Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনার উপকূলীয় জনপদে ‘অশনি’ আতংক, যত দুশ্চিন্তা দূর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২২, ৪:৪১ পিএম

সিডর, আইলা, ফনী, বুলবুল, আম্পান, ইয়াস এর মত একের পর এক সাইক্লোনে সৃষ্ট প্রকল জলোচ্ছাসের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর বাঁধ মেরামতের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে যায়, কাজের কাজ কিছুই হয় না। অভিযোগ রয়েছে, যা বরাদ্দ দেয়া হয়, তার সিংহভাগ চলে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের পকেটে। ফলে বছরের পর বছর দূর্যোগ ঝুঁকি নিয়ে ঝঞ্জার সাথে লড়াই করে চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় বাঁধ ভাঙ্গা মানুষের।
এবারও উপকূল জুড়ে অশনি আতংক বিরাজ করছে। উপকূলের প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ বাঁধ ভাঙ্গার আতংকে রয়েছেন।কপোতাক্ষ, শাকবেড়িয়া ও কয়রা নদী ঘিরে আছে উপকূলীয় খুলনার কয়রা উপজেলা। আর এখানকার মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড় আইলা, ফণী, বুলবুল এবং সর্বশেষ গেল বছর একই সময়ে সুপার সাইক্লোন আম্পান ও ইয়াস তছনছ করে দিয়ে যায় উপকূলীয় জনপদ। উপকূলীয় এই উপজেলাটির চারটি ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের চৌদ্দটি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গোটা এলাকা লবন পানিতে নিমজ্জিত হয়। বিধ্বস্ত হয় হাজার হাজার ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট গাছপালা গবাদি পশু মৎস্য ঘের জমির ফসল। সর্বশান্ত হয় জনপদের মানুষ। আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ গুলোর সংস্কার কাজ এখনো চলমান রয়েছে। উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ গুলোর মধ্যে সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে হতে হামকুড়ার গোড়া। মহারাজপুর ইউনিয়নের সুতির অফিস ও দশালিয়া। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদা বাঁধ গাববুনিয়া, মাটিয়াভাঙ্গা (কোবাদক ফরেষ্ট অফিস থেকে ঘড়িলাল বাজার) আংটিহারা ( স্লুইচ গেট থেকে পুলিশ ফাঁড়ি), পাতাখালি (খাশিটানা বাঁধ থেকে জোড়শিং বাজার) উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী-তীরবর্তী যেসব এলাকায় এখনও টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি, সেসব গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মাঝে ‘অশনি’ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
তাদের অধিকাংশেরই নেই দুর্যোগ সহনীয় বাড়িঘর। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২০ হাজার পরিবারের অনেকেই এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। এর মধ্যে আরেকটি দুর্যোগের সতর্ক সংকেত তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে ঘূর্ণিঝড় আশনি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী জানায়, সাইক্লোন আইলায় তার ঘর ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে যায়, এর পর নতুন করে আবার একটা ঘর বাধেঁন। তবে সেটিও নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায়। পরে তিনি চলে যান রাঙামাটি। ৫ বছর পর ফিরে এসে আবারও মাথা গোজার ঠাই তৈরি করা শুরু করেছেন। কিন্তু তার বাড়ির সামনে দিয়ে আবারও ভাঙ্গন লেগেছে। যেকোন সময় জলোচ্ছ্বাসে তা ভেঙে যেতে পারে। তাই অশনির আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিনি। এবার ভাঙ্গলে আবারও ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে। একই গ্রামের বাসিন্দা মিলন হোসেন বলেন, নদীতে একটু জোয়ার বেশি হলে রাস্তা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। জোড়শিং ট্যাকের মাথা এই পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ না করলে অশনির আঘাত হানলে এখান থেকে ভেঙে হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হবে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবী টেকসই বেড়িবাঁধ। তবে আম্পান ও ইয়াসে ষাট দশকের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে ঐসব এলাকার মানুষের। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা। কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট ও মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সমনে হতে হামকুড়ার গড়া। মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও সুতির কোণা।
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় অশানি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১১৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কাজ করবে সরকারি কর্মকর্তা, সিপিপি, বেসরকারি এনজিও’র স্বেচ্ছাসেবকরা।
কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। সংশ্লিস্ট নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহামুদ বলেন, আম্পান ও ইয়াসের পর থেকে কয়রা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে কাজ চলছে। তবে ঘুর্ণিঝড় অশনিতে কয়রা উপজেলার দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের কর্মীরা সে সব এলাকায় কাজ করছে।
এদিকে, খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ বেড়িবাঁধ নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন।সুন্দরবন সংলগ্ন এই উপজেলাগুলোর কমবেশি আশি কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে আট কিলোমিটার বাঁধ মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানান, বিভিন্ন স্থানে দূর্বল বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। অল্প কয়েকটি স্থান ছাড়া খুলনাঞ্চলের বাঁধ এখন আর ঝুঁকিপূর্ণ নেই। কোথাও বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তা দ্রুত সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অশনি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ