পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকলে লাইন কেটে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। দেশে অব্যাহত গতিতে মূল্যস্ফীতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জ্বালানির মূল্য ও সরবরাহ নিয়ে এক প্রকার অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুত ওজ্বালানি খাত দেশের শিল্পায়ন ও উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতে অস্থিতিশীলতা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি যথাসময়ে ভোক্তাদের সেবামূল্য পরিশোধ করেই এর নিরবচ্ছিন্নতা অক্ষুন্ন রাখতে হবে। বিদ্যুত খাতে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এ টাকা জনগণের রাজস্বের টাকা। একদিকে জনগণের রাজস্বের টাকা দিয়ে রেন্টাল বিদ্যুতের স্বেতহস্তি প্রতিপালন করা হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার শত শত কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুত বিলের চাপ নিতে পারছেনা বিদ্যুত বিভাগ। গত বছরের শুরুতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাকি পড়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এরপর আরো দেড় বছর পেরিয়ে এসে এ অঙ্ক আরো হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা।
সীমিত সম্পদের উপর ভর করে দেশের বিদ্যুত বিভাগ সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের যোগান নিশ্চিত করার প্রতিশ্রæতি নিয়ে কাজ করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুত বিলের কারণে সেবার মানোন্নয়ন এবং সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়না। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেই বকেয়া বিদ্যুত বিল আদায়ে কঠোর সিদ্ধান্তের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে জানা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রনালয় এবং সরকারি সংস্থার কাছে বিদ্যুতের বকেয়া পড়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বকেয়া পরিশোধের জন্য বেধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে এসব মন্ত্রনালয়, সরকারি-বেসরকারী সংস্থার বিদ্যুত লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা দেখি দু’চার হাজার টাকা বকেয়া থাকার কারণে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নের শিকার হন অনেক ব্যক্তি গ্রাহক। লাখ লাখ থেকে শত শত কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার সাথে জড়িত সরকারি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নের কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায় জাতি। তবে যে কাউকে বা সংস্থার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নের আগে অবশ্যই নোটিশ দিয়ে সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে।
শুধু বিদ্যুত খাতেই নয়, গ্যাস ও পানি ও টেলিফোন-ইন্টারনেটের মত গুরুত্বপূর্ণ ইউটিলিটি সার্ভিসে প্রায় প্রতিটি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার বকেয়া কোনো নতুন বিষয় নয়। জনগণের ক্ছা থেকে নানা উপায়ে রাজস্ব আদায় করে সরকারি সংস্থাগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রায় প্রতিটি সংস্থার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ শোনা যায়। একদিকে মন্ত্রানালয় ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ-দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য ও লুটপাটের মাধমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছে এবং অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। অন্যদিকে বকেয়া বিলের কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোর ত্রাহি অবস্থা। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বকেয়া বিল পরিশোধ হলে এ খাতের উন্নয়নে বিদেশি ঋণ সহায়তার প্রয়োজন হতনা। বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষুদ্র বিলের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়, ঠিক একইভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্নের দৃষ্টান্ত থাকলে একেকটি মন্ত্রনালয় ও বিভাগের শত শত কোটি টাকার বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকার কোনো সুযোগ থাকতো না।বিদ্যুতের বিল পরিশোধের ব্যাপারে সরকার সাধারণ বিদ্যুত গ্রাহকদের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাবে আর সরকারি ও কর্পোরেট বিলের ক্ষেত্রে নমনীয় থাকবে, এমনটা কাম্য নয়। কোনো প্রভাবের কাছে আপস না করে সবার জন্য সমান সুযোগ এবং আইনের সম ও সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাস,বিদ্যুত ও ওয়াসার দুর্নীতি, অপচয়, অস্বচ্ছতা দূর করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে মূল্য না বাড়িয়েও সেবার মান ও পরিধি বাড়ানো সম্ভব। দেশে এখন বহুমুখী সামাজিক-অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। কর্মহীন অনেক মানুষের পক্ষে জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বিদ্যুত বিল বকেয়ার কারণে স্বল্প আয়ের এসব পরিবারের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে শত শত কোটি টাকার সরকারি ও কর্পোরেট বিল আদায়ে অধিক মনোযোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।