Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামে এতিমের অধিকার

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

আরবি ‘ইয়াতীম’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে- নিঃসঙ্গ। একটি ঝিনুকের মধ্যে যদি একটিমাত্র মুক্তা জন্ম নেয়, তখন একে ‘দুররাতুন-ইয়াতিমাতুন’ বা ‘নিঃসঙ্গ মুক্তা’ বলা হয়ে থাকে। বাংলায় ইয়াতিম, এতিম উভয় শব্দ ব্যবহার হয়। আমাদের সমাজে সাধারণত এতিম বলা হয়- যার বাবা-মা, বা যে কোন একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক, অনুপযুক্ত ছেলে বা মেয়েকে এতিম বলা হয়, যার পিতা জীবিত নন।

আমরা কে না জানি- সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতৃহীন তথা এতিম অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। আরও দুঃখের কথা হচ্ছে, তাঁর ছয় বছর বয়সকালে তাঁর পরমপ্রিয় মাতাও দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তিনি তাঁর দাদা ও চাচার অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও দেখাশোনায় বেড়ে উঠেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর দিয়েছেন আশয়।›› (সুরা আদদোহা : ৬)

ইসলাম সাম্য ও ন্যায় পরায়তার ধর্ম। শুধু মানবকূল কেন প্রাণীজগতের প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করাও ইসলামের অন্যতম আদর্শ ও শিক্ষা।

পবিত্র কোরআন-হাদিসে এতিমের অধিকার, এতিমের প্রতি দয়া-অনুগ্রহের মর্যাদা ও পুরস্কারের কথা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর তোমার কাছে তারা জিজ্ঞেস করে, এতিম সংক্রান্ত বিধান। বলে দাও, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেওয়া উত্তম। আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই। বস্তুত: অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ জানেন। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের ওপর জটিলতা আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, মহাপ্রাজ্ঞ।’’ (সুরা আল-বাকারাহ : ২২০)

এতিমের সম্পদ সংরক্ষণ ও প্রত্যার্পণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, এতিমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। মন্দ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটি বড়ই মন্দ কাজ।›› (সুরা আননিসা : ২)

এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, আর এতিমদেরকে যাচাই করবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের যোগ্য হয়; অতঃপর তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখতে পেলে তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বড় হয়ে যাবে বলে অপচয় করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন সে যেন সংযত পরিমাণে ভোগ করে। অতঃপর তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিবে তখন সাক্ষী রেখো। আর হিসেব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।›› (সুরা আননিসা : ৬)

উপর্যুক্ত প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এতিমদের সাথে উত্তম ও সুন্দর আচরণ এবং তাদের কাজকর্ম, অধিকার ও পাওনা সহজভাবে সম্পন্ন করে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণের বিধান ও পদ্ধতি, তাদের সম্পদ ব্যবহারের অনুমতি ও সীমাবদ্ধতা এবং তাদের সম্পদ তাদের কাছে হস্তান্তরে প্রক্রিয়া ও সময়কাল অত্যন্ত সুবিন্যস্তভাবে বর্ণনা করেছেন।

এতিমের সম্পদ ভক্ষণের ভয়াবহতা বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যারা এতীমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।›› (সুরা আননিসা : ১০)

আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার কর। সাহাবায়ে কিরাম রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কি? রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, জাদু, অন্যায়ভাবে কোন প্রাণ সংহার করা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ গ্রাস করা, যুদ্ধের মাঠ থেকে পলায়ন করা এবং মুমিনা পবিত্র নারীকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারী : ২৭৬৬)

এতিমের সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা থেকে সতর্ক করে এবং তাদের সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করার আবশ্যকীয়তা বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর তোমরা এতিমের সম্পদের কাছেও যেয়ো না, সুন্দরতম পন্থা ছাড়া, যতক্ষণ না সে বয়সের পূর্ণতায় উপনীত হয়। আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।›› (সুরা বানু ইসরাঈল : ৩৪)

উপর্যুক্ত আয়াত ও হাদিসগুলো থেকে প্রতীয়মান হয়, কেউ এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করলে এতিমের সাথে অশোভনীয় আচরণ বা ন্যূনতম জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না। এতিমের ব্যয় নির্বাহ ব্যতিত অযথা-অপাত্রে তার সম্পদ ব্যবহার এবং এক্ষেত্রে কোনপ্রকার অপচয় ভক্ষণ কিংবা কোনভাবে কুক্ষিগত করে রাখা যাবে না। অভিভাবকত্বের সুযোগে এতিমের উত্তম সম্পদের সঙ্গে নিজের অনুত্তম সম্পদ মিশিয়ে নেওয়া যাবে না। কোনভাবে তাকে ধোঁকা দেওয়া, প্রতারিত করা বা তার ক্ষতি হয় এমন কোনও কাজ করা যাবে না। আরও প্রতিভাত হয় যে, এতিম উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়ার পরও তার কাছে তার সম্পদ হস্তান্তর না করে ব্যবহার বা কোন প্রকার অনধিকার চর্চা, কিংবা তার সাথে কৃত অঙ্গিকার বা প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটানোরও কোন সুযোগ নেই ; বরং হারাম ও নিষিদ্ধ। অথচ এতিমের সম্পদ ভক্ষণ, অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করে রাখা, তাদের সাথে ধোঁকা, প্রতারণা ও অঙ্গিকার ভঙ্গসহ নানান হারাম ও নিকৃষ্ট পাপকর্ম এতিমদের সাথে প্রতিনিয়ত চলছে। বিভিন্ন দুর্বলতার কারণে ও জুলুমের শিকার হওয়ার ভয়ে এতিমরা মুখ খুলে বলতেও পারছে না আবার তাদের ন্যায্য অধিকার বুঝেও পাচ্ছে না।

শুধু অভিভাবক কিংবা প্রতিবেশীর মাঝে নয়; গোটা সমাজে প্রচলিত আরও কিছু ঘৃণিত মন্দ কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা অসহায় এতিমদের পক্ষে সত্য ও ন্যায়সঙ্গত কথা না বলে ধনাঢ্য বা প্রভাবশালীদের পক্ষে অন্যায় ও নীতি বহির্ভূত কথা বলা, দুর্বল এতিমদের আড়চোখে দেখা, তিরস্কার করা, বিভিন্নভাবে হয়রানি করা এবং গলাধাক্কা দেওয়া। মূলত, এগুলো কাফেরদের স্বভাব। আল্লাহ তায়ালা এরূপ স্বভাবের লোকদের তিরস্কার করে ইরশাদ করেন, দদআপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে? সে তো সেই, যে এতিমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। এবং মিসকিনকে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না›› (সুরা মাউন : ১, ২ ও ৩)

আল্লাহ তায়ালা তাদের মন্দ চরিত্র বর্ণনা করে আরও ইরশাদ করেন, এটা অমূলক; বরং তোমরা এতিমকে সম্মান কর না।

ইসলাম যেভাবে এতিমের সাথে উত্তম আচরণ, এতিমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক শিক্ষাদান ও উপযুক্ত বয়সে তার কাছে সম্পদ প্রত্যার্পণ, সকল প্রকার ক্ষতি ব্যতিরেকে সার্বিক কল্যাণসাধনের নির্দেশ দেয়। অনুরূপভবাবে এতিমের সাথে কঠোর ও রূঢ় আচরণ থেকেও কঠিনভাবে বারণ করে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না।›› (সুরা আদদোহা : ৯)

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।›› (সুরা আল-বাকারাহ : ১৭৭)

আমাদের প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতিম ছিলেন। ফলে পিতা-মাতার আদর, স্নেহ, মমতার শূন্যতা কতটা গভীর- তা তিনি ষোলআনা উপলব্ধি করেছেন। তাঁর জীবনচরিত খুঁজলে দেখা যায়, তিনি এতিমদের খুব ভালোবাসতেন, আদর মমতায় জড়িয়ে নিতেন। এতিমদের ভালবাসা ইসলামের বিধান ও বৈশিষ্ট্য এবং আমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ ও সুন্নাহ। একবার ঈদের দিন সকালবেলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিন্নবস্ত্র পরিহিত, পুরো শরীর কাদায় মাখানো, একটি এতিম শিশুকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সাথে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং তাঁর পত্মী, উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা. কে বলেন, শিশুটিকে ভালভাবে গোসল করিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দাও। আয়েশা রা. গোসল করানোর পর তিনি নিজ হাতে তাকে নতুন পোশাক পরিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে নিয়ে গেলেন। আদর করে শিশুটিকে বললেন- আজ থেকে আমি তোমার বাবা আর আয়েশা তোমার মা।› বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, এতিমের প্রতি প্রেম-মমতা, হৃদ্যতা-ভালবাসায়, ইতিহাসে কস্মিনকালেও আমার নবিজি থেকে অগ্রসর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রশ্ন থেকেই যায়- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সায়্যিদুল মুরসালিন প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হয়ে আমরা নিজেদের মাঝে তাঁর আদর্শ, মানবতাবোধ, মহানুভবতা কতখানি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বা লালন করে থাকি?

এতিমদের প্রতি উত্তম-অনুত্তম আচরণ সম্পর্কে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। অতঃপর তিনি তাঁর অংগুলির মাধ্যমে বলেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করব।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৬৭৯)

হাদিসে এতিম লালনপালনকারীর অভাবনীয় মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব›- বলে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা অংগুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দু’টির মাঝে একটু ফাঁক করেন। (বুখারি : ৫৩০৪)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনও এতিমকে লালনপালন করে, অতঃপর ওই এতিম প্রাপ্তবয়স্ক বা নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়, আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাত আবশ্যক করে দেন, অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেন।

এতিমদের আহার দানকরা নেককারদের গুণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর তারা অভাবগ্রস্থ, এতিম ও বন্দীকে আল্লাহ›র ভালবাসায় আহার দান করেগ্ধ (সুরা আল-ইনসান : ৮)

আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, যাবতীয় পুণ্যকাজ সম্পাদন করেও যদি কেউ এতিমদের প্রতি ভালবাসা ও মমতা পোষণ না করে, তাদের কষ্ট দেয়, বা সাধ্য থাকা সত্ত্বেও দুঃখ মোচনে সচেষ্ট না হয়, তবে সে মহান আল্লাহ›র কাছে পরিপূর্ণ সৎকর্মশীল হিসেবে গণ্য হতে পারবে না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বিধবা, এতিম ও গরিবের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে মুজাহিদের সমতুল্য, বা তার মর্যাদা রাতভর জাগ্রত থেকে নামায আদায়কারীর মতো, যে কখনো ক্লান্ত হয় না। অথবা তার মর্যাদা সেই রোজাদারের মতো, যে কখনো ইফতার (রোজা ভঙ্গ) করে না।› (মুসলিম : ৫২৯৫)

এতিমদের প্রতি মায়া-মমতা প্রকাশ করার মাধ্যমে অন্তর কোমল হয় ও প্রশান্তি লাভ হয়। আবু হুরায়ারা রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তার কঠিন হৃদয়ের ব্যাপারে অভিযোগ করল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতিমের মাথা মুছে দাও (ভালবাসা ও সহমর্মিতায় কাছে টেনে নাও) এবং অভাবীকে আহার দাও।› (আহমদ)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রেম-মমতায় কোন এতিমের মাথার ওপর হাত রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তার হাতের নিচের চুল পরিমাণ পুণ্য তাকে দান করবেন।› (আহমদ)

ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলি রা. শাহাদাতের বিছানায় শায়িত হয়ে, শেষ ওসিয়তে লোকদের এতিমদের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, সাবধান! এতিমদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, এতিমদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমরা তাদের সমালোচনার পাত্র হয়ো না এবং তোমাদের উপস্থিতিতে তাদের কোনও ক্ষতি কর না।› (শারহু নাহজুল বালাগাহ)
আসুন, এতিমের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হই, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করি। তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হই, এবং সর্বদা তাদের পাশে থাকি। আল্লাহ তায়ালা ও প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হুকুম পালন করে ইহ-পরকালীন কল্যাণ অর্জনে ব্রতি হই। মহান রব তাওফিক দান করুন।
লেখক : গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ



 

Show all comments
  • আকিব আল আসলান ৪ আগস্ট, ২০২১, ১০:২৪ এএম says : 0
    খুব ভালো লেগেছে, এরকম তথ্য উপাত্ত দিয়ে আরো লেখা জাতি কামনা করে।بارك الله فيك
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এতিমের-অধিকার

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ