Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গুচ্ছতে কেন নেই বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো?

ড. মো. কামরুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

গত ৭ এপ্রিল ২০২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণের উপস্থিতিতে ইউজিসির এক মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক দ্বিতীয়বারের মতো শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। দেশের মোট ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির এ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান অনুমোদিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ৫১টি। এর মধ্যে ৩৯টিতে স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়ে থাকে। এবারো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করবে। তবে মিটিংয়ে উপস্থিত উপাচার্যগণ গুচ্ছের বাইরে থাকা এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও আর্থিক অপচয় রোধ করতে গত শিক্ষাবর্ষে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২০-২০২১ সালে গৃহীত উদ্যোগটি কারো জন্যই তেমন কোনো ভালো ফল বয়ে আনেনি। শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কারো জন্যই পরীক্ষাটি ফলপ্রসূ ছিল না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা শেষে আলাদা আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোটাছুটি করতে হয়েছিল। তাদেরকে পূর্বের চেয়ে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়েছিল অনেক বেশি। তারা আগের তুলনায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনও হয়েছিল অনেক বেশি। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছিল গুচ্ছতে অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কারণ, ভর্তির ক্ষেত্রে সমন্বয় না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বারবার বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়েছিল। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে আসন পূর্ণ করতে পঞ্চমবারের মতো মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হয়েছিল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম ধাপে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার পরেও ২৮৬টি আসন খালি ছিল। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়াতে চতুর্থ ধাপে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার পরেও কয়েকটি অনুষদে ২০০ এর অধিক আসন খালি ছিল। আর গুচ্ছের নেতৃত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা ছিল আরো শোচনীয়। তাদের দশম ধাপে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে হয়েছিল। তারপরেও যথাসময়ে ক্লাস শুরু করতে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যর্থ হয়েছিল। একই সময়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি ছিল ২০০টি। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি ছিল ২১২টি। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি ছিল ২০টি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি ছিল ২৬০টি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি ছিল ২০০টি। অর্থাৎ গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় যথাসময়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে যেমন ব্যর্থ হয়েছিল ঠিক একইভাবে তারা একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেও ব্যর্থ হয়েছিল। বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী সংকটে ভুগেছিল এসব বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে গুচ্ছ পদ্ধতির এ কার্যক্রমের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে অনিহা ও বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছিল। অপরপক্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরাও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। শেষমেষ বাধ্য হয়ে আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে হয়েছিল এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে। স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসন খালি রেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক একাডেমিক স্বার্থে ভর্তি কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল। ভর্তি পরীক্ষায় সমন্বয়হীনতা এবং উল্লেখিত জটিলতার কারণে বিরক্তি প্রকাশ করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং গতবছর গুচ্ছের নেতৃত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। ফলে শিক্ষার্থীরা গুচ্ছের পাশাপাশি উক্ত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। পরীক্ষা পদ্ধতির এ দ্বিমুখী ব্যবস্থার কারণে গুচ্ছ পদ্ধতি আশানুরূপ ফলপ্রসূ হয়নি বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। কারণ, একজন শিক্ষার্থীর প্রথম টার্গেট থাকে বুয়েট, ঢাকা অতঃপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ধারাবাহিকভাবে অপেক্ষাকৃত পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ পদ্ধতিতেও অংশগ্রহণ করেছিল। ফলে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের ভোগান্তিতো কমেনি, বরং বেড়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাশ্রয়ের বিপরীতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে গিয়েছিল। কারণ, গুচ্ছ পদ্ধতিতে আবেদনের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে প্রথমত ১২০০ টাকা খরচ করতে হয়েছিল। এরপর আবার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিটে আবেদনের জন্য ব্যয় হয়েছিল ৬৫০ টাকা। একই শিক্ষার্থীকে আবার মৌখিক পরীক্ষা দিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়াতে হয়েছিল। এটা একদিকে শিক্ষার্থীর জন্য যেমন সীমাহীন ভোগান্তির কারণ, অন্যদিকে কয়েকগুণ অর্থ ব্যয়। মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার পর তাকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়েছিল। পরবর্তীতে সে যখন অন্য কোনো পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা অপেক্ষাকৃত পছন্দের সাবজেক্টে চান্স পেয়েছিল তখন নতুন করে আবার ১২ হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে তাকে নতুনভাবে ভর্তি হতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে উক্ত শিক্ষার্থীর প্রথম ভর্তি বাতিল করতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল। সুতরাং দেখা গেল যে, এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীর যাতায়াতের ভোগান্তি, শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক টেনশন এবং আর্থিক ব্যয় কোনোটিই লাঘব হয়নি বরং তাকে দ্বিগুণ কিংবা তিন গুণ ক্ষতি গুণতে হয়েছিল।
২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে এবারও একইভাবে গুচ্ছ পদ্ধতি অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সে অনুযায়ী ভর্র্তি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরুও হয়ে গিয়েছে। এবারের ভর্তি পরীক্ষা তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। প্রথমটি হবে ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে। দ্বিতীয়টি হবে তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে। আর তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে কৃষি ও কৃষি প্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে। গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে থাকা আটটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বের ন্যায় তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতেই ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এবারেও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি প্রত্যাশিতভাবে কমছে না। কারণ, এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় ছোটাছুটি, মানসিক টেনশন, শারীরিক পরিশ্রম এবং আর্থিক ব্যয় কোনোটিই উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে না এবারেও। গুচ্ছ পদ্ধতির আগে সাধারণত একজন শিক্ষার্থী একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো। এ লক্ষ্যে তাকে সারাদেশেই ছোটাছুটি করতে হতো। আর শিক্ষার্থী নারী হলে তার জন্য সমস্যাটা ছিল আরো বেশি প্রকট। গুচ্ছ পদ্ধতি প্রবর্তনের পরেও এ সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। কারণ, এবারেও একজন শিক্ষার্থীকে গুচ্ছের বাইরে থাকা ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটাছুটি করতে হবে। এতে তার অর্থ, সময়, শ্রম-সবটাই ব্যয় হবে। গুচ্ছের বাইরে থাকা উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যদি একটি সমন্বিত পরীক্ষা প্রবর্তন করতো, তাহলে একজন পরীক্ষার্থীর গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় সর্বসাকুল্যে ৩-৪টি পরীক্ষা দিলেই চলতো। এতে একজন শিক্ষর্থীর সর্বদিক থেকেই সাশ্রয় হতো। কিন্তু এসব বিষয় আমলে না নিয়েই কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে। অবশ্য এবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীর জন্য দ্বিতীয়বার পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ বিষয়ের তিন ইউনিটে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৩, ১০ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে মর্মে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা-এ তিনটি অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা উক্ত তারিখসমূহে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক আবেদনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ১৫ এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত। আবেদনকৃতদের মধ্য থেকে যোগ্য তথা বাছাইকৃত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের তারিখ ছিল ২৩ এপ্রিল ২০২২। প্রাথমিক আবেদনে উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীই কেবল গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার জন্য চূড়ান্তভাবে আবেদন করতে পারবে। চূড়ান্ত আবেদনের তারিখ শুরু হয়েছে ২৪ এপ্রিল ২০২২ থেকে। আর শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ মে ২০২২ তারিখ। এ সমস্ত আবেদনকারী তাদের প্রবেশপত্র হাতে পাবেন ১ জুন ২০২২ থেকে ১০ জুন ২০২২ তারিখের মধ্যে।
বাংলাদেশের ১০টি সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিতভাবে গুচ্ছ পদ্ধতির এ ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করবে। ১০টি সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলো, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়। আর ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশে প্রথমবারের মতো গুচ্ছে অংশগ্রহণকারী তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলো, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া গতবারের মতো কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবারো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হলো, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এক্ষেত্রে সচেতন মহলের প্রশ্ন হলো, দেশের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কী কারণে গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নিচ্ছে না? অথচ, এটি দেশের প্রথম ও বড় বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টজনেরা অভিজ্ঞতায় অন্যদের তুলনায় সমৃদ্ধ। তাই গুচ্ছতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দেয়া উচিত ছিল। এছাড়া বড় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এ গুচ্ছতে এগিয়ে আসা দরকার ছিল। তারা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে সমন্বিত পরীক্ষা হলে কাউকে ভোগান্তি পোহাতে হতো না। কিন্তু কোন কারণে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতি মেনে নিতে চাইছে না, তা বোধগম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হচ্ছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তিনি গুচ্ছ পরীক্ষার জন্য বারবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সম্মানিত উপাচার্যদের সাথে তিনি মত বিনিময়ও করেছেন। ওদিকে ২০০৭ সাল থেকে ইউজিসিও গুচ্ছ পদ্ধতির পক্ষে মতামত প্রদান করে আসছে। বর্তমানে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে গেলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব পদ্ধতির পক্ষেই অটল রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের মতে, সেটি একটি ১০০ বছরের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং, তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সামনে অগ্রসর হতে হয়। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষও তাদের নিজস্ব মতামতের কথা উল্লেখ করেছে। তবে পত্রিকান্তরে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি ফরম বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে যুক্ত হলে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে তারা গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসতে চায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বর্ষে ভর্তি ফরম বিক্রি করলে আয় হয় প্রায় ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয় করে প্রায় ২০ কোটি টাকা। উক্ত টাকার শতকরা ৪০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা রাখার বিধান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ বিধান পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে না। নাম মাত্র কিছু টাকা তহবিলে জমা দেয়। বাকি টাকার যথাযথ হিসাব দেয়া হয় না মর্মে উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদেরকে যেহেতু পৃথক আবেদন করতে হয় না। একটা আবেদন ফরম পূরণ করলেই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হয়ে যায়। সুতরাং এ পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় কমে যাবে। এ কম আয় একই গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আবার ভাগ করা হবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাগের অংশ অনেক কমে যাবে। এর ফলে শিক্ষকদের আয় হ্রাস পাবে। শিক্ষকদের এ আয় কমে যাবার ভয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছতে আসছে না মর্মে উক্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। আর বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাই গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে অবস্থান করছে। সূত্রে প্রকাশ, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা থেকে গুচ্ছভুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক আয় করেছিলেন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। অনুষদীয় একজন ডিন আয় করেছিলেন ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। অথচ, গুচ্ছ পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট কমিটির বাইরে অন্য কারো তেমন কোনো দায়িত্ব থাকে না। দায়িত্ব পালন ছাড়াই সম্মানিত অধ্যাপকগণ উক্ত টাকা আয় করেন। আর এ আয় ২০১৯-২০২০ শিক্ষা বর্ষের প্রাপ্ত আয়ের এক তৃতীয়াংশেরও কম। সুতরাং, বুঝাই যাচ্ছে, গুচ্ছে না গেলে পদ ভেদে এক একজন অধ্যাপক উল্লেখিত টাকার তিনগুণ টাকা আয় করতে পারতেন। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধুমাত্র এ একটি কারণেই গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে অবস্থান করছে।

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গুচ্ছতে কেন নেই বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
আরও পড়ুন