পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আষাঢ় মাস শুরু হতে না হতেই ফের বন্যার কবলে দেশ। দেশের ১২টি জেলায় বন্যার অবনতি ঘটেছে। ১২টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষ দিশেহারা। দুর্গত মানুষের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। রানওয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ হয়ে গেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাঁটু পানি হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জের তিস্তা, যমুনা, ধরলা, করতোয়া, ঘাগট ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার সঙ্গে নদী ভাঙনের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষ। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও শেরপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বহু গ্রামে পানি উঠেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলসহ তিস্তা চরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার বাড়িঘর। বন্যার কারণে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। খাবার পানি, খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিলেও বানভাসির জন্য ত্রাণের কোনো উদ্যোগের খবর শোনা যায়নি। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে মানুষ ঘরের চালে আশ্রয় নিয়েছে; গবাদিপশু নিয়ে হাঁটু পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। কেউ হাড়িপাতিল নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয়-আসাম থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮১১ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৭ বছরের মধ্যে এটি একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। পৃথিবীতে যেসব অঞ্চলে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় তার একটি হলো চেরাপুঞ্জি।
মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুর হাজার হাজার বসত ঘরে বানের পানিতে ডুবে গেছে। ছাতক ও সুনামগঞ্জ শহরের শতশত বসত ঘরের নিচতলায় কোমর পানিতে ডুবে আছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের এক মাসের ব্যবধানে দু’দফা বন্যার তৈরি হয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। পানি যত বাড়ছে, সঙ্কটও তত বাড়ছে। কোথাও ত্রাণ পাচ্ছেন না দুর্গতরা। তবে সিলেট সদর উপজেলার কিছু অংশ, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে নামছে সেনাবাহিনী।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সিলেট জেলার সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায়। এ ছাড়া, জেলার খাদ্য গোডাউন রক্ষা এবং সিলেটের কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশনেও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৬ জুন বিকেলেও যেসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ছিল রাতের মধ্যে তা বেড়ে গলাসমান হয়ে গেছে। ফলে গতকাল শুক্রবার সকালে অনেক মানুষকে ঘরের চালায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও তারা থাকতে পারছেন না। নৌকা না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছেন না অনেকে। সুনামগঞ্জের বানভাসি মানুষেরা জানান, বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাড়িঘরে আটকা পড়েছেন। তারা এ অবস্থা থেকে উদ্ধার চান। এ ছাড়া অনেক বন্যার্ত খাবার ও পানির সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি পড়েছেন। ঘরে হাঁটু থেকে গলাসমান পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে ত্রাণও পাচ্ছেন না। এতে তৈরি হয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। পানি যত বাড়ছে, সঙ্কটও তত বাড়ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাউবো পূর্বাভাসে জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উজানে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে মেঘনা এবং উত্তরাঞ্চল অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বার্তায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশের ১২টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো হলো- তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার, সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে ১০৮ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ১২০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী নদী কমলাকান্দা পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন নদী সারিঘাট পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, পুরাতন সুরমা নদী দেরাই পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার, যাদুকাটা নদী লরেরগড় পয়েন্টে ১৫৪ সেন্টিমিটার এবং ভুগাই নদী নাকুয়াগাও পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো আরো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মহেশখোলায় ৪০৭ মিলিমিটার, ছাতকে ৩৬৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ৩৭৫ মিলিমিটার, লরেরগড়ে ৩২০ মিলিমিটার, জাফলংয়ে ২৬৮ মিলিমিটার, কাউনিয়ায় ২২৫ মিলিমিটার এবং দুর্গাপুরে ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, উজানের ঢলের দখলে চলে যাচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জ। বাদ নেই সিলেট-সুনামগঞ্জ শহরও। সর্বত্রই পানির অকল্পনীয় এক আগ্রাসন। অতীত ইতিহাসের সকল রেকর্ড হার মেনেছে বন্যার পানির এ দাপট। সেই সাথে মুষলধারার বৃষ্টিতে জবুথবু জনজীবন। ঢলের স্রেতে নদ-নদী ভরে উপচে পড়ছে পানি নগর-লোকালয়ে। এতেই ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের অসহায়ত্ব। সবমিলিয়ে এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে সিলেট সুনামগঞ্জবাসী। এদিকে সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সুইচইয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট অঞ্চলও বিদ্যুৎ সরবরাহ। মাত্র ৪ ইঞ্চি পানি বাড়লে হয়ে যাবে সর্বনাশ। সেকারণে এ অবস্থায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ।
ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পর আকস্মিক বন্যায় ডুবেছে সুনামগঞ্জ। এরইমধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল সংযোগ নিয়ে এ বিভ্রান্তির পেছনে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকার কথা বলা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির বড় রকমের অবনতি হয়েছে সিলেটে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট নগরীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে জানান স্থানীয়রা। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বাসাবাড়ি রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু করছে সেনাবাহিনী। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যোগ দিয়েছে নৌবাহিনীর বোট ও ডুবুরি দল মোতায়েন করা হয়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল বন্যার্তদের উদ্ধারে সেখানেও কাজ শুরু করছে সেনাবাহিনী। বন্যাকবলিত এলাকার স্থানীয়রা জানান, বন্যায় যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জের সবার ঘরে খাওয়ার পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট নগরের ৮ থেকে ১০টি এলাকা ছাড়াও জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রাম এরই মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় জানায়, সিলেটের জেন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, লামাকাজী, বিশ্বনাথ এবং ওসমানীনগরসহ সবকটি এলাকায় পানিতে টইটম্বুর করছে। অনেক জায়গায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার বেশ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়াতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় তিন দিনের জন্য সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্যার পানি রানওয়ের কাছাকাছি চলে আসায় এ সিধান্ত নেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির ইনকিলবাকে জানান, ‘যেসব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কুমারগাও উপকেন্দ্র তলিয়ে গেলে দুই জেলার ৯০ শতাংশ সরবরাহই বন্ধ হয়ে পড়ে।’
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ‘কুমারগাওয়ে বিদ্যুৎ রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। সেনাবাহিনীও এখানে কাজ করছে। সেনাবাহিনী বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছে।
শাবি সংবাদদাতা জানান, সুরমা নদীর ফুসে উঠা পানির প্রবেশ ও লাগাতার বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) বিভিন্ন এলাকা। ক্রমবর্ধমান পানিতে পোকামাকড়, সাপ ও অন্যান্য শঙ্কায় গতকাল সকালে জরুরি এক সিন্ডিকেট সভায় আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। ঘোষণার পর থেকে সারা দিনব্যাপী আবাসিক হলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হল ত্যাগ করতে দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ‘এ’ এবং ‘ডি’ এর সামনের রাস্তায় সামান্য পানি জমা হলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতেই সে পানি বেড়ে হাঁটু সমান উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর পর থেকে সময় গড়ানোর সাথে পাল্লা দিয়ে কিলো রোড, ছাত্রীহলের রাস্তা, লাইব্রেরি ভবনের সামনের এলাকা, সবকটি একাডেমিক ভবনের সম্মুখ অঞ্চল, চেতনা ৭১, প্রধান সড়কসহ প্রায় সবকটি স্থান প্লাবিত হয়েছে। ফলে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, রিকশা, শিক্ষকদের কার, মোটর সাইকেলসহ সবরকমের যান চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে। প্লাবন ও টানা বৃষ্টির ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। লাইব্রেরি ভবনসহ বিভিন্ন ভবন ও ছাত্রী হলের পানি উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত মটর খুলে ফেলা হয়েছে।
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, ভারি বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বাড়ছে হু হু করে। ইতোমধ্যে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তার সবকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ৩০টি চরের প্র্রায় দেড় সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফসলি জমিসহ ঘর-বাড়ির চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দুই নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। তিস্তা ছাড়াও ধরলা, দুধকুমর ও ঘাঘটসহ ছোট ছোট নদীগুলোর পানি হু হু করে বেড়ে চলেছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি একরাতে ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাড়ছে অন্যন্য নদ-নদীর পানিও। গতকাল সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস তথ্য মতে, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করায় জেলা সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট। ধান, পাট ও শাকসবজিক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এখানকার চাষিরা। কুড়িগ্রাম পাউবো’র প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন ইনকিলাবকে জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে। তবে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলার পানি। এতে করে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
নীলফামারী থেকে মুশফিকুর রহমান সৈকত জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিস্তা অববাহিকার চর ও গ্রাম তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে।
নীলফামারীর তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপৎসীমার (৫২.৬০) ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাউবো’র ডালিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা ইনকিলাবকে জানান, রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যাকবলিত মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়ে। পানির চাপ মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তার পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, কৈইমারী, শৌলমারী ইউনিয়নের তিস্তার তীরবর্তী ও লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও গলা সমান ও হাঁটু পানিতে ডুবে আছে ঘরবাড়িসহ উঠতি ফসল। এতে চরাঞ্চলে চাষ করা বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
স্বপন বাঁধ এলাকার বাসিন্দা সবুজ ইসলাম জানান, গত বন্যায় আমাদের গ্রাম রক্ষা তিস্তা নদীর স্বপন বাঁধটি ভেঙে যায়। বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত হয়নি। এই বাঁধটি পিআইও অফিসের আন্ডারে। বাঁধ মেরামতের বরাদ্দ পেয়ে তিন দিন আগে ইউপি চেয়ারম্যান মেশিন লাগিয়ে বালু মাটি দিয়ে মেরামতের চেষ্টা চালায়। কিন্তু একদিন পর কাজ বন্ধ রেখে ইউপি চেয়ারম্যান আর এদিকে আসেনি ও আমাদের কোনো খবর নেয়নি। রান্না করে খাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি এখন নেই। শুকনা খাবার বিতরণ জরুরি হয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যেতে থাকে। বাসা-বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিতে হয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি এখনো। ডিমলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন ইনকিলাবকে জানান, ১৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আপাতত তা বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শেরপুর থেকে মো. মোরাজ উদ্দিন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টি পাত হওয়ায় পাহাড়ি এলাকার চারটি নদীর পানিই বৃদ্ধি পেয়েছে। মহারশি, ভোগাই, সোমেশ্বরি ও চেল্লাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহরে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধিতে জন দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে এ দুই উপজেলার ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হবে। ২৪ পাহাড়ি এলাকার ৪টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনে পক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে।
এসময় জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটিতে যাওয়া যাবে না। শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসন জানায়, কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও বারহাট্টার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে কাবু হয়ে গেছে। ঢলের পানিতে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্য পুকুর পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা কলমাকান্দা উপজেলা সদরসহ বড়খাপন, পোগলা, খারনৈ, লেঙ্গুরা ও রংছাতি ইউনিয়ন, দুর্গাপুর উপজেলা সদরসহ কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও চন্ডীগড় ইউনিয়ন। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলে এ সকল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতর বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ইনকিলবাকে জানান, কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত প্রতিটি উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সকালে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বিকেল থেকে ব্যারেজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার বিকেল তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তিস্তা ও ধরলা নদীর পাড়ের বাসিন্দারা। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর ইনকিলাবকে জানান, বন্যাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে দ্রুত খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হবে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে ফয়সাল হক, পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলসমূহের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির পাটসহ বিভিন্ন ফসল। পানি বৃদ্ধির ফলে অষ্টমীরচর ইউনিয়নে গত কয়েক দিনের নদীভাঙনে ১৫ থেকে ২০টি পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হওয়াসহ প্রায় ৩০টি পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।