পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর দৃষ্টিদন্দন বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিল অরক্ষিত। এখানে প্রায়ই খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, বখাটেদের উৎপাতের মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। গত বুধবার সকালে হাতিরঝিল থেকে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের মো. আব্দুল বারী নামের একজন সংবাদকর্মীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেও এখান থেকে বেশ কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বছর ৬ জানুয়ারি মগবাজার ফ্লাইওভারের পাশ থেকে মিজানুর রহমান নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের হাতে সে নিহত হয়। আটক ছিনতাইকারীরা পুলিশের কাছে স্বীকার করে, তারা আরো তিনটি খুনের সঙ্গে জড়িত। গত বছরের ১২ অক্টোবর মেরুল-বাড্ডা প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। তারও আগে সিরাজুল ইসলাম নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। সে ছিল ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এরকম আরো লাশ উদ্ধারের ঘটনা হাতিরঝিল এলাকায় ঘটেছে। এই এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায়ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে সহজেই বুঝা যায়, হাতিরঝিলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। শুধু তাই কি? পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিল চলে যায় ভবঘুরে, ছিনতাইকারী, মাদকসেবীসহ বিভিন্ন অপরাধী চক্রের দখলে। আলোর স্বল্পতার সুযোগে চলে অনৈতিক কাজ-কারবারও। অথচ, বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এর নান্দনিকতা সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। রাজধানীতে বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার আর একটি জায়গা হয়েছিল। বিনোদনপ্রত্যাশী মানুষের কাছে এটি একটি অনিবার্য গন্তব্যে পরিণত হয়েছিল। সেই হাতিরঝিল এখন এতটা অরক্ষিত, এতটা অনিরাপদ কীভাবে হলো, সেটাই প্রশ্ন।
বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, রমনা ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে হাতিরঝিল। হতে পারে এই বিশালত্বই তার অরক্ষিত থাকার অন্যতম কারণ। এর মাঝবরাবর দুই পয়েন্টে পুলিশের অবস্থান দেখা যায়। বাকী পুরো এলাকাই অরক্ষিত। পুলিশ-টহলের ব্যবস্থাও নেই বললে চলে। ফলে রাতের গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা অপরাধীদের অভয়ক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৮.৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেস রোড, ৯.৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, চারটি সেতু, চারটি ওভারপাস, তিনটি ভয়াডাক্ট ও দুটি ইউকূপ। এসব রক্ষণাবেক্ষণসহ পুরো এলাকা নিরাপদ রাখতে প্রচুর অর্থ ও প্রয়োজনীয় জনবল দরকার। এখানে বিশেষভাবে বলে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে এর উদ্বোধন হয়। এরপর থেকে ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। ২০২১ সালের ৩০ জুন রাজউকের কাছে প্রকল্প হস্তান্তর করা হয়। তারপর প্রায় এক বছরে হারিতঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তার ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। এ সময় বিভিন্ন অপরাধী চক্রের নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্র হয়েছে এই বিনোদন স্থানটি। জানা গেছে, এর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বছরে প্রয়োজন প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ডিপিপিতে কোনো বরাদ্দ না থাকায় অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। প্রকল্প এলাকায় দোকান-পাট বরাদ্দ বাবদ বছরে ১০ কোটি টাকা আসে। এই ১০ কোটি টাকার বাইরেও আরো ৮ কোটি টাকার প্রয়োজন, যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ অর্থ রাজউককেই দিতে হবে। অর্থাৎ অর্থের সংস্থান নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দ্রুতই এই জটিলতা দূর হওয়া উচিত। এও জানা গেছে, গোটা হাতিরঝিলের নিরাপত্তায় আছে ১৭১ জন কর্মী, যারা তিন শিফটে দায়িত্বপালন করে। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং গাছগাছালি দেখভাল করার জন্য আছে ৫৬ জন কর্মী। এত অল্পসংখ্যা নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পক্ষে প্রকল্পের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা কীভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব?
হাতিরঝিলকে জাতীয় সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এই সম্পদ সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা নেই। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! হাতিরঝিল কেবল মাত্র আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র নয়, শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার উন্মুক্ত জায়গা নয়, নগরীর বিভিন্ন এলাকার মধ্যে সংযোগ রক্ষায়ও এর ভূমিকা রয়েছে। মগবাজার, তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, ফার্মগেট, কারওরানবাজার, বেগুনবাড়ি ইত্যাদি এলাকার অধিবাসীদের যাতায়াতের সুবিধা দিচ্ছে হাতিরঝিল। এহেন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তার অভাব থাকবে কিংবা তা ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হিসাবে ব্যবহৃত হবে, কোনোভাবেই সেটা মেনে নেয়া যায় না। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, গোটা ঝিল এলাকা তরল ও কঠিন বর্জ্যে ভরে গেছে। পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়েও নাকে রুমাল দিতে হয় কোনো কোনো এলাকায়। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ আছে, রাজউক আছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আছে, আছে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তারা বহাল তবিয়তে থাকতে হাতিরঝিলের নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এত বেহাল কেন? আমরা আশা করবো, হাতিরঝিলের নিরাপত্তা অবিলম্বে নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে একে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রাখার ব্যবস্থাও করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।