পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমরা গভীর বেদনা ও উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছে। গত শনিবার রাত নয়টার দিকে বিএম কন্টেইনার ডিপো নামের ওই ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকাণ্ডের সময় ডিপোতে ৫০ হাজারের বেশি কন্টেইনার ছিল। কী কারণে আগুনের সূচনা, সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কেমিক্যালকন্টেইনার থেকেই আগুন লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে একের পর এক কন্টেইনার বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে এবং আগুন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। কয়েক শত শ্রমিক ওই সময় ডিপোতে কাজ করছিল। বিস্ফোরণ ও আগুনের লেলিহান শিখায় তারা সম্পূর্ণ বেদিশা হয়ে পড়ে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে এবং চারশর মতো আহত হয়েছে। ঘটনার পর পরই হতাহতদের চট্টগ্রামের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা শুরু হয় এবং রাত দুইটার পরও আনা অব্যাহত ছিল। অগ্নিদগ্ধ অনেককে ইতোমধ্যে ঢাকাতেও আনা হয়েছে। এত অধিক সংখ্যক মানুষ অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়েছে যে, আশংকা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কন্টেইনারে কেমিক্যাল বা দাহ্যপদার্থ থাকা অসম্ভব নয়। পত্রপত্রিকার খবরে অন্তত একটি কন্টেইনারে যে কেমিক্যাল ছিল তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে। ওই কন্টেইনার থেকেই আগুন অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। আরো কন্টেইনারে কেমিক্যাল থাকতে পারে, এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। কন্টেইনারগুলোতে কী কী মালামাল ছিল, যখন তার পূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে, তখনই সেটা বুঝা যাবে।
কেমিক্যাল বা দাহ্যপদার্থ যেখানে থাকে সেখানে আগুন লাগলে আগুন কী ভয়ংকর রূপ নেয় কিংবা কী বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়, আমাদের সেটা অজানা নয়। পুরানো ঢাকার নিমতলী ও চকবাজার ট্রাজেডির কথা কি কারো পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব? মানবিক ও সম্পদের ক্ষতি ছিল ব্যাপক। ওই দুটি অগ্নিকাণ্ডেরই উৎস ছিল অরক্ষিত কেমিক্যাল গোডাউন। কেমিক্যাল নানা ধরনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন কাজে সেসব কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। আমদানিকৃত কেমিক্যাল কন্টেইনারেই আসে এবং কন্টেইনার ডিপোগুলোতে সাময়িকভাবে থাকে। সেখান থেকে গন্তব্য স্থানে যায়। কেমিক্যাল গুদাম ও দোকান সুরক্ষিত অবস্থায় রাখতে হয়, যাতে কোনো কারণে আগুন না লাগে কিংবা বিস্ফোরিত না হয়, ঠিক অনুরূপভাবে কন্টেইনার ডিপোগুলোও সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখতে হয়। সব ধরনের মালামালের নিরাপত্তার জন্যই এর প্রয়োজন অপরিহার্য। আমরা জানি না, বিএম ডিপোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন ছিল। আগুনের উৎস ও কারণ উদঘাটনের সঙ্গে সঙ্গে ডিপোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন ছিল, সেটাও দেখা দরকার। এই ঘটনার অনুপুংখ তদন্ত হতে হবে। তদন্তে যারা দোষী সব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। তদন্ত, বিচার, শাস্তি ইত্যাদিতে, যারা নিহত হয়েছে, বলা বাহুল্য, তারা ফিরে আসবে না কিংবা যারা আহত হয়েছে তারা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে না; কিন্তু এ থেকে অন্যরা সতর্ক ও সাবধান হবে, যাতে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা কম ঘটবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করে আসছি, কেমিক্যাল গুদাম ও দোকানের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিদারুন অবহেলা ও উপেক্ষা প্রদর্শিত হচ্ছে। পুরানো ঢাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে কেমিক্যাল গুদাম ও দোকানের বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এমন কি গুদাম ও দোকান অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সিদ্ধান্তগুলোর একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। পুরানো ঢাকার অধিবাসীরা আগের মতোই দুর্ঘটনার ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটলে প্রায়শই ব্লেম গেম শুরু হয়ে যায়। এক কর্তৃপক্ষ অন্য কর্তৃপক্ষের ওপর দোষ আরোপ করে। কখনো কখনো রাজনৈতিক দলগুলোও এই ব্লেম গেমে শামিল হয়ে পড়ে। এ ধরনের ব্লেম গেম যখন হয়, তখন ঘটনার গুরুত্ব হালকা হয়ে যায় বা কমে যায়। কখনো কখনো এ কারণে ঘটনার তদন্ত ব্যহত বা শ্লথ হয়ে যায়। একই কারণে অনেক ঘটনার শেষ পর্যন্ত তদন্তও হয় না। অতীতে এ ধরনের নজির আছে বলেই আলোচ্য ঘটনার ক্ষেত্রে তেমন কিছু যাতে না ঘটে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কন্টেইনার ডিপোগুলোতে বিশৃংখলা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় খবরাখবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাতে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন তেমন একটা লক্ষ করা যায়নি। কন্টেইনার ডিপোগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নড়বড়ে। এমতাবস্থায়, চুরি-চামারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা ঘটাও অসম্ভব নয়। ডিপোর নিরাপত্তা, মালামালের নিরাপত্তা, কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের নিরাপত্তা- এই বিষয়গুলো মোটেই হেলাফেলার নয়। অতঃপর আমরা আশা করতে চাই, কন্টেইনার ডিপোগুলোর সার্বিক অবস্থা তদন্তে একটি উদ্যোগ নেয়া হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। এক্ষেত্রে ত্রুটি, বিচ্যুতি, অবহেলা, উপেক্ষা ও ব্যর্থতা থাকলে যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে হবে। শৃংখলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সহায়তাও গ্রহণ করা যেতে পারে। পরিশেষে, আমরা বিএম কন্টেইনার ডিপো দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে, তাদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। তাদের পরিবার-পরিজনকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলেও আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।