পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যত দিন যাচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যয় বেড়েই চলেছে। পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে শহরের তথাকথিত নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চ গ্রেড প্রাপ্তির প্রতিযোগিতা আমাদের শিক্ষাকে সার্টিফিকেট সর্বস্ব এবং টিউশন নির্ভর করে তুলেছে। এই সুযোগে রাজধানী থেকে সারাদেশে গড়ে উঠেছে নামি-দামি চেইন কোচিং সেন্টার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত অসংখ্য কোচিং সেন্টার। এভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও কোচিং সেন্টারগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যিক বিষয়ে পরিনত করেছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের ১০৯টি কোচিং সেন্টার বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে ৩২শ’কোটি টাকা। এর বাইরেও অসংখ্য ছোট বড় কোচিং সেন্টার ও ব্যক্তিগত টিউটর কোচিং বাণিজ্যে সক্রিয় রয়েছে। তিন দশক আগেও দেশে কোচিং সেন্টারের এমন রমরমা বাণিজ্য ছিলনা। নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জিপিএ নির্ভর সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষার প্রতিযোগিতার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোচিং সেন্টার ও শিক্ষাবাণিজ্য। পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-ফাইভ ও উচ্চ গ্রেডের প্রতিযোগিতা ও হারবৃদ্ধির বিপরীতে ক্রমান্বয়ে নেমে গেছে শিক্ষার মান। দেশের রফতানিমুখী গার্মেন্ট শিল্প থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সেক্টরগুলোতে বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান ক্রমশ বেড়ে চললেও দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী চাকরি পাচ্ছেনা। এ থেকেই দেশের সাধারণ ও বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মানহীনতা ও ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছে। সর্বসাম্প্রতিক শিক্ষানীতি অনুসারে আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। এর মানে হচ্ছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষা বাণিজ্যের কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিশুদের উপর অহেতুক দুইটি পাবলিক পরীক্ষা চাপিয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষাকে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার মানহীনতা ও অস্বাভাবিক-অনৈতিক প্রতিযোগিতা, ভর্তিবাণিজ্য, ডোনেশন, কোচিংবাণিজ্য সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এসব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন শিক্ষানীতির আওতায় ভর্তিবাণিজ্য ও কোচিংবাণিজ্য বন্ধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কোচিং সেন্টার ও নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর রমরমা ভর্তি বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানাবিধ যোগসাজশে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক স্তরের পিএসসি, ইবতেদায়ি, জেএসসি ও জেএসডি পরীক্ষা বন্ধের সুপারিশ ও দাবির আলোকে সরকার এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও কার্যত এসব পরীক্ষা এখনো বন্ধ হয়নি। পাবলিক পরীক্ষাকে ঘিরে অনৈতিক টিউশন ফি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার বিকল্প পন্থা থাকলে হয়তো এসব পরীক্ষা বন্ধের প্রশ্নও উঠত না।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পেছনে সরকার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও আন্তর্জাতিক বা এশীয় অঞ্চলের র্যাংকিংয়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয় শতশত নামের তালিকায় স্থান পাচ্ছে না। একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন দেশের কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও নিচে নেমে গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা যেমন আগামীদিনের নাগরিকের মননশীলতা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী প্রতিভা ও নৈতিক অবস্থানের ভিত্তি গড়ে তোলে, এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে কোনো জাতির জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার মাধ্যমে সমকালীন প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভ’মিকা পালন করে থাকে। অর্থনীতি ও উৎপাদনশীলতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দক্ষ জনবল সৃষ্টির ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মূল ভ’মিকা রাখে। এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে জনগণের রাজস্ব থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তা কতটা সুফল দিচ্ছে তা নিয়ে সংশয় ও বিতর্ক রয়েছে। দেশের আমলাতন্ত্র ও শিক্ষিত শ্রেণীর অনৈতিক কর্মতৎপরতা, কলমের খোঁচায় হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি-লুটপাটের সুতিকাগার বা শুরুটা হয়েছে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ থেকে। দেশে সর্বব্যাপী দুর্নীতি, অবক্ষয়-লুটপাট, ঘুষবাণিজ্য ও অস্বচ্ছতা বন্ধ করতে হলে প্রথমেই শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি স্বচ্ছ ও নৈতিক মানদন্ডে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। দেশে শিক্ষা নিয়ে অনৈতিক-প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য বন্ধ হলে অন্য সব সেক্টরের দুর্নীতি বন্ধ হতে পারে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীভুক্ত। শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, বাণিজ্যমুক্ত ও নৈতিক মানদন্ডে উন্নীত করে শিক্ষায় সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন, মানসম্মত, উৎপাদনশীল শিক্ষা ও জনবল সৃষ্টি করা সম্ভব। প্রাক-প্রাথমিক থেকে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস পর্যন্ত শিক্ষায় সব ধরণের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, অনৈতিক বাণিজ্য ও প্রতিবন্ধকতাসমুহ দূর করার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।