Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গৌরনদীতে যুবদল-ছাত্রদল নেতা কর্মীদের ওপর যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলা এলাকায় সশস্ত্র মোটরসাইকেল মহড়া

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২২, ৭:৫৯ পিএম

বরিশালের গৌরনদীতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সোমবার দিনভর সশস্ত্র মোটর সাইকেল মহড়া দিয়ে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের ৪ নেতাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আহতদের টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় বিএনপির বলছে, দলের নেতা-কর্মীদেরকে স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নিতে কেন্দ্রের নির্দেশনা সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে জানতে পেরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা গৌরনদীতে বিএনপিকে প্রতিহতের লক্ষে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছে। বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের যেখানে পাচ্ছে সেখানেই তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ও পিটিয়ে আহত করছে।
এরই অংশ হিসেবে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্টান্ডে বসে গৌরনদী পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মোঃ জাকির হোসেন শরীফের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা এ সময় তার পকেট থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। আহত জাকির হোসেন শরীফ জানান, তিনি একটি মামলায় হাজিরা দিতে সোমবার ভোর ৬টার দিকে টরকী বন্দরের বাসা থেকে বের হয়ে বরিশাল যাবার জন্য টরকী বাসষ্ট্যান্ড থেকে রওনা হন। গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে পৌছলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাকে বহনকারী মাহিন্দ্রাটিকে বেড়িকেড দিয়ে মাহিন্দ্রা থেকে টেনে হিচরে নামিয়ে লোহার রড ও লাঠিশোটা দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি পেটায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে বরিশাল সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
একই দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্টান্ডে বসে সাবেক ছাত্রদল নেতা প্রভাষক আলী হোসেন শরীফ এর ওপর হামলা চালানো হয়। আহত আলী হোসেন শরীফ জানান, কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ওই সময় তিনি বাসার সামনে থেকে রিকসা নিয়ে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে আসেন। বাসে ওঠার জন্য রিকসা থেকে নামার সাথে সাথেই যুবলীগ-ছাত্রলীগের ২০-২৫জন সন্ত্রাসী তার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়।
অপর দিকে সোমবার সকাল ৮টার দিকে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে বসে সরিকল ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোঃ জসিম উদ্দিন এর উপর হামলা চালানো হয়। বাটাজোর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে ১৪/১৫জন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা এ সময় তার পকেট থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
একইদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ৫০/৬০টি মোটরসাইকেলযোগে মহড়া দিয়ে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মোঃ মনির হোসেন আকন (মনির মাষ্টার) এর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বেজহার গ্রামের বাড়িতে ঢুকে অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় আতœরক্ষায় সে বাড়ির পার্শ্ববর্তি ধানের ক্ষেতে আশ্রয় নেয়। সেখানেও হামলাকারীরা তাকে পেটানো শুরু করলে পার্শ্ববর্তি একটি ডোবার পানিতে ঝাপ দেয়। হামলাকারীরা তাকে ওই ডোবা থেকে তুলে পেটাতে থাকে। জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হামলাকারীরা তাকে ফেলে রেখে চলে যায়।
বরিশাল (উত্তর) জেলা যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক মোঃ বদিউজ্জামান মিন্টু জানান, সকাল ৯টার দিকে ৫০/৬০টি মোটরসাইকেলের মহড়া নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামে তার বসত বাড়িতে চড়াও হয়। হামলাকারীরা তার পাঁকা বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চলে যায়।
যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম কাজল জানান, মোটর সাইকেলের মহড়া নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ধানডোবা গ্রামের মসজিদের সামনে গিয়ে তাকে ও তার ছোটভাই যুবদল নেতা তরিকুল ইসলাম কাফিকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে ও এলাকা ছাড়তে হুমকি দিয়ে ফিরে যায়।
সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৫০/৬০টি মোটরসাইকেল যোগে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয়া শুরু করে। ওইদিন দিনভর তারা পুরো উপজেলা এলাকা জুড়ে ওই সশস্ত্র মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে স্থানীয় যুবদল ছাত্রদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
রোববার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার বার্থী তাঁরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে মোটর সাইকেল বেড়িকেট দিয়ে উপজেলা স্বেচ্ছা সেবক দলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক সফিকুল ইসলাম রোকন ও শনিবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার টরকী বন্দরে বসে গৌরনদী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক আবুল হোসেন সরদার এর ওপর হামলা চালায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী।
এ ব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মাহাবুব আলম সাংবাদিকদের বলেন, হামলার সাথে গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের কোন নেতা-কর্মী জড়িত নয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রলীগ কারো ওপর হামলা করেনি। স্থানীয় কোন্দলের জের ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা পাল্টা হামলার শিকার হয়ে ছাত্রলীগ যুবলীগের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ