পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে ছাত্রদলের কর্মীরা পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে গেলে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের আক্রমণের শিকার হয়। এতে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান ইয়াহিয়াসহ অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপাসনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কুটুক্তির প্রতিবাদে করা ছাত্রদলের প্রতিবাদ সমাবেশে একজন ছাত্রদল নেতার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুটুক্তি করা হয়েছে বলে দাবি করে ছাত্রলীগ নেতারা কয়েকজন ছাত্রদল কর্মীকে মারধর করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ আল মাহমুদ জুয়েল নিজের বক্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা দূর করতে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। ছাত্রদলের আগমন ঠেকাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা লাঠি, হকিস্টিক, রডসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের উপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ছাত্রদল নেতারা। ছাত্রদলের আহত নেতাকর্মীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি এখন চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য উদ্বেগ ও লজ্জাজনক। বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচন নানাভাবে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষও এমন একটি নির্বাচনই দেখতে চায়, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনমতের প্রতিফলন থাকবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে একটি জাতীয় সংলাপ ও রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু দেশে এখনো বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সব রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাশাপাশি অবাধে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। গত একযুগ ধরে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলসহ সব বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের নিষেধাজ্ঞা, প্রতিরোধ ও হামলার শিকার। বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। বিভিন্ন জাতীয় রাজনৈতিক ইস্যুতে যখনই কোনো ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশের চেষ্টা করেছে তখনই ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিফলন নয়।
বৈশ্বিক করোনা মহামারি ও চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশে নানামাত্রিক সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকট ক্রমে ঘনিভূত হচ্ছে। পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এহেন বাস্তবতায় আরেকটি বিতকির্ত নির্বাচন বা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়া অসম্ভব। অনেকেই শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শ্রীলঙ্কায় সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ রাজপথে দাঁড়াতে পারলেও বাংলাদেশে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ও রুদ্ধ করা হচ্ছে। বিশেষত দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো ঐতিহাসিকভাবেই দেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের সুতিকাগার। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শাসকদলের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার নজির কোনো সামরিক শাসকের আমলেও ঘটেনি। গত একযুগে দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে অসংখ্য ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম হয়েছে। দেশে গণমাধ্যমের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কোনো তথ্যই গোপন থাকে না। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। একইভাবে ছাত্রলীগ কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের আইনানুগ ব্যবস্থা বা অ্যাকশন গ্রহণের বদলে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকাও গোপন থাকছে না। মঙ্গলবার ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত সমাবেশে ছাত্রলীগকর্মীদের সশস্ত্র হামলার সময়ও পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রদল নেতাদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আহত ও রক্তাক্ত করলেও ঘটনার পর দু’জন ছাত্রদল কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এতেই পুলিশের ভূমিকা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। দেশের মানুষ শিক্ষাঙ্গণে আর সন্ত্রাস দেখতে চায় না। দেশে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি বিষয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের যথাযথ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও অবাধ রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।