পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি-ঘর ভেঙে বিক্ষোভে অংশ নেয়া মুসলিমদেরকেই কি টার্গেট করা হচ্ছে? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উত্তরপ্রদেশে রাজ্যে প্রয়াগরাজ, সাহারানপুর ও কানপুরে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে এগুলো অবৈধভাবে নির্মিত কিন্তু স্থানীয় লোকজন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন - মুসলিমদের টার্গেট করেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে।
সবশেষ ঘটনা ঘটেছে রোববার, প্রয়াগরাজ শহরে - যার আগেকার নাম ছিল এলাহাবাদ। এ শহরেরই করেলি এলাকায় ওয়েলফেয়ার পার্টির একজন নেতা জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়। বলা হচ্ছে, তিনি ছিলেন গত শুক্রবার এ শহরে জুম্মার নামাজের পর যে সহিংস বিক্ষোভ হয় তার ‘প্রধান পরিকল্পনাকারী’। সম্প্রতি ইসলামের নবীকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র নুপুর শর্মা যে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তার প্রতিবাদেই ওই বিক্ষোভ ডাকা হয়েছিল। এর আগে শুক্র ও শনিবার সাহারানপুর ও কানপুরেও কয়েকজন মুসলিমের বাড়ি ভেঙে দেয়া হয় বুলডোজার দিয়ে। এপ্রিল মাসে দিল্লিতে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের পর বেশ কিছু মুসলিম বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়। তারও আগে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অন্তত: ৪৫টি মুসলিম বাড়িঘর একই ভাবে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব বাড়ি অবৈধভাবে নির্মিত। কিন্তু স্থানীয় লোকেরা বলছেন, দাঙ্গায় উস্কানির অভিযোগের নাম করে বিজেপি- নেতৃত্বাধীন প্রশাসন আসলে মুসলিমদের ঘরবাড়ি ভাঙছে।
প্রয়াগরাজে কি ঘটেছে : ভারতে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নুপূর শর্মা ইসলামের নবীকে নিয়ে যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন - তার প্রতিবাদ জানাতে ভারতের মুসলিমরা সেদেশের নানা স্থানে গত কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। এর মধ্যে বিশেষ করে প্রয়াগরাজ এবং সাহারানপুরে জুম্মার নামাজের পর বের করা বিক্ষোভ থেকে ব্যাপক সহিংসতার সূত্রপাত হয়। এর পর উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আটটি জেলা থেকে তিন শতাধিক লোককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, প্রয়াগরাজের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাভেদ আহমদ হচ্ছেন এই সহিংসতার প্রধান পরিকল্পনাকারী। প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে বলে একটি নোটিশ দেয়। রোববার সকাল ১১টার মধ্যে তাকে বাড়িটি খালি করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয় । কারণ হিসেবে বলা হয় - বাড়িটি অবৈধভাবে নির্মিত। এরপর বুলডোজার এসে বাড়িটি ভেঙে দেয়।
শনিবার কানপুর শহরে মোহাম্মদ ইশতিয়াক নামে এক ব্যক্তির নতুন তৈরি করা বাড়িটি ভেঙে দেয়া হয়। বলা হয়, তিনি কানপুরের সহিংসতার প্রধান অভিযুক্ত জাফর হায়াত হাশমির ঘনিষ্ঠজন। পুলিশের একজন কর্মকর্তা আনন্দ প্রকাশ তিওয়ারি বলেন, নিয়মনীতি অনুসরণ করেই ভবনটি ভেঙে দেয়া হয়েছে, এবং ভূমিদস্যুদের অবৈধভাবে নির্মিত বাড়িঘরের বিরুদ্ধে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এ ছাড়া সাহারানপুর শহরেও শুক্রবারের বিক্ষোভের পর মোট ৬৪ জনকে গ্রেফতার তরে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুজন মোজাম্মেল ও আবদুল বাকিরের বাড়িও ভেঙে দিয়েছে সাহারানপুরের পৌর কর্তৃপক্ষ। পুলিশ বলছে, এসব বাড়ি অবৈধভাবে নির্মিত। একইভাবে বাড়ি ভাঙা হয় দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতেও এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরী এলাকায় হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ হয়। একটি হিন্দু মিছিল ওই এলাকার মসজিদের পাশ দিয়ে যাবার সময় সহিংসতা শুরু হয় - যাতে আহত হয় প্রায় ৯ জন। এর মধ্যে সাতজনই ছিল পুলিশ। এ ঘটনার জন্য হিন্দু ও মুসলমান দু›পক্ষই একে অপরকে দায়ী করে। এর পরই সেখানে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের ভাষায় ‘অবৈধ বাড়িঘর’ ভাঙার কর্মসূচি শুরু করে। ওই এলাকার পৌর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে ভারতের শাসক হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি। সেখানকার মুসলমানরা বলছেন, বিশেষভাবে তাদের বাড়িঘরকে লক্ষ্য করেই ভাঙচুরের এই অভিযান চালানো হয়েছে। জাহাঙ্গীরপুরীর বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাদের কোন নোটিশ দেয়া হয়নি। এই অভিযান থামানোর জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি অন্তর্বতী আদেশ জারি করার পরও এক ঘণ্টা সময় ধরে উচ্ছেদ অভিযান চলে। দিল্লিতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার পর জাহাঙ্গীরপুরীতে উচ্ছেদ অভিযান। কিন্তু মুসলমানরা বলছেন, শুধু তাদের ঘরবাড়ি টার্গেট করা হয়েছে।
মে মাসে দিল্লির শাহীনবাগ এলাকায় যেখানে ২০১৯-২০ সালে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা হয়- ‘অবৈধ দখলদারি উচ্ছেদের জন্য’ বুলডোজার পাঠানো হলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে বুলডোজার ফিরে যায়।
মধ্যপ্রদেশ : দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশে যা ঘটছে - তার সাথে মধ্যপ্রদেশে এপ্রিল মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর অনেক মিল রয়েছে। মধ্যপ্রদেশেও ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। সেখানকার খারগোন নামের একটি ছোট শহরে হিন্দুদের রামনবমী উৎসবের সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছিল । মুসলিম এলাকার মধ্যে দিয়ে একটি হিন্দু মিছিল যাওয়ার সময় তৈরি হওয়া গোলমাল থেকেই সেই দাঙ্গার সূচনা। তার পর খারগোন শহরের বাসিন্দা মুসলমানরা বলেন, ওই ঘটনার পর তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্টে বলা হচ্ছে রাজ্যটিতে কমপক্ষে ৪৫টি মুসলিম বাড়ি এখন পর্যন্ত ভেঙে দেয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ কি বলছে : ভারতে যেখানে যেখানে এরকম অভিযান হয়েছে সেখানকার পুলিশ বা কর্তৃপক্ষ মোটামুটি একই ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। পুলিশ বলছে, এটা হচ্ছে সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত বাড়িঘর-দোকানপাট বা স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান। কর্তৃপক্ষ বলে থাকে যে কোন নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে এসব অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। কিন্তু প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি ও বিজেপির নেতাদের কথাবার্তায় ভিন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
মধ্যপ্রদেশে রামনবমীর দাঙ্গার সময় রাজ্য সরকার সরাসরি মুসলিমদের এজন্য দোষারোপ করে। রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র তখন একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছিলেন যে মুসলিমরা যদি এরকম আক্রমণ চালায় তাহলে তারা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে পারে না। ‘যেসব বাড়ি থেকে পাথর ছোঁড়া হয়েছে সেই বাড়িগুলোকেই পাথরের টুকরোয় পরিণত করার’ কথাও বলেন তিনি। মানবাধিকার কর্মী বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, একজনের অপরাধে সব মুসলিমকে একবারে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ইন্দোর শহরের একজন উর্ধতন আইনজীবী আশহার ওয়ারসি বলেছেন, অবৈধভাবে নির্মিত ভবন ভেঙে দেবার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের আছে। কিন্তু তার আগে কর্তৃপক্ষকে অন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে আছে, ভবনের মালিককে একটি নোটিশ দেয়া, তাকে এর জবাব দেয়ার বা আদালতের কাছে যাবার সুযোগ দেয়া।
তা ছাড়া মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ১৯৫৬ সালে পাস হওয়া একটি নিজস্ব আইন আছে যাতে প্রথমে অভিযুক্তকে জরিমানা করাসহ অন্য কিছু পদক্ষেপেরও কথা বলা আছে। কর্তৃপক্ষ বাড়ি ভাঙার আগে সেগুলোও ব্যবহার করতে পারতো- বলছেন মি. ওয়ারসি। কিন্তু বিবিসির সংবাদদাতারা মধ্যপ্রদেশে ঘটনাগুলোর পর অন্তত তিনটি পরিবারের সাথে কথা বলেছেন যারা এরকম কোন নোটিশ পাবার কথা অস্বীকার করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোন অপরাধের অভিযোগের শাস্তি হিসেবে এভাবে বাড়িঘর ভেঙে দেয়াটা কোনভাইেই আইনসিদ্ধ হতে পারেনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাহুল ভার্মা বলছেন, এখানে আইনকে একটা আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বাড়ি যদি অবৈধই হবে তাহলে তো তা বিক্ষোভের আগেও ছিল। আপনি এভাবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারেন না কারণ তা যথাযথ প্রক্রিয়ার বরখেলাপ। রাষ্ট্র এখানে প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা দেখাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।