পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীসহ সারা দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অকালেই ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। এতে করে নিহতের পাশাপাশি গুরুতর আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতের বেশিরভাগই কিশোর যাদের বয়স ২০ বছরের কম। এছাড়া রাজধানীর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালকের নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অনেকে রাজনৈতিক পরিচয়ে অথবা প্রভাবশালী পরিচয়ে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ান।
জানা গেছে, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মোটরসাইকেল নিবন্ধনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এর বিপরীতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া চালকের সংখ্যা ২৩ লাখ ৫০ হাজার। ১৩ লাখ চালকেরই নেই মোটরসাইকেল চালানোর অনুমোদন। কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে সরকার নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, ফলে দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়ছে। এটা সরকারের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার মোটরসাইকেলের ব্যবসা করতে যেয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার জনসম্পদ নষ্ট হচ্ছে। সরকারের উচিত গণপরিবহন উন্নত, সহজ ও সাশ্রয়ী করে এবং রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণ করে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করা। গণপরিবহনে উৎসাহিতসহ নানা পদক্ষেপের কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ বলছে, গঠনগতভাবে মোটরসাইকেল অপেক্ষাকৃত একটি অনিরাপদ বাহন। এটি সাধারণত যুবক বা উঠতি বয়সীরা বেশি ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা খুব বেশি। সম্প্রতি দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে মোটরসাইকেল ইঞ্জিনের ক্ষমতার (সিসি) বৈধ সীমা বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সিসির সীমা ১৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ করার একটি প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিটিটিসি।
কমিশনের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নন পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের সড়কগুলো এখনও উচ্চ সিসির মোটরসাইকেলের জন্য উপযুক্ত নয়। এমনিতে দুর্ঘটনার শীর্ষে মোটরসাইকেল। চালনায় অদক্ষতা, দ্রুতগতিতে চলাচল, হাইওয়েতে নিয়ন্ত্রণহীন মোটরসাইকেল। এরই মধ্যে মোটরসাইকেলের সিসি বাড়ানো হলে বাড়বে দুর্ঘটনা, মৃত্যুঝুঁকিও বাড়বে।
এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি গত প্রতিবেদনে জানায়, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত ও ১১০ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, নিহতের হার ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং আহত প্রায় ১৩ দশমিক ০৩ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ এপ্রিল-৮ মে দেশে ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৫ দশমিক ২২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্য যানবাহনের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ১৬ দশমিক ১৯, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১ দশমিক ৯৫, অন্য যানবাহন দ্বারা মোটরসাইকেলে ধাক্কা/চাপায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯ দশমিক ০৪ এবং অন্যান্য কারণে ঘটেছে ২ দশমিক ৮। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর। ২০২১ সালের ঈদুল ফিতর উদযাপনকালে ১২১ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৪ জন নিহত হয়েছিল।
সেভ দ্য রোড-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদুল ফিতরের আগে-পরের ১২ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৮১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ২ হাজার ৭৭ জন।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, প্রতিবছর পাঁচ লাখ মোটরসাইকেল বিপণন করে কোম্পানিগুলোর পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় হলেও দুর্ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বেশি সিসির মোটরসাইকেল অনুমোদন দেয়ায় বিআরটিএর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে। উন্নত দেশে মোটরসাইকেল চালানোর সময় বিশেষ পোশাক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেই রীতি নেই। জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা উচিত।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ক্যান্সারের মতো বেড়েছে। ঈদযাত্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল ও ৪০ লাখ ইজিবাইক রাস্তায় নেমেছে। পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ রোগী ভর্তি হলেও ঈদের এইসময়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন প্রতিদিন রোগী ভর্তি হয়েছে। যার ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৫ শতাংশ ইজিবাইক দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছে। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানি বন্ধের পাশাপাশি গণপরিবহনকে বিকশিত করার দাবি জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।