পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভেঙে গেছে বরা মোহনায় সুরমা-কুশিয়ারা উৎসমুখ ত্রিগাংয়ের একটি ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ)। ভারতের পাহাড়ি ঢল এখন প্রবল বেগে ঢুকছে সিলেটে। জকিগঞ্জের বারোঠাকুরী ইউনিয়নের অমলশীদ এলাকায় এ ডাইক দিয়ে সুরমা-কুশিয়ারায় পানি প্রবেশ করে নতুন এক আতংকের জন্ম দিয়েছে সিলেটজুড়ে। ইতিমধ্যে জকিগঞ্জের বিস্তৃত এলাকা হয়ে গেছে প্লাবিত। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ভাঙনের ঘটনায় নতুন করে অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। এছাড়া জকিগঞ্জ ইউনিয়নের লারাই, কাজলসার ইউয়িনের আটগ্রাম নানুহাটি, কালিগঞ্জ বাল্লা গ্রামের সুরমা ডাইক ইতিমধ্যে ভেঙে যাওয়ায় অন্তহীন দুভোর্গে বন্যাকবলিত মানুষ। কিন্তু বরাক মোহনার ডাইক গত বৃহস্পতিবার ভেঙে যাওায় ‘মরার উপর খাঁড়া ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে জকিগঞ্জের মাটি ও মানুষের জীবনে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ খাবার পানীর অভাবে হাকাকার করছে এ এলাকার মানুষ।
অমলশিদ গ্রামের বাসিন্দা মুদি দোকানদার দিল মিয়া বলেন, তীব্র পাহাড়ি ঢলের ধাক্কায় ডাইকের ভেঙে গেছে প্রায় ২৫ ফুট। ধীরে ধীরে পানির বেগে ডাইকটি আরও ভাঙছে। গতকাল সকাল পৌনে ১১ টার দিকে ডাইকের কমপক্ষে ৭০ ফুট অংশ ভেঙে গিয়েছে। বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢল ঢুকে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
ডাইক ভেঙে যাওয়ায় পানি কোনো বাধা না পেয়ে তীব্র গতিতে সরাসরি সুরমা ও কুশিয়ারায় গিয়ে ঢুকছে। ফলে পুরো সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে বানভাসি জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে পানি লোকালয়ে আসা অব্যাহত থাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যাতে হাজারো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খাবার পানির অভাবে ঝুঁকি নিয়েই অনেকে দূষিত পানি পান করছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের জানায়, উপজেলার প্রায় নয়টি ইউপিই বন্যা কবলিত এলাকা। পুরো উপজেলায় বন্যার পানিতে অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বানভাসি অনেক এলাকার মানুষদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা হলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়েছে। বানের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা আফতাব আহমদ জানান, তার ইউপির কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। ডাইকের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ রক্ষায়ও কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ত্রাণের তালিকায় বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেক এলাকায় চুলা জ্বালিয়ে পানি ফুটানোর মত অবস্থা নেই কোথাও। জকিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব হোম দাস ইনকিলাবকে জানান, মোহনায় ডাইকটি ভেঙে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে । ডাইক ভেঙে যাওয়ায় সিলেটের অন্যান্য উপজেলায়ও আশঙ্কা আছে পানি বৃদ্ধির। ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় ১৮ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১০০ মেট্রিকটন চাল ও ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদার কথা জেলা প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে।
এদিকে, উজানে ঢল ও ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে সড়ক প্লাবিত হওয়াতে জেলা সদরের সঙ্গে তিনটি উপজেলার সরাসরি যান চলাচল বন্ধ। প্রবল স্রোতে নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গতকাল শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ছাতক উপজেলা সদরে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২১৮ মিলিমিটার। এ কারণে ব্যাপক পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে পূর্ব পাগলা, জয়কলস, পাথারিয়া, দরগাপাশা, পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ ইনকিলাবকে জানান, যেভাবে পানি বাড়ছে, তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে দুই দিনের মধ্যে পুরো উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে যাবে। সুনামগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের মধ্যে প্রশাসন শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। ছাতক উপজেলায় ৬টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ১১০টি পরিবার। দোয়ারবাজার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে দুটি। এখানে ১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সুনামগঞ্জে ১৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। নামছে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল। এতে গত শনিবার থেকে জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বন্যাকবলিত উপজেলার মধ্যে জেলা ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা বেশি আক্রান্ত। এসব উপজেলায় প্রায় সাত হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান জানান, পুরো উপজেলাই এখন বন্যাকবলিত। ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। ছাতক পৌর শহরের পুরোটাই প্লাবিত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি আছে।
ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিনে অব্যাহত ভারী বর্ষণে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে যমুনায় ১০১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধির পায়। ফলে হার্ড পয়েণ্টে বাঁধ ৫০ মিটার ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়। গত ১৮ মে বিকাল ৪টার সময় কুলকান্দি হার্ডপয়েন্টের উত্তর পাশে সিসি ব্লকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে সিসি ব্লক। পানি উন্নয়ন বোর্ড খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পরিদর্শন করে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভাঙন স্থানে ড্রাম্পিং শুরু করেছে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে ধলাই নদীসহ পাহাড়ী ছড়াসমূহে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কেওলার হাওর ও আদমপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। বোরো ধান কাটা হয়নি প্রায় ৫ শ’ হেক্টর জমি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে । বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকলে আরও পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা হওয়ার শঙ্কায় ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।