তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
সুদূর অতীতকাল থেকেই সিলেট অঞ্চল অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সিলেট অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। প্রসারমান ব্যবসা-বাণিজ্য, ভূরাজনৈতিক পটভূমি, সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক ভূমিকা, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যময় সাহিত্য-সংস্কৃতির ব্যাপক লালন ও উজ্জীবন আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সিলেটকে দিয়েছে স্বতন্ত্র মহিমা, করেছে তাৎপর্যময় ও সর্বাধিক গুরুত্ববাহী। স্বাভাবিকভাবেই সিলেটের এমন প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার পিছনে এখানকার পরিবেশ, বন-বনানী, আবহাওয়া, পারিপার্শি¦কতার ভূমিকা রয়েছে। জীববৈচিত্র্যের প্রাণকেন্দ্র, আবহাওয়ার বৈচিত্র্য অথচ সহনীয় মাত্রার জনপদ হিসাবে এ অঞ্চল তুলনামূলকভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের অধিকারী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট অঞ্চলে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, ইকোপার্ক, বিপুল মৎস্য সম্পদে ভরা অগণিত হাওর, খাল-বিল, অতুলনীয় দৃষ্টিনন্দন স্রোতস্বিনী মাধবকুন্ড ও হামহাম জলপ্রপাত। এখানে রয়েছে সারি সারি পাহাড়ের গায়ে সবুজ মায়া আর রূপলাবণ্যের পেখম ছড়ানো অসংখ্য চা-বাগান। সিলেটের মাটি অপার রত্নগর্ভা। এ মাটিতে মওজুদ আছে গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ ও পাথর। হাজার বছরের ঐতিহ্যঘেরা এ অঞ্চলের বনসমূহে রয়েছে ৬২০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২১৫ প্রজাতির পাখি, ৪৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫২ প্রজাতির সরিসৃপ, ২০ প্রজাতির উভচর। ঐতিহ্যবাহী ধমীয় নিদর্শন ও প্রতিষ্ঠান, স্থাপত্যকলা, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জীবনাচার, জলাভূমি-জলাধারের সৌন্দর্য আকর্ষণে হাজারো পর্যটক প্রতিদিন পরিভ্রমণে ছুটে আসে এ সিলেটে।
সিলেট অঞ্চেলের বন-বাদাড় যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলকে চিরসবুজ, ছায়াময়-মায়াময়, ক্লান্তিনাশা শীতলতার ঐশর্য্যে অপরূপ শোভা দান করেছে। এ অঞ্চলের বন-বনানীতে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রকৃতি আর ঐতিহ্যের গভীর শেকড়। বনে বনে আছে জীবনদায়ী অফুরান সম্পদরাজি, মানবসভ্যতা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার হরেক রকম উপাদান। অথচ আধুনিক সভ্যতার অতি উৎসাহী ব্যবহার এ চিরহরিৎ বনাঞ্চলের হৃদপুষ্ট চেহারাকে ক্রমশ ম্লান করে দিচ্ছে। অবাধে বৃক্ষনিধন, বৃক্ষরোপণে অনীহার কারণে আমাদের বনাঞ্চল হুমকির সম্মুখীন।
সিলেট বন বিভাগের রয়েছে এক গৌরবোজ্জল অতীত। সিলেট বনবিভাগ ১২৫ বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। T.J. Campball, DCF ( ১৮৯৫-৯৬) কর্তৃক প্রণীত ‘The Assam Rorest Manual’- এ 'A brief history of the Forest Department in Assam-হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, ১৮৭৪ সালের জানুয়ারি মাসের পূর্ব পর্যন্ত আসাম রাজ্যের বনাঞ্চল বেঙ্গল রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। আসাম বন বিভাগের সূচনা হয় ১৮৭৪ সালের জানুয়ারী মাসে। তখন সিলেটের বনাঞ্চলকে বেঙ্গল রাজ্য থেকে পৃথক করে আসাম বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেঙ্গল রাজ্যের বনাঞ্চল এর পূর্বে ঢাকা বন বিভাগের অধীনে ছিল। আসামের বনাঞ্চলকে আসাম বন বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার ফলে আসাম কমিশনারশিপ-এ যে পাঁচটি বনবিভাগের সৃষ্টি হয় সেগুলো হলো: ১) গোয়ালপাড়া বনবিভাগ, ২) গৌহাটি বনবিভাগ, ৩) তেজপুর বনবিভাগ, ৪) গোলাঘাট বনবিভাগ, ৫) কাছাড় বনবিভাগ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বনবিভাগ পুনগর্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৮৫ সালে সিলেট জেলার বনাঞ্চলকে কাছাড় বনবিভাগ থেকে আলাদা করে সিলেট বনবিভাগ নামকরণ করা হয়।
সিলেট বনবিভাগের জেলাওয়ারী বনভূমির তথ্য অনুযায়ী সিলেট জেলার সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ৯,৬৭৬,৩৭ হেক্টর, প্রস্তাবিত বনভূমি ১.,৩৩৯,৬১ হেক্টর ও অধিগ্রহণকৃত বনভূমি ১২,৯৭ হেক্টর। সিলেট জেলার রিজার্ভ ফরেস্টের পরিমাণ : ১) টিলাগড় রিজার্ভ ফরেস্ট-১১২.০০ একর, ২) খাদিমনগর রিজার্ভ ফরেস্ট-১৮৯০.৭৩ একর, ৩) সোয়াস্প ফরেস্ট-২১৮৯৭.৯০ একর। সিলেট জেলায় মোট ১৫টি মুর্তা মহল রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: উত্তর সিলেট রেঞ্জ-১ এ ৭২০.৯৫ একর এবং রেঞ্জ-২ এ ৩১৪৭.১৬ একর। জেলার ৩টি জলমহালের পরিমাণ হচ্ছে: উত্তর সিলেট রেঞ্জ-১ এ ৪৭৬ একর ও রেঞ্জ-২ এ ৬৪৯.৩০ একর। সিলেট জেলার কৌতি ভাষা মহালের পরিমাণ: উত্তর সিলেট রেঞ্জ- ১ এ ৫টি ও রেঞ্জ-২-এ ৪টি।
সিলেটের বনাঞ্চলের নান্দনিক আমেজ সৃষ্টিকারী, প্রাকৃতিক বহুমাত্রিক সৃষ্টিসম্ভারে ভরপুর টিলাগড় ইকোপার্ক, খাদিম নগর জাতীয় উদ্যান, জাফলং গ্রীনপার্ক ও রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। ১৯২৭ সালের ৩১ অক্টোবর সিলেট সদর উপজেলাধীন টিলাগড়স্থ ১১২ একর বনভূমিকে সংরক্ষণ বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালে টিলাগড় ইকোপার্ক প্রতিষ্টিত হয়। বনরাজি ও জীববৈচিত্র্যের অপূর্ব সমাহার রয়েছে এখানে। শকুন, বন মোরগ, পাহাড়ি ময়না, বন বিড়াল, খেকশিয়াল, বানর, খরগোশ, মেছোবাঘ, বেজি, ঘুঘু , টিয়া, মানিকজোড়, গুইসাপ, হুতুমপেচাঁ প্রভৃতি প্রাণীর অভয়ারণ্য। বৃক্ষরাজির মধ্যে শাল, গর্জন, নাগেশ্বর, জারুল, অর্জুন, কদম, চাপাশি, ছাতিম, বহেরা, চম্পাফুল, মোনালু, বহেরা, হরিতকি, বেত বিভিন্ন লতা-গুল্ম রয়েছে।
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত। সিলেট মহানগরীরর নিকটবর্তী সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। ২০০৬ সালে ৬৭৯.০ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে এ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ এর দশকে এখানকার বাঁশবন পরিষ্কার করে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি দ্বারা বনায়ন করা হয়। খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান নিচু পাহাড়ি এলাকা বিশিষ্টি। পুরোটা প্রায় পাতাঝরা ক্রান্তীয় বন। এ উদ্যানে রয়েছে ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৫ প্রজাতির পাখি, ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বনমোরগ, শকুন, শঙ্খচিল, ঘুঘু, বানর, মুখপোড়া হনুমান, বেঁজী।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যঘেরা জাফলং। ২০০৮ সালে প্রায় ৫৩৭০ একর বনভূমি নিয়ে জাফলং গ্রীন পার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পাশে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিশাল খাসিয়াপুঞ্জি। এখানে রয়েছে ছন্দময় সতত প্রবহমান পাহাড়ি ঝরণা, পাহাড়ি শিলা বিছানো ও কংকরময় মাটিতে সবুজ অরণ্য, মনমাতানো পাহাড়ি নদী ভাউকীর স্ফটিক পানিধারা। পাশেই দৃষ্টিনন্দন ভারতের জাফলং জিরোপয়েন্ট অবস্থিত ঝুলন্তু ব্রিজ। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো যে, জাফলং পাহাড়ি এলাকা অতীতে সবুজ ঘন অরণ্যে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সবুজ বন বিলুপ্ত হতে চলেছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট অবস্থিত। সিলেট মহানগরীরর কাছাকাছি রাতারগুল বন এক সময় বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত থাকলেও বন-বান্ধব পরিবেশের অভাবে বর্তমানে এর অস্তিত্ব মাত্র প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার জায়গায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। রাতারগুল মূলত ৩ টি নদীর তীরবর্তী বৈচিত্রপূর্ণ জলাবন ও প্রাণীদের আবাসস্থল। এখানে রয়েছে হিজল ও কড়চ জাতীয় গাছের নিবিড় অরণ্য। এখানে বিচরণ করে বানর, সাপ, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী ও নানা প্রজাতির পাখি। অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে বেত, নল-খাগড়া, মুর্তা ইত্যাদি। একটি তথ্যসূত্র মতে, রাতারগুলে ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বর্ষাকালে এ বনের ভেতর নদীর পানি প্রবেশ করে; পানি আর সবুজিয়ার মাখামাখিতে এর নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। অথচ রাতারগুল বন সংরক্ষণ ও বিস্তৃতকরণে সংশিষ্ট মহলের বাস্তব পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বনভূমি সংরক্ষণ ও বন সৃজনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য নিরাপদ জীবনধারণ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, স্বাস্থ্যসম্মত আবহাওয়া নিশ্চিত করতে পারি। অপরিকল্পিত নগরায়ন, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ব্যাপকহারে বৃক্ষনিধনের ফলে আজ মানবজীবন ও জীববৈচিত্র অস্তিত্ব-সংকটের সম্মুখীন। সিলেটের নগর, গ্রাম, গঞ্জ, মাঠ এমনকি প্রতিটি বাড়িতে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের মাধ্যমে এ সংকট উত্তরণে প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন। জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য গাছপালা নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে, দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে বনভূমি। যেভাবে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই অনুপাতে বন সৃষ্টি হচ্ছে না। আমাদেরকে গাছপালার নিঃসীম গুরুত্বকে অনুধাবন করতে হবে। সরকারি-বেসরকারিভাবে ব্যাপক-হারে বনায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারলে বিরাজমান বায়ুদূষণ, উষ্ণায়ন, গ্রীন হাউজ এফেক্টসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব।
বনায়নে আমরা প্রত্যেকেই কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। গাছপালা বাতাস থেকে ক্ষতিকারক কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে এবং একই সঙ্গে বাতাসে জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন গ্যাস যোগ করে। এভাবেই গাছপালা বায়বীয় ভারসাম্য বজায় রেখে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করে তোলে। সবুজায়নের মাত্রা যত বাড়বে ততই বাতাসে গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ কমবে। অনাবশ্যক জ্বালানি রোধে ও সবুজায়নের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ অতি সামান্য মাত্রায় অবদান রাখতে পারলেই তা উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ রক্ষায় এক বিরাট পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সিলেট জেলার পরিবেশ দূষণ প্রসঙ্গ এ সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্নভাবে দূষিত হচ্ছে এখানকার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। টিলা-পাহাড় কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। সিলেট সদর, বিয়ানিবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলায় টিলা ও পাহাড় কাটা হচ্ছে। বিগত ১০ বছরে কাটার কারণে টিলা-পাহাড়ের পরিমাণ ৫০ শতাংশ নেমে এসেছে। অবাধে বালু উত্তোলন ও পুকুর জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মাটির নিচ থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়। জেলায় ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ১৫০টি। ইটভাটার ক্ষতিকর ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
স্টোন ক্রাশার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর ব্যাপক ডাস্ট এবং ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বায়ুদূষণের সঙ্গে আবর্জনা স্তুপীকৃত হয়ে খাল-বিল, নদী-নালা, জমি ভরাট হচ্ছে। এছাড়া এগুলোর বিকট শব্দের কারণে পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলেছে। করাতকল আবাসিক এলাকার কাছে থাকায় শব্দদূষণ স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। এর কারণে গাছ কেটে বনাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে এবং এগুলোর ডাস্ট পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সিলেট জেলায় সারকারখানা থেকে উত্থিত অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ গ্যাস কল- কারখানার ২/৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া কারখানার বর্জ্যে নদী ও খাল-বিলের পানি দূষিত হচ্ছে। চারকলের কালো ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ উদ্বেগজনক। রাইচমিলের ডাস্ট ও শব্দে পরিবেশ দূষণ চলছে।
চুনাপাথর কলকারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে বর্জ্য। ব্যাপক হারে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের ফলে পরিবেশের দূষণ আরোও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় ও ব্যাপক আবাসন প্রকল্পের দরুন নীচু-ভূমি, জলাশয়, খাল-বিল ভরাট হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকীর সম্মুখীন। বিভিন্ন স্থানে অনিরাপদ, অস্বাস্থ্যকর পোল্ট্রি ফার্মের দুর্গন্ধে বায়ু দূষিত হচ্ছে। ওয়ার্কশপগুলোর অবাধ ওয়েল্ডিং থেকে সৃষ্ট রেডিয়েশন বিকিরণে পরিবেশ হুমকিগ্রস্ত। রাবার কারখানার নির্গত বর্জ্যের কারণে ছড়া, নদী ও পুকুরের পানি দূষিত হচ্ছে। ডেইরিফার্মগুলোর গো-চেনা ও গোবর দ্বারা পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ফুড ফ্যাক্টরি ও বেকারি বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত মৎস্য হেচারি তৈরি করতে ভূমির স্বাভাবিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হয়। এর প্রভাব পড়ছে পবিবেশের উপর। চা-বাগানে প্রয়োগ করা হয় প্রচুর কীটনাশক। ফলে এটি ছড়া, নদী, খাল, পুকুরের পানিতে মিশে দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বায়ূদূষণের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করে মানব সমাজকে সংকটের দিকে নিয়ে চলেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে পানিতে, স্থলে, অন্তরীক্ষে মানবসৃষ্ট ভয়াবহ বিপদ সংকট আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা শুধু শিল্প-প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিলকে অভীষ্ট হিসেবে গ্রহণ করেছি। অথচ একবারও ভাবছিনা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা। এদের বাসোপযোগী একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যপ্রদ আবাসভূমির কথা। তাই এই সময়ের অনিবার্য দাবি মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ব্যাপকহারে বনায়ন, ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ, নির্মল আবহাওয়া নিশ্চিতকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। আসুন আমাদের উন্নত, সুস্থ, নিরাপদ, স্বাস্থ্যপ্রদ জীবন নিশ্চিতকরণে বন, আবহাওয়া ও পরিবেশ সুরক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার করি।
লেখক: প্রবীণ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বৃৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরষ্কার (১ম স্বর্ণ পদক) প্রাপ্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।