Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বন্যার পদধ্বনি সিলেটে

প্লাবিত হচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল : বিপৎসীমার উপরে সুরমার পানি : পাহাড় ধসে ১ জনের মৃত্যু আহত ৫ : বোরো ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিরামহীন বৃষ্টি অপরদিকে উজানে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল- এ দুইয়ে মিলে বন্যার পদধ্বনি এখন সিলেটে! আপাতত সিলেটে বৃষ্টি থামার কোনো পূর্বাভাস নেই। ফলে বন্যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে ১৮ মে অবধি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে বৃষ্টি বেশি হবে রাতের বেলা। ইতিমধ্যেই সিলেটে ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলগু তলিয়ে গেছে পানির নিচে। এতে লোকালয়সহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এদিকে, অব্যাহত টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে ঘটনা ঘটেছে সিলেটে। এরমধ্যে গোলাগঞ্জের লক্ষণাবন্দে এক জনের মৃত্যুসহ অনন্ত আহত হয়েছেন ৫ জন।
সুরমা ও কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ার কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কোনো কোনো পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

অপরদিকে সিলেট জেলা সদরের সাথে গোয়াইনঘাট সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের সাথে প্রত্যন্ত এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় পানিবন্দী লোকজন পড়েছেন বিপাকে। সেই সাথে ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে। এদিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে নিম্নাঞ্চল ও লোকালয়সহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন মাঠে পড়ে থাকা অবশিষ্ট পাকা বোরো ধান। একদিকে, শ্রমিক সংকট, অপরদিকে, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে শঙ্কা কাটছেনা বিপাকে পড়া হাওরপাড়ের ভুক্তভোগী কৃষকদের। সুরমা, চেলা, মরা চেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, ধূমখালি ও ছাগলচোরাসহ বিভিন্ন হাওর, খাল-বিলের পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা করছেন উপজেলাবাসী। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ ইনকিলাবকে বলেন, পানি বাড়লেও কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় অশনীর প্রভাব আর পশ্চিম লঘুচাপের সঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয়বাষ্পের সংমিশ্রণে বাংলাদেশ অঞ্চলে গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালার কারণে গেল কয়েকদিন ধরে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝারি, ভারী, আবার কখনো অতিভারী বৃষ্টি ঝরছে। লাগাতর এমন বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এরইমধ্যে সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট স্টেশনে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে বন্যার শঙ্কা। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানান।

সলেট পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। এটাই মূল প্রভাবক। এর সাথে সিলেটে বৃষ্টিও যোগ হয়েছে। নদীর পানি বাড়ার কারণে প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল। অপরদিকে, অব্যাহত টানা বর্ষণে সিলেটে পাহাড় ধসে ঘটনা ঘটেছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নের চক্রবর্তী পাড়ায় পাহাড় ধসে আপু রুদ্র পাল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার ভাই পাপ্পু পাল গুরুতর আহত হয়েছেন । গত শুক্রবার রাত ৩ টারদিকে পাহাড় ধসে ঘরের উপরে পড়লে ঘুমন্ত অবস্থায় মাটি চাপায় আপু রুদ্র পাল নিহত হন।

পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ঘর বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। বাসিন্দারা কেউ ঘর ভাড়া নিয়েছে, আবার কেউ নামমাত্র টাকা দিয়ে দখলদারদের কাছ থেকে জায়গা কিনেছে। বসবাসকারীদের মধ্যে নিম্নআয়ের লোকজনই বেশি। প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস বিভিন্ন টিলার পাদদেশে। সিলেটে চলমান বৃষ্টি হচ্ছে। এতে টিলা ধসের ঝুঁকি বেড়েছে। যদিও সিলেটের সিলেটের জেলা প্রশাসক মো মজিবর রহমান ইনকিলাবকে জানান, টিলার নিচে বসবাসকারীদের সতর্ক করতে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এদিকে, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল। গতকাল শনিবার ভোরে পাহাড় থেকে আসা ঢলে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার কয়েকটি এলাকা।
এছাড়াও নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। একটানা ৪ দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান। উপজেলার নদী প্রবল এলাকার নিম্নাঞ্চল গুলো সকাল থেকেই প্লাবিত হতে থাকে। আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে কৃষকদের স্বপ্নের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা ভর করেছে তাদের মাথায়। উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতো না হওয়ায় অনেকেই ধারদেনা করে রোপণ করে বোরো ধানের বীজ।
এ সময় ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে কৃষকদের আশঙ্কা।

উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ও হাওয়ার খাশিয়ামারা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের কৃষিক্ষেত। এদিকে বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে চলাচল করতে পারছেনা কোন ধরনের যানবাহনসহ পথচারীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ