন্দ্র জানায়, জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও পাবনা জেলায় ৭ থেকে ১০ দিন মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলায় ৫ থেকে ৭ দিন মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তীতে জুন মাসের চতুর্থ সপ্তাহের প্রথম ভাগে বৃষ্টিপাত কমে ওই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। জুন মাসের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে মধ্যাঞ্চলের রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সিলেট ব্যুরো জানায়, বন্যার কারণে নাজুক সিলেটের পরিস্থিতি। অবিরাম বৃষ্টি আর ভারতের ঢলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের অনেক এলাকায় নতুন করে পানি প্রবেশ করেছে। নগরীর মদীনা মার্কেট, বাগবাড়ি, সুবিদবাজার, কলাপাড়া, আম্বরখানা, চৌহাট্টাসহ অনেক উঁচু এলাকা গতকাল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রবল স্রোতসহ পানি প্রবেশ করতে থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এত প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। নগরের ড্রেন-রাস্তাা উপচে পানি প্রবেশ করছে বাড়িঘরে। এতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এদিকে, টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে দোকানপাট তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটে নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি দামেও মিলছে না চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য। এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় দেখা দিয়েছে মোমবাতি ও দেশলাই সংকট। বন্যার পানিতে বহু দোকান তলিয়ে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দেয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যায় বেশিরভাগ দোকান খুলছেন না দোকানিরা। এছাড়াও অসংখ্য দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। ৩৮ টাকা হালির ডিমের দাম বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে। ২০ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। দোকানে দোকানে ঘুরেও এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সকালে দোকান খুলিনি। দুপুরে বৃষ্টির পরিমাণ কমলে দোকান খোলা মাত্র ক্রেতারা লাইন দিয়ে নিত্যপণ্য ক্রয় করা শুরু করেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে গত দুই দিন ধরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলাই। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৪ লাখেরও বেশি মানুষ। ইতোমধ্যে পুরো সুনামগঞ্জ শহর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো সুযোগও নেই শহরবাসীর। ফলে পানিবন্দি অবস্থায় না খেয়েই দিন পার করছেন লাখো মানুষ। অনেকে ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। গত দুই দিন ধরে পুরো সুনামগঞ্জ শহর বিদ্যুৎবিহীন এবং মোবাইলে নেটওয়ার্ক না থাকায় কেউ কারো সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না। পানিবন্দি মানুষরা জানান, আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে আছি। এখন পর্যন্ত কেউ এসে আমাদেরকে ত্রাণ সহায়হা দেয়নি। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ইনকিলাবকে জানান, বন্যার্ত মানুষের মাঝে আমরা সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টিম বন্যা কবলিত মানুষদের উদ্ধার এবং খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছে।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, অবিরাম বৃষ্টিপাত আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে অবনতি হয়েছে লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতির। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলার ৫ উপজেলার ৩০ হাজার বানভাসি মানুষ। কিছু বানভাসি মানুষ গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও আসবাবপত্র নিয়ে সরকারি রাস্তা, বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে অধিকাংশই বাড়িতে পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নামলেও বিপদসীমার উপরে রয়েছে ধরলা নদীর পানি। নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা ৩ দিন ধরে অব্যাহত ভারি বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা জেলার ৬টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। পানির প্রবল তোড়ে মোহনগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথের ইসলামপুর নামক স্থানে রেল ব্রীজ ভেঙে গিয়ে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মোহনগঞ্জ রেলস্টেশনের জিআরপি ফাঁড়ি’র ইনচার্জ জানান, গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পানির প্রবল স্্েরাতে মোহনগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথের ইসলামপুর নামক স্থানে ব্রীজের দুই পাশে মাটি ধ্বসে গিয়ে ব্রীজ ভেঙ্গে যাওয়ায় সারাদেশের সাথে এ রেলপথে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ‘হাওড় এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি মোহনগঞ্জে আটকা পড়েছে। ফলে এ রেলপথে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, আখাউড়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার সীমান্তবর্তী ৩০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নানা ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসনের তথ্য মতে, গত শুক্রবার সকাল থেকে টানা ভারী বর্ষণ ও ত্রিপুরার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে এবং স্থলবন্দর এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলা কালন্দি খাল দিয়ে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানি হু হু করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কমলগঞ্জ উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে মুষলধারে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রযেছে। ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে ধলাই নদী সহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী ছড়া সমুহে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও প্লাবিত হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান জানান, বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চলের ফসলী জমিতে পানি প্রবেশ করছে। তবে কত টুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্ধারন করা হয়নি।
রাউজান (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভারতের ঢল ও ভারি বর্ষনে রাউজান উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা ঘাট ও ফসলের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। সরেজমিন দেখা গেছে, রাউজানের বিভিন্ন গ্রাম পানির নিছে ডুবে রয়েছে। কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষন ও উজানের পাহাড়ি ঢলের স্রোতে সর্তা, ডাবুয়া, কাঁসখালি ও রাউজান খালের পানি বৃদ্ধি হওয়ায় হলদিয়া, ডাবুয়া, চিকদাইর, খানখানাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি থৈ থৈ করছে।
ঝিনাইগাতী (শেরপুর ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইগাতী উপজেলা চত্তর ও উপজেলা শহরের পানি নেমে গেলেও ভাটি অঞ্চলে বন্যা পারিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। বাড়িঘরে পানি উঠায় বহু লোক পানিবন্দি হয়ে পরেছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘরে পানি উঠে পড়েছে। উজানের ঢলে শ্রীবরদী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাড়িঘরে পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা জানান, সদর উপজেলার পদ্মা নদীর ধাওয়াপাড়ার জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌপথের নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ঘাট ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় দু’দিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেরি ঘাটের সড়ক ও পল্টুন তলিয়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ করেছে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগে। গত বৃহস্পতি থেকে এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় এ রুটে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল সমুহের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শত-শত একর জমির পাটসহ বিভিন্ন ফসল। পানি বৃদ্ধির ফলে অষ্টমীরচর ইউনিয়নে গত কয়েক দিনের নদী ভাঙ্গনে ২০ থেকে ২৫ টি পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হওয়াসহ প্রায় ১০০টি পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে।
বুড়িচং (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কুমিল্লার গোমতি-ঘুংগুর নদীর পানি ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারত থেকে ব্যাপক স্রোতে বাংলাদেশে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া, বুড়িচং উপজেলার ছোট ছোট খাল বিল ও বিভিন্ন স্থানের পানি নামতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের ফসল ক্ষেত সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। যানবাহন চলাচলসহ সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায় বন্যার পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম ইনকিলাবকে জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
৫ দিনের জন্য বিমানের লন্ডনগামী ফ্লাইট বাতিল
সিলেট থেকে লন্ডনগামী সব ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানবন্দরের রানওয়েতে বন্যার পানি চলে আসায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল শনিবার থেকে ফ্লাইট বন্ধ থাকবে আগামী বুধবার পর্যন্ত। গতকাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ তথ্য জানিয়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ জানান, ফ্লাইটটি গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। সেটি বাতিল করা হয়। এর মধ্যে আবার আজ ও বুধবার বিমানের ঢাকা-সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট ছিল। সেগুলোও বাতিল হয়েছে। বেবিচক জানায়, বাতিল করা ফ্লাইটের তারিখ পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ (জিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার বলেন, পরের ফ্লাইটের বিষয়ে ২১ তারিখে সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছে বন্যার পানি চলে আসায় বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।