Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫ জেলায় আগাম বন্যার শঙ্কা

আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা-সারিগোয়াইনের পানি বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি


দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলগুলোয় ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাঁচ জেলায় আগাম বন্যা হতে পারে। জেলাগুলো হলো- সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস প্রতিবেদনে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মধ্যে এবং উজানে ভারতীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টির কারণে সিলেট ও নেত্রকোণা অঞ্চলে প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রæত বাড়তে পারে। এমনকি আগামী ২৪ ঘন্টর মধ্যে সিলেট অঞ্চলের সুরমা ও সারিগোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম (বরাক অববাহিকা), মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশের কিছু এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। প্রধান নদীগুলোর মধ্যে সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই-কংস, ধনু-বাউলাই, মনু, খোয়াই এসব নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে সময় বিশেষে দ্রæত বাড়তে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অশনির প্রভাবে আগামী ২৪ ঘন্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ঘ‚র্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোরো ফসলসহ বিভিন্ন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিস্তÍা পাড়ের জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, গাইবান্দায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিস্তার চরে আবাদ করা পিঁয়াজ এবং বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেক নি:স্ব হয়ে পড়ছে। অশনির প্রভাবে সিরাজগঞ্জে কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত এই বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরবঙ্গের শস্যভাÐার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ফসলি মাঠগুলো পানিতে ডুবে গেছে। জমে থাকা পানির কারণে ডুবে গেছে পাকা ও আধাপাকা ধান। অনেক জমিতে ডুবে যাওয়া ধান থেকে চারা বের হচ্ছে। এ সময়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফলে মাঠে পচতে থাকা ধান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

তাড়াশের তালম ইউনিয়নের চৌড়া, গুল্টা, দেশীগ্রাম ইউনিয়নের আড়ংগাইল, মাধাইনগর ইউনিয়নের ভাদাস, তাড়াশ পৌর এলাকার কোহিত, আসানবাড়ি, বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া, মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমিতে বৃষ্টির পানি জমে ধান ডুবে গেছে। গুল্টা গ্রামের কৃষক মো: রহিম বলেন, জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে কিন্তু শ্রমিক নেই। দু-একজন যা পাওয়া যায় তারাও বেশি মজুরি চায়। প্রতিবছর পাবনা থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা আমাদের এখানে আসে। কিন্তু এবছর এখনো অধিকাংশ গৃহস্থের বাড়িতে কোনো শ্রমিক আসেনি। তাই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

ঘ‚র্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বরিশাল বিভাগের প্রায় সব জায়গায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এ বিভাগে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের কারণে বোরো ধান, তরমুজের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘ‚র্ণিঝড় অশনি শক্তি হারাচ্ছে। এটি সাধারণ ঘ‚র্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপক‚লে অতিক্রম করছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও দুই দিন বৃষ্টি হতে পারে।

ঘ‚র্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে বরগুনার বিভিন্ন উপজেলায় চাষ করা তরমুজক্ষেত ডুবে গেছে। ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তরমুজচাষি ও ব্যবসায়ীরা। বরগুনা সদরের তরমুজ ব্যবসায়ী আমির আলী বলেন, আমরা তিনজন মিলে এ বছর ৩০টি তরমুজক্ষেত কিনেছিলাম। সব ক্ষেতেই ভালো ফলন হয়েছিল। ভালো লাভের আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে সব তছনছ হয়ে গেছে। মৌসুমের শেষ সময়ে যখন বাজারে ভালো দাম, তখনই ঘ‚র্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিতে আমাদের সাতটি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ক্ষেতে হাঁটুপানি থাকায় আমরা তরমুজ তুলতেও পারছি না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ