আওয়ামী লীগের নেতারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু কাজ করে ভিন্ন। তাদের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য দলটিকে মুনাফেক দল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটা মুনাফেক দল। কোনো দিনই কখনোও যে কথা তারা বলে তা তারা রাখে না। এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারা জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলে দেখলে মনে হয় যে, এদের মতো ভালো মানুষ আর নেই। আর ভেতরে ভেতরে যা করার তা করে যাবে।
গত শনিবার দলের সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেয়া হবে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটা মিলাদ করতে দেয় না, ঈদ পূর্ণ মিলনীতে আক্রমণ করে, দোয়া মাহফিলের মধ্যে আক্রমণ করে। এদের কাছ থেকে কী আশা করতে পারেন। সব তো মোনাফেকী।
গতকাল রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই অনির্বাচিত সরকার তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করবার জন্যে আবার এখন থেকেই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। শনিবার ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদ পরবর্তি শুভেচ্ছা বিনিময় করতে তার বাড়ি দাউকান্দিতে তার বাসভবনে গিয়েছিলেন এবং সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। ওইখানে তিনি বের হয়ে তিতাসে তার একটি নিমন্ত্রণ ছিলো সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য যখন তিনি বের হয়েছিলেন তখন অতর্কিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠি-সোঠা, ইট-পাটকেল ছুড়ে তার ওপরে এবং যারা তার সঙ্গে ছিলেন তাদের ওপর আক্রমণ করে। ড. মোশাররফের উপরে ফিজিক্যালী আক্রমণ বলে আমরা এটাকে মনে করি। আক্রমণটা এতো তীব্র ছিলো যে, কর্মীরা ড. মোশাররফ হোসেনকে তাকে বাসায় তুলে দেন এবং গেট বন্ধ করে দেন। তারপরে বৃষ্টির মতো আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ইট মারতে থাকে, পাথর মারতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণ করে এবং খন্দকার মোশাররফ হোসেন সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, যেহেতু তিনি আমাদের স্থায়িী কমিটির সিনিয়র লিডার, তার ওপরে হামলাকে আমরা মনে করি স্থায়ী কমিটির ওপর হামলা, আমাদের দলের ওপর হামলা। আমরা এটাকে ছোট করে দেখতে পারি না। আওয়ামী লীগের এই হামলায় প্রমাণ হয়েছে যে, তাদের চরিত্রের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। বরং তারা নতুন উদ্যোমে বিএনপি তথা ভিন্নমতকে বিরোধী দলকে নির্মূল করবার, দমন করবার জন্য তারা চরম সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। গণমাধ্যমকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। সংবাদ মাধ্যমের যে সূচক করা হয় আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রিডম অব প্রেস কতটুকু আছে সেখানে বাংলাদেশ ১০ ধাপ নেমে গেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে একটা স্বৈরাচারি দেশে পরিণত হয়ে গেছে। ড খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ওপরে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
রমজানের সময়ে নরসিংদীর পলাশে ইফতার মাহফিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এবং বরিশালের গৌরনদীতে সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় ইফতার মাহফিলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা এবং নারায়নগঞ্জ জেলার আহবায়ক অধ্যাপক মামুন আহমেদকে চুরিকাঘাত করার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্র এতটুকু বদলায়নি। বরং তারা ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে তাদের যে লক্ষ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তারা সন্ত্রাস, ভয়ভীতি দেখিয়ে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।
সয়াবিনের মূল্য বৃদ্ধি সিন্ডিকেটের স্বার্থেই করা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা সিন্ডিকেট নিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে। এই কারণে এভাবে জনগনের ওপর ভয়াবহ একটা অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করেছে। এক লাফে যদি সরকারি ভাবে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। বাজারে তো আপনি ২২০ টাকায় তেল পাচ্ছেন না। তেল নেই, উধাও হয়ে গেছে।
সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি দল থেকে দেয়া হবে কিনা জানতে চাই বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুভমেন্ট দেখেছেন এর আগে আমরা প্রায় এক মাস যাবত দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছি। অবশ্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে করণীয় আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি করবো।#