পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারি করোনার প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। বিশ্ববাজারে সরবরাহ-সঙ্কট ও উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার এখন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতির পারদ আরও চড়েছে। যদিও সেই হিসাব নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এরপরও গত এপ্রিলে দেশ দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি (৬ দশমিক ২৯ শতাংশ) দেখেছে। যা মে মাসে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও বিশ্ববাজারের প্রভাবে যতটা না দাম বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে স্থানীয় বাজারের কারণে। আর বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার অন্যান্য দেশের চেয়ে ব্যতিক্রম। কারণ এখানে কাজ করছে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। মুনাফালোভী এই গোষ্ঠীটি অবৈধভাবে পণ্য মুজুদ রেখে স্থানীয় বাজারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে মূল্যস্ফিতি। তাই বিবিএস’র মূল্যস্ফীতির হিসাব বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত নয় বলছেন আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বিবিএস’র মূল্যস্ফীতির হিসাব সেকেলের। বর্তমান বাস্তবতায় মূল্যস্ফীতির হার এখন ১২ শতাংশের বেশি। আর তাই আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পণ্যের চড়া দাম থেকে ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশন কার্ড পদ্ধতি চালুসহ সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে করে সরকারের খরচ বাড়লেও, রাজস্ব আদায়ে অমনোযোগী খাতগুলোর মাধ্যমে সেই খরচ তোলাও সম্ভব। দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আড়াই বছর আগে এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে মোট জনগোষ্ঠীর ৫৪ শতাংশ সব সময়ই আবারও গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সেই হিসাবে এই জনসংখ্যা এখন আট কোটিরও বেশি। তারওপর নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে প্রতি একশো টাকার বিপরীতে বাড়তি প্রায় সাড়ে ছয় টাকা।
দেশের আর্থিকখাতের বিশ্লেষকরা বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আমদানি খরচ কমাতে ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখার কৌশল খুজতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। আসছে বাজেটে গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো এবং সেই অর্থ কোথা থেকে আসবে সে বিষয়েও দিকনির্দেশনার কথা বলেছেন। সর্বোপরি দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে অর্থ অপচয় রোধেও মনোযোগী হওয়ার কথা বলেছেন।
অবশ্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইতিমধ্যে বলেছেন, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী খাতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টাও থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেছেন, বিবিএস পুরোনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না। সেলিম রায়হান বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ খুবই চাপে আছে। ভাত না খেয়ে অন্য কিছু খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে অনেক মানুষ। একই কথা বলেন অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বিবিএস’র মূল্যস্ফীতির তথ্য বিস্ময়কর। এটা দেশের কোনো মানুষই বিশ্বাস করে না।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হিসাব বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। বাজারের যে অবস্থা তাতে মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রেক্ষাপটে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকারি ভর্তুকি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা সামলানো, উৎপাদনমুখী উন্নয়নকাজ অব্যাহত রাখা এবং জীবিকা রক্ষার জন্য ‘আমদানি মূল্যস্ফীতি’কে অর্থনীতির মূল শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরের জন্য আটটি চ্যালেঞ্জিং কাজের তালিকা প্রস্তুত করেছে।
বাজেট প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন, এমন অর্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সম্পূর্ণ ধাক্কা যেন ভোক্তাদের কাঁধে না চাপে, সেজন্য নতুন বাজেটের অন্যতম অগ্রাধিকার হবে জ্বালানি, গ্যাস ও সারের বাড়তি ভর্তুকির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো।
সরকারের কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য আমদানি কমানো, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পিছিয়ে দেয়া ও সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে রাখা। এছাড়া বাজেট ঘাটতি কমাতে রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে সহায়তা দেয়াও করণীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় খুব কৌশলী হবে। তবে মূল কৌশল হবে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা অক্ষুন্ন রেখে সরবরাহ বাড়ানো। সেজন্য পরিচালন বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি ক্রয়, নতুন ভবন নির্মাণসহ বিলাসিতা ও কম গুরুত্বপূর্ণ খরচগুলো কমিয়ে উৎপাদনমুখী কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
আমদানি ব্যয় যেন যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা যায়, সেজন্য দেশীয়ভাবে উৎপাদিত বিলাসদ্রব্য ও পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়াবে, এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রয়োজনে এসব প্রকল্পে বাড়তি বরাদ্দও দেয়া হবে। এছাড়া বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।
অর্থবছরের শুরুতেই জ্বালানি জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ কারণে এই তিন খাতে ভর্তুকি বাড়তে চলেছে। যদিও গতকাল দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হলে এবং দেশ দুটির আমদানি-রফতানি বাণিজ্য স্বাভাবিক না হলে তখন সরকার ভর্তুকি কমিয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা আশঙ্কা করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার কয়েক দফা অবমূল্যায়নের ফলে দেশের প্রধান ভোগ্যপণ্যসমূহেরর দাম আরও বাড়তে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের নয়টি ‘কৌশলগত পণ্য’ জ্বালানি তেল, এলএনজি, গম, রাসায়নিক সার, পাম তেল, সয়াবিন তেল, কয়লা, ভুট্টা ও চালের দাম বেড়েছে। চলতি বছর এই পণ্যগুলো গত বছরের সমপরিমাণ আমদানি করা হলেও এগুলো আমদানি করতে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে শুধু মূল্যবৃদ্ধির কারণে। সরকারি তথ্য বলছে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার জন্য এই অতিরিক্ত আমদানি ব্যয়ই দায়ী।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১১৩ ডলারের বেশি হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে অন্তত ১২ গুণ। আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি বছরের এপ্রিলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ, আর ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে তিন গুণ। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সয়াবিন তেলের দাম ৪০ শতাংশ, গমের দাম ৮০ শতাংশ এবং চিনির দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে। শিল্প কাঁচামাল ও পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেছে।
চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) বলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট চলছে দেশে। এই বাস্তবতায় সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে অপ্রয়োজনীয় লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে হবে বলে মত দিয়েছে তারা। এমসিসিআই বলেছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে; তা না হলে ভর্তুকি ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। আর মূল্যস্ফীতি মোকাবিলাই হবে আগামী দিনের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, ডলার সঙ্কট ও মূল্যস্ফীতি দেশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়, সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে সমষ্টিগতভাবে কাজ করতে হবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।