Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪০ এতিম মেয়ের জাঁকজমকপূর্ণ বিবাহোত্তর সংবর্ধনা

প্রধান অতিথি ছিলেন হুইপ ইকবালুর রহিম

মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৮:২৪ এএম, ২৮ মে, ২০২২

দিনাজপুরে একসঙ্গে ৪০ জন এতিম মেয়ের একসঙ্গে যৌতুকবিহীন বিবাহত্তোর বিদায় অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ীস্থ গ্রীন ভিউ কমিনিউনিটি সেন্টারে সাজ সাজ রব অবস্থা ছিল। গেটসহ বিভিন্ন ডেকোরেশানের কাজের ফাকে চলে হাজার লোকের রান্না-বান্ন। এই আয়োজন কোন ধর্ণাঢ্য ঘরের মেয়ের বিয়ে বা ছেলের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান নয়। এত বড় আয়োজন পিতৃহারা ৪০ মেয়ের বিবাহত্তোর অনুষ্ঠানের। এই মেয়েরা সবাই লায়ন্স ক্লাব পরিচালিত দিনাজপুর ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন শিশু নিকেতন হোম বাসিন্দা। এতিম নিবাসে এদের অনেকের বয়স ১২ থেকে ১৩ বছর। প্রাপ্ত বয়স হওয়ার পর এদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। বিয়ের মধ্যে অন্যতম শর্ত থাকে কোন পণ নেয়া যাবে না।
এই শর্তে যেই পাত্র বা পাত্রের অভিভাবক মেয়ে পছন্দ করেন তাদের খোঁজ খবর নেয়ার পর এতিম নিবাসের পক্ষ থেকে বিয়ে দেয়া হয়। দুই বছরে এভাবে বিয়ে দেয়া ৪০ এতিম নির্বাসীকে বিবাহোত্তর সম্বর্ধনা দেয়া হয়। তুলে দেয়া হয় বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। আপ্যায়ন করা হয় এক হাজারের বেশি মানুষকে। বিবাহত্তোর অনুষ্ঠানে অতিথিদের দেয়া উপহার ও নগদ অর্থ নববিবাহিত ৪০ দম্পতির মাঝে ভাগ করে দেয়া হবে।
সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানকে আকর্ষনীয় করে তোলে দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য এম ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা জয়নুল আবেদীন, জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের উপ পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, দিনাজপুর চেম্বারের সভাপতি রেজা হুমায়ুন চৌধুরী শামীম, দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্তুজা আল মুঈদ, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরুপ বকসী বাচ্চু, শহর সমাজসেবা অফিসার মাইনুল ইসলাম।
সংসদ সদস্য এম ইকবালুর রহিম দম্পতিদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে বলেন, যৌতুক আমাদের সমাজে একটি ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। বর্তমান যে ৪০ জন ছেলে যৌতুক ছাড়াই বিয়ে করেছে এতিম কন্যাদের সারাদেশে এটি দৃষ্টান্ত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতিমদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছেন। তাদের স্বাবলম্বী করতে সমাজসেবা অধিদফরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুর শিশু নিকেতন এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ শতাধিক এতিম মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে।
আড়ম্বরপূর্ণ এই বিবাহত্তোর অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেলো ৪০ এতিম মেয়ের ৪০ পাত্র ছিলেন দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার। পাত্ররা কেউ ব্যবসায়ী, কেউ গার্মেন্টস চাকরি করেন, কেউ কৃষিকাজ আবার ওয়ার্কসপের দোকানে। জেলার হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদার গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের টেইলার্সের দোকান রয়েছে। বিনা যৌতুকে শিশু নিকেতন হোমের এতিম কন্যা লিজা আক্তারকে বিয়ে করেছেন। তিনি বলেন, আজকে আমার মত ৪০ জন ভাই যৌতুক না নিয়ে এতিম মেয়েদের বিয়ে করে উদাহারণ সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন সুখী হতে পারি সকলের কাছে দোয়া চাই।
নতুন জীবন ও ঠিকানা পেয়ে খুশি রাজবাটি এলাকার ধানচাল ব্যবসায়ী তহিনুর ইসলামের নববিবাহিতা এতিম কন্যা হুমায়ারা উম্মুল। হামজাপুর গ্রামের ছেলে মো. রবিউল ইসলামের বাবা রায়হানুল ইসলাম জানান, যৌতুক ছাড়াই আমার ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। আমি চাই সব অভিভাবক এই কাজটি করুক। আয়োজক শিশু নিকেতনের সভাপতি মোজাফর আলী মিলন জানান, এই শিশু নিকেতন থেকে প্রতিবছর মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। এবার এক সঙ্গে ৪০ জন এতিম মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হলো। সাইকেল, সেলাই মেশিনসহ সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এতিম

১৯ এপ্রিল, ২০২১
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ