চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুফতি আবদুল হক (পীর সাহেব, মহেশখালী)
॥ এক ॥
আরবি তাবলীগ শব্দের অর্থ- পৌঁছে দেয়া। আর তাবলীগ জামাত মানে, প্রচারক দল, প্রচার সংঘ। বস্তুত মহান আল্লাহ বিশ্ব মানবতার কল্যাণে বিশ্ব নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে যে দ্বীন প্রবর্তন করেছেন তার যথাযথ প্রচার-প্রসার করার নাম হচ্ছে তাবলীগ। আল কুরআনে এসেছে, হে রাসূল! তোমার নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তুমি তা তাবলীগ করো। আর যদি তাবলীগ না করো তাহলে তো তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলে না। (সূরা মায়েদাহ্ আয়াত : ৬৬)।
তাবলীগ জামাতের শুভ সূচনা
বলাবাহুল্য তাবলীগ বা দ্বীনের প্রচার-প্রসার ইসলামের একটি অন্যতম ফরয বিষয়। ইল্ম অর্জন করা যেমন ফরয, তেমনি সেই ইল্ম অনুযায়ী যথাসাধ্য ইসলামের দাওয়াত প্রদান, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাও ফরয। যুগ-যুগান্তরে মুসলিম মনিষীগণ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সেই ফরয কাজ আঞ্জাম দিয়ে আসছেন-দাওয়া কর্মের জোয়ারকে বলবৎ ও বহাল রেখেছেন। কিন্তু ব্রিটিশ বেনিয়াদের অপতৎপরতা ও অপকৌশলের কারণে সেই জোয়ারে লেগে যায় প্রচ- ভাটার টান। স্তিমিত হয়ে যায়, সাকুল্য দাওয়াত ও তাবলীগ। তথাপি উপর্যুপুরি বদদ্বীনি সয়লাব আর টর্নেডোতে মুসলমান, মুসলমানী আমল-আখলাক, নীতি-নৈতিকতা, মানবতা ও উদারতা সবই হারিয়ে ফেলে। মুসলিম প্রজন্ম ইসলাম মুসলমানী আল্লাহ ও রাসূলকে বেমালুম ভুলতে বসেছে। তখন উপমহাদেশের বিদগ্ধ দায়ী ও মনিষীগণ আল্লাহর কাছে এই এলাকার ইসলাম ও মুসলমানী সুরক্ষার জন্য উহ্! বুক ফাটা কান্না-কাটি করেন। দাওয়াত ও তাবলীগের মিশন পুনরায় চালু করার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তাদের অন্যতম হলেন, প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, আশেকে রাসূল মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াছ (রা.) (১৮৮৫-১৯৪৪)। তিনি ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের রাজস্থানের মেওয়াত নামক এলাকায় সর্বপ্রথম তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন। অত:পর ১৯২০ সালে দিল্লিতে তাবলীগের কর্মতৎপরতা বিস্তৃতি ঘটে।
পঞ্চাশের দশকে মাও. আব্দুল আজিজের প্রচেষ্টায় ঢাকা ও এর আশপাশে তাবলীগের কার্যক্রম আরম্ভ হয়। অতঃপর তা সারাদেশে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি ভারত উপমহাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
তাবলীগি কার্যক্রম সূচনার পর হতে নেতৃত্ব প্রদান করেন- এর প্রতিষ্ঠাতা ওলীয়ে কামেল হযরত মাওলানা ইলিয়াছ (রহ.)। ১৯৪৪ সালে তিনি ওফাত লাভ করলে তাবলীগের হাল ধরেন তারই পুত্র বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ, মাওলানা ইউছুপ সাহেব (রহ.)। শায়খুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া (রহ.) তাবলীগ কর্মীদের পাঠ্য হিসেবে ‘তাবলীগে নেসাব’ গ্রন্থসহ বহুগ্রন্থ রচনা করেন। মাওলানা ইউছুপ সাহেব (রহ.) ও শায়খুল হাদীস জাকারিয়া (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তখন বিশ্ব তাবলীগ জামাতের নেতৃত্ব দান করেন মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.)।
বার্ষিক এজতেমা থেকে বিশ্ব এজতেমা
১৯৪৮ সালে হযরত মাওলানা ইউছুপ সাহেব (রহ.)-এর উপস্থিতিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকার কাকরাইলে ১ম বার্ষিক এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে তাবলীগের বড় এজতেমা হয়। ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬০, ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে বার্ষিক এজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার রমনা ময়দানে। ১৯৬৬ সালে সর্বপ্রথম টঙ্গীর তুরাক তীরে এজতেমার আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিস্তীর্ণ ও বিশাল ময়দানটি তাবলীগের এজতেমার জন্য ব্যবস্থা করে দেন। ফলশ্রুতিতে এখানে নিয়মিতভাবে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যা আশির দশক হতে বিশ্ব এজতেমার রূপ পরিগ্রহ করে। পাকিস্তানের রাইভেন্ড ও ভারতের ভুপালেও বৃহৎ এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের এজতেমা সুবৃহৎ ও সুবিশাল। বাস্তবতার নিরিখেও এটি এজতেমা বটে, কারণ বিশ্বের অর্ধশতকেরও বেশি দেশের লোক ঢাকার এজতেমায় সমবেত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।